প্রথম অধ্যায়: জীবন পাঠ
আজকের আলোচনা: জীববিজ্ঞানের ধারণা ও জীববিজ্ঞানের শাখাসমূহ
জীববিজ্ঞানের ধারণা: জীববিজ্ঞান , বিজ্ঞানের একটি মৌলিক শাখা। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্ট্টলকে (খৃষ্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২) জীববিজ্ঞানের জনক বলা হয়। বিজ্ঞানের যে শাখায় জীবের গঠন, জৈবনিক ক্রিয়া এবং জীবনধারণ সর্ম্পকে সম্যক জ্ঞান পাওয়া যায় তাকেই জীববিজ্ঞান বলা হয়। জীববিজ্ঞানের ইংরেজি পরিভাষা Biology| Biology শব্দটি দুটি ল্যাটিন শব্দ (bios + logos) নিয়ে গঠিত। bios অর্থ জীবন এবং logos জ্ঞান।
জীববিজ্ঞানের শাখাসমূহ: দুটি শাখায় ভাগ করা যায়:
১) জীবের ধরন অনুসারে জীববিজ্ঞানকে দুটি শাখায় ভাগ করা হয়:
ক) উদ্ভিদবিজ্ঞান (Botany) : গ্রীক শব্দ Botan থেকে উৎপত্তি যার অর্থ উদ্ভিদ। জীববিজ্ঞানের যে শাখায় উদ্ভিদের গঠন, উদ্ভিদের জৈবনিক ক্রিয়া এবং উদ্ভিদের জীবনধারণ সর্ম্পকে সম্যক জ্ঞান পাওয়া যায় তাকেই উদ্ভিদবিজ্ঞান (Botany) বলা হয়।
খ) প্রাণিবিজ্ঞান (Zoology) : Zoologyy শব্দটি দুটি গ্রীক শব্দ (Zoon=প্রাণি ও logos= জ্ঞান ) সমন্বয়ে গঠিত।
জীববিজ্ঞানের যে শাখায় প্রাণির গঠন, প্রাণির জৈবনিক ক্রিয়া এবং প্রাণির জীবনধারণ সর্ম্পকে সম্যক জ্ঞান পাওয়া যায় তাকেই প্রাণিবিজ্ঞান (Zoology) বলা হয়।
২) জীবের কোন দিক নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে জীববিজ্ঞানকে দুটি শাখায় ভাগ করা হয়েছে:
অ) ভৌত জীববিজ্ঞান (Physical Biology): এ শাখায় জীববিজ্ঞানের তত্ত্বীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আ) ফলিত জীববিজ্ঞান (Applied Biology): জীবন-সংশ্লিষ্ট প্রায়োগিক বিষয়সমূহ এ শাখার অর্ন্তভুক্ত।
এই শাখাদুটি আবার কতকগুলো শাখা নিয়ে গঠিত। নিচে এদের বর্ণনা করা হলো:
অ) ভৌত জীববিজ্ঞান (Physical Biology): এতে সাধারণত নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়:
১. অঙ্গসংস্থান (Morphology): জীবের সার্বিক অঙ্গসংস্থানিক বা দৈহিক গঠন বর্ণনা এ শাখার আলোচ্য বিষয়। এর দুটি ভাগ হচ্ছে ক) বহিঃঅঙ্গসংস্থান (External Morphology): দেহের বাহ্যিক বর্ণনার বিষয় খ) অন্তঃঅঙ্গসংস্থান ((Internal Morphology): দেহের অভ্যন্তরীণ বর্ণনার বিষয়।
২. শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা(Taxonomy): জীবের শ্রেণিবিন্যাস ও রীতিনীতিসমূহ এ শাখার আলোচ্য বিষয়।
৩. শারীরবিদ্যা (Physiology): জীবের যাবতীয় শারীরবৃত্তিয় কাজের বিবরণ এবং জীবদেহের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জৈবরাসায়নিক কার্যাদি, যেমন: শ্বসন, রেচন, সালোকসংশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়সমূহ এ শাখার আলোচনার বিষয়।
৪. হিস্টোলজি (Histology): জীবদেহের টিস্যুসমূহের গঠন, বিন্যাস ও কার্যাবলি এ শাখার আলোচনার বিষয়।
৫. ভ্রুণবিদ্যা (Embryology): জনন কোষের উৎপত্তি, নিষিক্ত জাইগোট থেকে ভ্রূণের সৃষ্টি, গঠন, পরিস্ফুটন,বিকাশ প্রভৃতি এ শাখার আলোচনার বিষয়।
৬. কোষবিদ্যা (Cytology): জীবদেহের কোষের গঠন, কার্যাবলি ও বিভাজন সর্ম্পকে যাবতীয় আলোচনা এ শাখার বিষয়।
৭. বংশগতিবিদ্যা (Evolution): জিন ও জীবের বংশগতিধারা সর্ম্পকে এ শাখার আলোচনার বিষয়।
৮. বিবর্তনবিদ্যা (Genetics): পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ, জীবের বিবর্তন এবং ক্রমবিকাশের তথ্যসমূহের আলোচনা এ শাখার বিষয়।
