ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন

প্রকাশিত: ১২:১২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আধুনিক ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মালয়েশিয়ার অবস্থান নজর কাড়া। প্রধানমন্ত্রী ও দেশনায়ক মাহতি মাহমুদের চিন্তা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের অবিস্মরণীয় যোগসাজশে পিছিয়ে পড়া এই রাষ্ট্রটি নতুন সময়ের দিকনির্দেশনায় যে বিশ্বমানের সম্প্রসারিত বলয়ে নিজেদের সম্পৃক্ত করে সেটাও সে দেশের ইতিহাসে এক বর্ণাঢ্য অভিযোজন। অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে পাশাপাশি সহাবস্থানের আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থায়ও আসে যুগান্তকারী সংযোজন। উন্নত দেশের আদলে অবকাঠামো নির্মাণ হওয়া দেশটি তথ্যপ্রযুক্তিতেও একেবারে বিশ্ব সভায় স্থান করে নেয়। প্রকৃতির অবারিত সৌন্দর্যের ওপর কোন ধরনের আঘাত কিংবা আক্রমণ ছাড়াই আধুনিক নগর সভ্যতার গোড়া পত্তন সেও এক বিস্ময়কর কর্মদ্যোতনা। শিক্ষা কার্যক্রমে সংযোজিত হয়েছে আধুনিক সব বিশ্ব উপকরণ। মালয় বিশ্ববিদ্যালয় সে মাত্রারই একটি উচ্চ শিক্ষার পাদপীঠ যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে উন্নত বিশ্বকে অগ্রগামী হিসেবে নির্ধারকের ভূমিকায় আনা হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি তৈরি হয়েছে সব ধরনের সফল সংযোজনে পাঠক্রমেরও এক আধুনিক উপস্থাপন। ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই, বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হলেও বিশ্ব সভায় এর অন্তর্ভুক্তিতে আরও অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। ’৮০-এর দশক থেকেই মাহতি মাহমুদ মালয়েশিয়ার আধুনিক স্থপতির ভূমিকায় নিজের অবস্থান জানান দিলে সারাদেশে যে উন্নয়নের স্রোত বহমান হতে থাকে তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা ব্যবস্থায়ও আসে নতুন সময়ের বিশ্বমানের কার্যক্রম। আর মালয়েশিয়ার প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব মালয়া দেশ-বিদেশের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ছাড়াও আনুষঙ্গিক অনেক শর্ত পূরণে সফলকাম হলে এশিয়ার মধ্যে এর স্থান হয় নজরকাড়া। আর বিশ্বমানের ব্যাংকিংয়েও এর অবস্থান দৃঢ় করলে বর্তমানে তা অনেকটা কমেও আসে। তার পরেও বিশ্বমানের এই ক্যাম্পাস সার্বজনীন আবেদনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সব ধরনের আকাক্সক্ষায় নির্দিষ্ট গন্তব্যেও পৌঁছে দেয়। এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী কুয়ালালামপুরের সমৃদ্ধ আঙ্গিনায় এই নজরকাড়া সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের নান্দনিক বলয়। সুউচ্চ, অভিজাত ইমারতের পাশাপাশি আধুনিক সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা তার সঙ্গে সবুজ নৈসর্গিক সমারোহের নয়নাভিরাম দৃশ্য। সত্যিই বিমুগ্ধ হওয়ার মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো পরিবেশ। এমন বিশ্বমানের বিদ্যাপীঠটি শান্ত, স্নিগ্ধ এবং কলহমুক্ত। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও কম নয়। মালয়দের শিক্ষার হারের অধোগতি বর্তমানে তা অনেকটা পূর্ণ হয়েছে। দেশের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্রটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অধীন। শুধু তাই নয় এই ক্যাম্পাসেই একটি বিশাল আঙিনা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা অনুষদ। এ ছাড়া আছে বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায়িক বিষয়, আইনী কার্যক্রমের জন্য আলাদা বিভাগ প্রয়োজনে অনুষদও। এর চেয়েও বিস্ময় প্রকৌশল অনুষদও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করে। যা এখনও আমাদের দেশে সেভাবে দৃশ্যমান নয়। আসলে এই উন্মুক্ত ও আধুনিক ক্যাম্পাসটি তৈরি হয়েছে সারা বিশ্বের উন্নত ব্যবস্থাপনা, পাঠদান বিষয়ক নতুন সময়ের আধুনিক মানসম্মত যাবতীয় কার্যক্রমে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের সম্মিলিত কর্মযোগে সহাবস্থান। আবাসিক হলের সঙ্গেই মূলত শিক্ষকদের ভবন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। অত্যন্ত শালীনতার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্চকণ্ঠে কথা বলতেও বিব্রত বোধ করে। মেয়েদের জন্য আলাদা কোন নিয়ম নেই। হলের অনুপ্রবেশের ব্যবস্থাপনায় ছাত্রছাত্রীর ফারাক করা হয় না। নির্বিঘেœ, নিশ্চিন্তে ছাত্রীরা তাদের হল জীবনে কোন ধরনের বিবাদ, সংঘর্ষে জড়িয়েও পড়ে না। এক কঠোর নিয়মানুগত পরিবেশে এর ব্যত্যয় হতেও দেখা যায় না। কোন অশালীন দৃশ্য কিংবা বুৎসিৎ শব্দ প্রয়োগে সহপাঠী ছাত্রীকে নাজেহাল করার ঘটনাও দৃশ্যমান হয় না। আবাসিক হল এবং শিক্ষক ভবনের পাশেই আছে খেলার মাঠ। সেখানে খেলার সময় উপভোগ্য মুহূর্তগুলোতে উল্লসিত হওয়া ছাড়া অন্য কিছু নজরেও পড়ে না। কড়া মুসলমানের দেশ হিসেবে খ্যাত মালয়েশিয়ায় ধর্মীয় বিভাজনের চেয়েও সম্প্রীতির বন্ধনই সবাইকে অভিন্ন চেতনায় আবদ্ধ করে রাখে। মূলত মালয়া, চৈনিক এবং ভারতীয়রা পুরো ব্যবস্থাপনার অংশীদার। তবে ইরান, ইরাক, মিসর, সৌদি আরব থেকে যেমন শিক্ষার্থীরা আসে সেভাবে সুদূর ইউরোপ আমেরিকার ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যাও কম নয়। আর বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকরাও ক্যাম্পাসে তাদের ভূমিকা অনবদ্য করে তোলেন। জাতি-বর্ণ আর ধর্মের ফারাককে জোর কদমে পেছনে ফেলে সমতাভিক্তিক সমাজ বিনির্মাণ দেশটির এক দৃষ্টান্তমূলক নজির। আবাসিক হল ও শিক্ষকদের ভবন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগও অনুষদের কাছাকাছি হওয়াতে সবাই হেঁটেই চলে যায়। যা স্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম নিয়ামক শক্তি। ভ্রমণ করার জন্যও একটি দর্শনীয় স্থান এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
×