অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জবাই করার উদ্দেশ্যে গরু ও মহিষসহ আরও কয়েকটি গবাদিপশু বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। এতে দেশটির প্রায় ১ লাখ কোটি রুপীর মাংসের ব্যবসায় ধস নামবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে গরুর মাংস রফতানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারত। আলোচ্য বছরে ভারত থেকে মোট ১৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন গরুর মাংস রফতানি করা হয়েছে যা বিশ্বের মোট চাহিদার ১৯ দশমিক ৬০ শতাংশ।
মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে গরুর মাংস রফতানিতে শীর্ষে ছিল ভারত। ওই দুই বছর দেশটি গড়ে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন করে গরু ও মহিষের মাংস রফতানি করে। ওই সময় বিশ্বের মোট চাহিদার ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ গরু ও মহিষের মাংস সরবরাহ করেছে দেশটি।
তবে ভারতের এই বিশাল রফতানি পণ্যের ওপর হঠাৎ করেই নেমে এসেছে নিষেধাজ্ঞার খ—গ। গত শুক্রবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার জবাই করার উদ্দেশে গরু ও মহিষসহ আরও কয়েকটি গবাদিপশু বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয় গত শুক্রবার এই সংক্রান্ত গেজেট জারি করেছে। গেজেটে বলা হয়েছে কৃষিকাজের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশে গরু, ষাঁড়, গাড়িটানা বলদ, হালটানা বলদ, মোষ, বকনা বাছুর ও উট বিক্রি করা যাবে না।
সরকারী ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাজারে গরু বা অন্য গবাদিপশু আনতে গেলে প্রয়োজনীয় আগাম অনুমতি নিতে হবে। যাতে কৃষি ও পশুপালন সংক্রান্ত উদ্দেশ্য উল্লেখ করলে তবেই ছাড় দেয়া হবে। বিক্রেতা সঠিক পরিচয়পত্রে নিজেকে কৃষক প্রমাণ করতে পারলেই গরু বা মহিষ কিনতে পারবেন। পাশাপাশি রাজ্যের সীমান্তের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোন পশু বিক্রির বাজার থাকতে পারবে না বলেও নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে।
তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছন দেশটির কয়েকটি রাজ্যও। কেরালার প্রাদেশিক সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা নতুন এই আইনকে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলছেন, প্রায় ১ লাখ কোটি রুপীর মাংসের ব্যবসায় ধস নামবে এই নীতির ফলে।
ভারতের রফতানি বিশ্লেষণের প্রতিষ্ঠান এক্সপোর্ট জিনিয়াসের সিনিয়র বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার আনুজ মেহরা এই বিষয়ে বলেন, নতুন আইন অনুসারে দেশে জবাই করার উদ্দেশে গরুর কেনাবেচা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গরুর কেনাবেচা যেহেতু নিষিদ্ধ সেহেতু দেশে গরুর মাংসও নিষিদ্ধ।
আর এই আইনে রফতানির জন্যও গরু জবাই করা যাবে না। এই অবস্থায় লাখ কোটি রুপীর এই বাজার দুম করেই থেমে যাবে বলে মনে করছেন তিনি। তিনি জানান, ভারতে সারা বছর যে গরু ও মহিষ জবাই করা হয় তার মাত্র ৩০ শতাংশ ভারতের বাজারে বিক্রি হয়। আর বাকি ৭০ শতাংশ বিশ্ব বাজারে রফতানি হয়।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দেশটির মাংস রফতানিকারকরা। তারা অভিযোগ করেছেন, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এমনিতেই মাংসের ব্যবসায় মন্দা অবস্থা বিরাজ করছিল। এবার একেবারে বন্ধই হয়ে যাবে। এই অবস্থায় তারা কেউ কেউ বলছেন, তাদের এখন মাংসের ব্যবসা ছেড়ে চায়ের ব্যবসা করতে হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: