ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের প্রথম খড়-কুটা ভিত্তিক বায়োগ্যাস বিদ্যুত প্লান্ট

পটুয়াখালীর দশমিনায় এশিয়ার সর্ববৃহৎ বীজ বর্ধন খামার

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১১ আগস্ট ২০১৬

পটুয়াখালীর দশমিনায় এশিয়ার সর্ববৃহৎ বীজ বর্ধন খামার

মোঃ মোখলেছুর রহমান, নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী ॥ দেশের প্রথম খড়-কুটাভিত্তিক বায়োগ্যাস প্লান্ট। এই পান্ট থেকে উৎপাদিত হবে ৫০০ ঘনমিটার বায়োগ্যাস। উৎপাদিত এই গ্যাস দিয়ে আবার উৎপাদিত হবে ৮০ কিলোওয়াট বিদ্যুত। শুধু তাই নয়- এই বায়োগ্যাস প্লান্টে ব্যবহৃত যে জৈব প্রযুক্তি, তা দিয়ে আবার উৎপাদিত হবে উন্নতমানের জৈবসার। এক সাথে ‘প্রধম’ এই কর্মযজ্ঞ চলছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ বীজ বর্ধন খামার পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চরবাঁশবাড়িয়ায়। চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরি লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায়। প্রতিকূলতা সহিষ্ণু বীজ এবং দক্ষিণ উপকূল এলাকার জন্য উপযোগী অন্যান্য শস্যবীজ উৎপাদন করে কৃষকের হাতে তুলে দেয়ার জন্য পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চরবাঁশবাড়িয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ বীজ বর্ধন খামার গড়ে তোলা হয়। বাঁশবাড়িয়ার তিনটি চরের (একত্রে সংযুক্ত) ১ হাজার ৪৪ একর জমি ওপর প্রায় ২৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এ খামার প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। পরবর্তীতে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপচরের খামারের উৎপাদিত বীজ প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাতকরণ, গুদাম, ভবন, ডরমিটরি, লেবার সেট, যন্ত্রপাতি মেরামতের ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন কাজে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তায় এখানে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনসহ বিদ্যুত উৎপাদনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরি লিমিটেড, গাজীপুর। খামারের ভেতরেই ৪০ হাজার ৮০৪ বর্গফুট আয়তনের জমির ওপর এই প্রকল্পে ৫০০ ঘনমিটার বায়োগ্যাস উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্লান্ট স্থাপনসহ বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপনের কার্যাদেশ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করে। এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪৩ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোঃ তাসির হিসমী বলেন, চীনের ‘বসিমা’ কোম্পানির সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে বাংলাদেশে এই প্রথম খড়কুটা দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন হবে। চীন থেকে ছয় প্রকৌশলী এখানে তিন মাস কাজ করেছেন। ২০১৬ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। খামারের উপসহকারী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ সিকদার বলেন, প্রথমে প্লান্টে প্রসেসিং ইউনিটে খড়কুটা দেয়া হবে। এখানে খড়কুটা ছোট ছোট টুকরো হয়ে অপর একটি চেম্বারের ডাইজেস্টারের মাধ্যমে গ্যাস হয়ে অপর দুটি গ্যাস চেম্বারে জমা হবে। সেখান থেকে গ্যাস পরিশোধনের জন্য শোধনাগার চেম্বারে জমা হবে। পরে গ্যাস শোধন হয়ে পিওর গ্যাস চেম্বারে যাবে। এই পিওর গ্যাস দিয়ে জেনারেটর চালু হবে। তিনি বলেন, এই প্লান্টে দুটি জেনারেটর রয়েছে। একটি থেকে ৫০ কিলোওয়াট ও অপরটি থেকে ৩০ কিলোওয়াট মোট ৮০ কিলোওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হবে এবং উৎপাদিত বিদ্যুত থেকে খামারের বিদুতের চাহিদা পূরণ হবে। এছাড়াও নিরবছিন্ন বিদ্যুতের জন্য এই প্লান্টের চেম্বারে ৩০০ ঘনমিটার পিওর গ্যাস জমা থাকবে। তিনি জানান, তাদের এই বায়োগ্যাস প্লান্টে প্রতিদিন দেড় টন খড়কুটার প্রয়োজন হবে। খামারে বীজ উৎপাদনের পর যে খড়কুটা থাকবে তা দিয়েই বায়োগ্যাস প্লান্ট সচল রাখা যাবে। এছাড়াও গ্যাস উৎপাদনের প্রসেসিং হওয়া খড়কুটা পরবর্তীতে উন্নতমানের জৈব সার হিসেবে খামারের জমিতে ব্যবহৃত হবে। বীজ বর্ধন খামারের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আলমগীর মিঞা বলেন, খড়কুটাভিত্তিক বায়োগ্যাসে বিদ্যুত উৎপাদন দেশে এই প্রথম। নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। খামারের খড়কুটা দিয়ে গ্যাস-বিদ্যুত উৎপাদন হবে। এতে খামারের প্রয়োজনয়ী বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে পাশাপাশি প্লাটে ব্যবহৃত খড়কুটা পরে উন্নত জৈবসার হিসেবে খামারে ব্যবহৃত হবে। এতে খামারে সারের চাহিদাও কমবে । তিনি বলেন, শীঘ্রই চীন থেকে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের একটি দল আসবে এবং তারা এলেই প্রকল্পটি উদ্বোধন হবে বলে জানান তিনি।
×