ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

থাই পেয়ারা চাষে সাফল্য

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ২৭ মে ২০১৮

থাই পেয়ারা চাষে সাফল্য

বিষমুক্ত ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে থাই পেয়ারা চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বানিনগর গ্রামের চাষী নুরুল হক। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিষমুক্ত পেয়ারা যাচ্ছে রংপুর, দিনাজপুর গাইবান্ধা, নীলফামারী ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। নুরুল হকের এ সাফল্য দেখে দিন যত বাড়ছে লালমনিরহাটে ততই বাড়ছে থাই পেয়ারার চাষ। জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বাড়ির সামনে সামান্য জমিতে নার্সারি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন নুরুল হক। সারাদিন পরিশ্রম করে বিভিন্ন গাছের চারা বিক্রি করেও ভাগ্যের পরির্বতন ঘটাতে পারেননি তিনি। তবে ২০১২ সালে ঢাকায় গিয়ে দেখতে পান মানুষ থাই পেয়ারা ২০০ টাকা কেজি দরে কিনছে। এ দৃশ্য দেখে তার থাই পেয়ারার বাগান করার ইচ্ছা জাগে। সেই ইচ্ছার বাস্তবে রূপ দিতে চলে যান কানসাটের থাই পেয়ারা বাগানে। সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিজের নার্সারিতে চারা তৈরি করে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেন। পরে স্থানীয় ধান চাষীদের জমি বছরে বিঘা প্রতি ১২ মণ ধানের বিনিময়ে লিজ নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে থাই পেয়ারার বাগান তৈরি করেন। বর্তমানে তার ৪০ বিঘা জমিতে রয়েছে ৬টি প্রজেক্ট। যার মধ্যে ৫টি প্রজেক্টই লিজ নেয়া জমিতে। এসব প্রজেক্টে দৈনিক ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত মজুরিতে ২০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। এতে শ্রমিক খরচ একটু বেশি হলেও বাজারে সারা বছর বিষমুক্ত থাই পেয়ারা থাকায় এর চাহিদাও অনেক। বছরে ৬টি প্রজেক্টের পেয়ারা বিক্রি হয় প্রায় ৩৫ থেকে ৩৬ লাখ টাকা। গত বছর ৩৫ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে খরচ বাদে তার লাভ হয় প্রায় ১৮ লাখ টাকা। আর এ বছর মৌসুম এলে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তিনি। লালমনিরহাটে সর্ব প্রথম থাই পেয়ারা চাষী ও সাফল্য অর্জনকারী নুরুল হক জানান, মাটির উর্বরা শক্তি ও আবহাওয়া অনুকূলের পাশাপাশি কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় থাই পেয়ারা চাষ করে আমার মতো এখন অনেকেই লাভবান। প্রতি বিঘায় বছরে ১ লক্ষ টাকা খরচ করে প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ করা সম্ভব। বাগানের প্রতিটি থাই পেয়ারার ওজন ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হচ্ছে। প্রতিটি গাছ থেকে কমপক্ষে ২৫ কেজি করে পেয়ারা পাওয়া যায়। মৌসুমে প্রতিমণ থাই পেয়ারা ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও অন্য সময় প্রতিমণ ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। নিয়মিত পরিচর্যা করে চাষ করলে প্রতিটি পেয়ারা গাছ থেকে ১ হাজার টাকার অধিক লাভবান হওয়া যায়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ সুবিধা পেলে এই পেয়ারা চাষ আরও বাড়বে বলে আশাবাদী। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিধুভূষণ রায় জানান, থাই পেয়ারার চারা রোপনের ৫ মাস পর থেকেই ফলন আসা শুরু করে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছরে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে এই পেয়ারা চাষ হচ্ছে। ব্যাগিং পদ্ধতিতে পেয়ারা চাষ শতভাগ বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক এবং খরচ কম হওয়ায় বেশি লাভজনক। নুরুল হকের সাফল্য দেখে লালমনিরহাটে দিন দিন বাড়ছে ফল চাষীর সংখ্যা।
×