ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভোগে নয় ত্যাগেই আনন্দ

 শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২৪ মার্চ ২০২৪

ভোগে নয় ত্যাগেই আনন্দ

.

চলছে সংযম আত্মশুদ্ধির মাস রমজান। মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমান সংযম সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ নিজের জীবনকে সুন্দর পবিত্র করার আশায় ইবাদতে কাটান। মাস আত্মত্যাগের। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে ইবাদত-বন্দেগির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বরকতময় এই মাস। আল্লাহ তায়ালা ধনীদের ওপর যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন। যাতে দরিদ্ররা তাদের চাহিদা পূরণে সক্ষম হয় আর ধনীরা তাদের সম্পদ পবিত্র করার মধ্য দিয়ে ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। তাই রমজান মাস স্বভাবতই অসহায়, মিসকিনদের জন্য একটি খুশির মাস।

সারাদিন রোজা রেখে আমরা সন্ধ্যায় ইফতার করি। দেখা যায় মাসে ইফতার, রাতের খাবার আর সাহরি মিলে বিশাল খাবারের আয়োজন হয়। মূলত সারাদিন না খেয়ে থাকা অনাহারি-অর্ধাহারি মানুষগুলোর কষ্ট বোঝার জন্যে মাস। কিন্তু আমরা সবাই কি তা উপলব্ধি করতে পারি? অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাই না। বরং রোজা রেখে আয়েশ করে নানা রকম মুখরোচক খাবার দিয়ে ইফতার করি। বেশির ভাগ সময়ই সে খাবার নষ্ট হয়। কিন্তু কখনো কি খবর নিয়েছি, আমার প্রতিবেশী সারাদিন রোজা রেখে কি দিয়ে ইফতার করছে? অথবা রাতে বা ভোর রাতে তাদের খাবার জুটেছে কিনা? অনেক সময়ই আমরা তা খেয়াল করি না। কিন্তু রোজার মাস আমাদের মূলত এই শিক্ষাটাই দেয়। তাই শুধু রোজা রাখলেই হবে না।

চেষ্টা করতে হবে আপনার প্রতিবেশী বা পাশে যে দরিদ্র পরিবারটি আছে, তাদের পাশে দাঁড়াতে। আমরা সবাই মিলে যদি যার যার সামর্থ্যমতো একটা করে পরিবারের দায়িত্ব নিই, তাহলে সেই পরিবারটির মুখে যেমন হাসি ফুটবে, তেমনি সমাজে কিছুটা হলেও অভাব বা বৈষম্য কমে আসবে। বেলা শেষে দেখবেন আপনার মনেও তৃপ্তি থাকবে। পাশাপাশি আপনার সন্তানকেও এই শিক্ষাটা দিন, যাতে পরবর্তীতে আপনার ধারাবাহিকতাটা সেও বজায় রাখতে পারে। আমরা বড়রা যদি এই দায়িত্বটুকু নিই, পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের দেখে শিখবে। এক সময় গরিব প্রতিবেশীদের জন্য প্রতিদিন ইফতার আর রাতের খাবার আলাদা করে তৈরিই হতো। এখন পাশের ঘরে কে থাকে তাও আমরা ভালো করে জানি না। তবে আশার কথা হচ্ছে, আজকাল অনেক ফেসবুক গ্রুপে এমন দলবদ্ধ কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে। গ্রুপের সদস্যরা যে যা পারে সামর্থ্যমতো অর্থ তুলে দরিদ্রদের একবেলার অন্ন সংস্থান করছেন। কখনো তা কোনো এতিমখানায়, কখনো কোনো একটা এলাকা নিয়ে আবার কখনো খাবার পেকেট করে ইফতারের আগ মুহূর্তে পথের মানুষের বা রিকশাওয়ালাদের হাতে দিয়ে দিচ্ছে। অনেকে তা ব্যক্তিগত ভাবেও করছেন। কথা হলো এমন একজন গৃহিণী আবিদার সঙ্গে। থাকেন চট্টগ্রামের হালিশহরে। তিনি গত বছর রোজায় ৫০০ মানুষকে ইফতার খাইয়েছিলেন। ইফতার বলতে বক্সে একবেলার খাবার-কখনো বিরিয়ানি, কখনো খিচুড়ি-ডিম ভুনা আবার কখনো ভাত-মুরগি। এবারও তাই করবেন বলে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন।

ইতোমধ্যে প্রায় ২০০ জনকে খাওয়ানো হয়ে গেছে। তিনি তার সন্তানদেরও সঙ্গে রেখে এই শিক্ষা দিচ্ছেন। তারাও খুব উৎসাহ নিয়ে মাকে সাহায্য করে। তবে একার পক্ষে এত খরচ বহন করা কষ্টকর বিধায় তিনি তার বন্ধু, প্রতিবেশীদের সহযোগিতা নিয়েছেন। সবাই যার যার সামর্থ্যমতো তার পাশে থাকছে। বাজার, রান্না আর বিলানোর কাজটা তিনি নিজেই করছেন। কথায় আছে- কারও জন্যে কিছু করলে চুপ করে করতে হয়। আবার এটাও ঠিক- প্রচারেই প্রসার। আবিদাও তার প্রতিটা কাজ ছোট ছোট ভিডিও করে গ্রুপে পোস্ট করেন, সবাইকে জানাতে। তাতে করে অন্যেরা উৎসাহ পায়। তাকে দেখে এই রোজায় অনেকেই দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিলানোর কাজ শুরু করেছেন। আমরা যদি পরিবারের ছোটদেরও এসব কাজে পাশে রাখি, তারা ছোট থেকেই অন্যের পাশে থাকতে শিখবে, তাদের মধ্যে দায়বদ্ধতা তৈরি হবে।

তাছাড়া রোজায় যে যাকাত ফিতরা দেওয়া হয়, তাও যদি আমরা সঠিক নিয়মে পালন করি- সমাজের অনেকের উপকার হয়। আপনি যদি প্রতিদিন নিজ এলাকার অন্তত একজনের এক বেলা খাওয়ানোর দায়িত্ব নেন, তাহলে একদিন সমাজ থেকে অন্তত ধনী-দরিদ্রের তীব্র বৈষম্যটুকু কমে আসবে। আসুন নিজেরা অসহায়দের পাশে দাঁড়াই, অন্যদেরও উৎসাহিত করি। এই রোজায় এটাই হোক আমাদের প্রত্যয়।

 

×