ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

এক ছাদের নিচে দার্জিলিংয়ের চা থেকে প্রাইভেটকার

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

এক ছাদের নিচে দার্জিলিংয়ের চা থেকে প্রাইভেটকার

এম শাহজাহান ॥ তিন চাকার সিএনজিকে চার চাকায় রূপান্তর করে একটি নতুন মডেলের ‘প্রাইভেটকার’ তৈরি করেছে ভারতীয় অটোমোবাইলস কোম্পানি বাজাজ। ড্রাইভারসহ পাঁচজন যাত্রী অনায়াসেই পেট্রোলচালিত এ গাড়িতে ভ্রমণ করতে পারবেন। এর নাম দেয়া হয়েছে বাজাজ কিউট গাড়ি। বাংলাদেশী টাকায় নতুন এ গাড়ির দাম পড়বে ৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা মাত্র। স্থানীয় এজেন্ট ও বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান রানার-বাজাজ কিউট গাড়ি আমদানি ও বাজারজাতকরণ করছে। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত ইন্দো-বাংলা ট্রেড ফেয়ারে বাজাজ কিউটের এ গাড়িটিকে ঘিরে দর্শনার্থীদের জটলা ছিল চোখে পড়ার মতো। পাশেই ভারতীয় আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘ডাবর’ উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে আরেকটি স্টলে বেচাবিক্রি করছেন কয়েকজন বিক্রেতা। এ স্টল থেকে ডাবরের জুস ও ভাটিকা শ্যাম্পু দেখছিলেন দর্শনার্থী নূসরাত ফারিয়া লিজা। প্রতিবারের মতো এবারও লিজা প্রথম দিনেই মেলায় এসেছেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ইন্দো-বাংলা ট্রেড ফেয়ারে এসে ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য স্বচক্ষে দেখা ও জানা যাচ্ছে। পছন্দমতো পণ্য কেনাও যাচ্ছে এ মেলায়। তাই মেলায় আসা। তিনি বলেন, ডাবরের ভাটিকা শ্যাম্পু ও মধু তার খুব প্রিয়। মেলায় এসে আসল জিনিসটা পাওয়া গেল। মেলায় ভারত ও বাংলাদেশের ৩০টির অধিক প্রতিষ্ঠান স্টল নিয়ে পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছে। দার্জিলিংয়ের চা নিয়ে স্টল সাজিয়েছে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান। শীঘ্রই তাদের চা বাজারজাত শুরু হবে। বৃহস্পতিবার সকালে মেলার উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। উদ্বোধনের পর দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। মেলায় অটোমোবাইলস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হোম এ্যাপ্লাায়েন্স, ইলেক্ট্রনিক্স এ্যান্ড ইলেক্ট্রিক্যাল পণ্য, পেইন্টস, ব্যাংকিং সেবা, পাওয়ার জেনারেশন, ইন্স্যুরেন্স, টেক্সটাইল, সিমেন্ট, ম্যানুফ্যাকচারিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। বড় কিছু প্রতিষ্ঠান পণ্য বিক্রির চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে প্রদর্শনীতে। পণ্যের গুণগতমান, স্থায়িত্ব এবং সুলভমূল্যের বিষয়টি তুলে ধরছেন মাকের্টিং কর্মকর্তারা। আয়োজকরা জানান, এখানে যেসব কোম্পানি অংশগ্রহণ করছে তারা বাংলাদেশে ব্যবসা প্রসার করবে। বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোও ভারতের বাজারে ব্যবসা করার আগ্রহ নিয়ে এ মেলায় এসেছে। এর মধ্যে অলিম্পিক, পিপলস্ ইন্স্যুরেন্স, এনার্জি পাওয়ার, এ্যাপেক্স ইয়ার্ন ডাইং লিমিটেড উল্লেখযোগ্য। জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার প্রত্যাশায় তিন দিনের জন্য এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার আইবিসিসিআই এ মেলার মূল আয়োজক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত সব সময় বাংলাদেশের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানি বাড়ছে নিয়মিতভাবে। কিছু পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে এ্যান্টি ডাম্পিং সমস্যার সমাধান করার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ্যালকোহল এবং টোব্যাকো পণ্য ছাড়া ভারতের বাজারে আমাদের সব পণ্যই শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। তবে ট্যারিফ ও প্যারাট্যারিফ বাধায় কিছু পণ্য রফতানিতে সমস্যা সৃষ্টি করছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক ভাল। দুই দেশের বাণিজ্য অব্যাহতভাবে বাড়ছে। এ মেলা বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে। দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বড়। এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে দুই দেশই উপকৃত হতে পারে। আইবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট আবদুল মাতলুব আহমাদ, সংগঠনটির সহ-সভাপতি দেওয়ান সুলতান আহমেদ, সিয়েট একে খান লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যতিব্রত ব্যানার্জী, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ) অভিজিৎ ব্যানার্জী প্রমুখ। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনটি ইকোনমিক অঞ্চল ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য থাকবে। এদিকে, মেলায় অংশ নিয়েছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ লিমিটেড, এশিয়ান পেইন্টস, পানি ফিল্টারিংয়ের মেশিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আয়োজন এক্সচেঞ্জ, ম্যাটেক্স বাংলাদেশ, রানার গ্রুপ, নিটল মটরস, বিএনও লুব্রিকেন্টস, টাটা গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এশিয়ান পেইন্টসের স্থানীয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সেলস কো-অর্ডিনেটর আনিছুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতি বছর এশিয়ান পেইন্টসের চাহিদা বাড়ছে। তিনি বলেন, আগে সরাসরি ভারত থেকে আমদানি করে বাজারজাত করা হতো। কিন্তু এখন যৌথ বিনিয়োগের ভিত্তিতে এ দেশে এশিয়ান পেইন্টস উৎপাদন করা হচ্ছে। মেলায় অংশ নেয়া এনার্জি প্যাকের ডেপুটি ম্যানেজার সাদিয়া জাফরিন নাউমি জনকণ্ঠকে বলেন, এবারের মেলায় প্রথম দিনেই বেশকিছু অর্ডার পাওয়া গেছে। বিদ্যুতের সাব-স্টেশন ও ট্রান্সফর্মার উৎপাদনে এনার্জি প্যাক দেশের গ-ি ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছে গেছে বলে জানান তিনি। নাউমি বলেন, প্রতি বছর এনার্জি প্যাকের উৎপাদিত বৈদ্যুতিক মেশিনারিজ রফতানি বাড়ছে। নেপাল ও আফ্রিকার দেশগুলোতে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। এছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের মতো বড় প্রকল্পে উৎপাদিত মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার এ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার বিপাশা ঘোষ জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে এ ব্যাংকটির গ্রাহক দিন দিন বাড়ছে। ভবিষ্যতে ভাল প্যাকেজ ও অফার নিয়ে বাংলাদেশে কাজ শুরু করবে।
×