ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইপিওর টাকা ব্যবহার না করেই তিনবার বোনাস ঘোষণা রিজেন্ট টেক্সটাইলের

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

 আইপিওর টাকা ব্যবহার না করেই তিনবার বোনাস ঘোষণা  রিজেন্ট টেক্সটাইলের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রিজেন্ট টেক্সটাইলের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) উত্তোলিত অর্থ ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়েছে আরও আড়াই বছর আগে। এরপরে ৩ দফায় সময় বাড়ানো সত্ত্বেও সেই ফান্ড ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও কোম্পানিটির পর্ষদ আগের অর্থবছরের মতো ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ব্যবসায়ও অযৌক্তিকভাবে বোনাস শেয়ার দিয়ে মুনাফার শতভাগ কোম্পানিতে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, আইপিও ফান্ড ব্যবহার করতে না পারার পরেও বোনাস শেয়ার দেয়া অযৌক্তিক। বোনাস শেয়ার দিয়ে টাকা কোম্পানিতে রেখে দিয়ে লাভ কি? সেটা তো ব্যবহার করতে হবে। এমনিতেই আইপিও’র বড় ফান্ড অব্যবহৃত রয়েছে। এমতাবস্থায় নগদ লভ্যাংশ দেয়া যৌক্তিক। ব্যবস্থপনার অদক্ষতার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। ইস্যু ম্যানেজার লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টের সহযোগিতায় রিজেন্ট টেক্সটাইল ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শেয়ারবাজার থেকে ১২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এরমধ্যে ৮২ কোটি ৪৭ লাখ টাকার বিএমআরই করতে ২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর ও নতুন প্রজেক্ট ৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যবহারের জন্য ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত সময়সীমা ছিল। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা ব্যবহারে ব্যর্থ হয়। যাতে ওই অর্থ ব্যবহারে সময় বাড়ানোর জন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি নেয়। এক্ষেত্রে বিএমআরইয়ের জন্য ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর ও নতুন প্রজেক্টের জন্য ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যবহার করা হবে বলে জানায়। এরপরে দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। আর সর্বশেষ তৃতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এখনও কোম্পানিটির ১২৫ কোটি টাকার মধ্যে ৪৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা বা ৩৬.৪১ শতাংশ অব্যবহৃত রয়েছে। এছাড়া আইপিও ফান্ড এফডিআর করে রাখায় অর্জিত ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকার সুদও অব্যবহৃত রয়েছে। অর্থাৎ ৭৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা অব্যবহৃত রয়েছে। রিজেন্ট টেক্সটাইলের আইপিও ফান্ড ব্যবহারে ৩ দফায় সময় বাড়ানো সত্ত্বেও কোম্পানিটির পর্ষদ আগের অর্থবছরের মতো ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ব্যবসায়ও অর্জিত মুনাফার শতভাগ কোম্পানিতে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রিজেন্ট টেক্সটাইলের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ০.৯৭ টাকা হিসাবে ১১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। তবে কোম্পানির পর্ষদ শুধুমাত্র ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ারের মাধ্যমে এই মুনাফার শতভাগ রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ১.১২ টাকা হিসাবে ১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছিল। ওই অর্থবছরেও কোম্পানির পর্ষদ শুধুমাত্র বোনাস শেয়ারের মাধ্যমে মুনাফার শতভাগ রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও কোম্পানিটির পর্ষদ ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকেই রিজেন্ট টেক্সটাইলের মুনাফা কমছে। কোম্পানিটি ২০১৪ সালের ১৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার নিট মুনাফা বা ইপিএস ২.৪৮ টাকা নিয়ে শেয়ারবাজারে আসে। এরপরের বছরই মুনাফা কমে হয় ১৩ কোটি ২১ লাখ টাকা বা ইপিএস ১.২০ টাকা। যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বা ইপিএস ১.২১ টাকা ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বা ইপিএস হয়েছে ১.১২ টাকা। আর সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আরও কমে হয়েছে ১১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বা ইপিএস ০.৯৭ টাকা। রিজেন্ট টেক্সটাইল শেয়ারবাজার থেকে উচ্চ প্রিমিয়ামে অর্থ উত্তোলন করে। ওই সময় কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ২৫ টাকা দরে ইস্যু করে। অথচ কোম্পানিটির শেয়ার দর এখন ১০.৮০ টাকায় অবস্থান করছে।
×