৯. বাস্তুবিদ্যা (Ecology): প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে জীবের আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে আলোচনা এ শাখার বিষয়।
১০. এন্ডোক্রাইনোলজি (Endocrinology): জীবদেহে হরমোন এর কার্যকারিতা বিষয়ক আলোচনা এ শাখার বিষয়।
১১. জীবভূগোল (Biogeography): এ শাখায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগোলিক সীমারেখায় জীবের বিস্তৃতি ও অভিযোজন, জীবের ভৌগোলিক বিস্তারের সাথে ভূমন্ডলের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কিত বিদ্যা আলোচনা করা হয়।
আ) ফলিত জীববিজ্ঞান (Applied Biology): জীবন-সংশ্লিষ্ট প্রায়োগিক বিষয়সমূহ।
এতে সাধারণত নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়। পরবর্তীতে এদের বর্ণনা করা হলো:
১. প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা ((Paleontology): প্রাগৈতিহাসিক জীবের বিবরণ এবং জীবাশ্ম সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
২. জীবপরিসংখ্যানবিদ্যা (Biostatistics): জীবপরিসংখ্যান বিষয়ক বিজ্ঞান।
৩. পরজীবীবিদ্যা (Parasitology) : পরজীবিতা, পরজীবী জীবের জীবনপ্রণালি এবং রোগ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
৪. মৎস্যবিজ্ঞান (Fisheries): মাছ, মাছ উৎপাদন, মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
৫. কীটতত্ত্ব (Entomology): কীটপতঙ্গের জীবন, উপকারিতা, অপকারিতা, ক্ষয়ক্ষতি, দমন ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
৬. অণুজীববিজ্ঞান (Microbiology): ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, আণুবীক্ষণিক ছত্রাক এবং অন্যান্য অণুজীব সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
৭. কৃষিবিজ্ঞান (Agriculture) : কৃষিবিষয়ক বিজ্ঞান।
৮. চিকিৎসাবিজ্ঞান (Medical Science): মানবদেহ, রোগ, চিকিৎসা ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
৯. জিনপ্রযুক্তি (Genetic Engineering): জিনপ্রযুক্তি ও এর ব্যবহার সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
১০. প্রাণরসায়ন (Biochemistry): জীবের প্রাণরাসায়নিক কার্যপ্রণালি, রোগ ইত্যাদি স¤পর্কিত বিজ্ঞান।
১১. পরিবেশবিজ্ঞান (Environmental Science): পরিবেশ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
১২. সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান (Oceanography): সামুদ্রিক জীব সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
১৩. বনবিজ্ঞান (Forestry): বন, বন সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
১৪. জীবপ্রযুক্তি (Biotechnology): মানব ও পরিবেশের কল্যাণে জীব ব্যবহারের প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
১৫. ফার্মেসি (Pharmacy): ওষুধশিল্প ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিজ্ঞান।
১৬. বন্যপ্রাণিবিদ্যা (Wildlife): বন্যপ্রাণী বিষয়ক বিজ্ঞান।
১৭. বায়োইন্ফরমেটিকস্ (Bioinformatics): কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর জীববিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য, যেমন: ক্যান্সার, এইডস ইত্যাদি বিশ্লেষণ বিষয়ক বিজ্ঞান।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: