ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জুয়ায় ১শ’ টাকা হেরে মোবাইল খুইয়ে ভয়ে মা-বাবার কাছে যাননি

ঘরছাড়া সুমনকে ১২ বছর পর পরিবারে ফিরিয়ে দিল পিবিআই

প্রকাশিত: ২৩:২১, ২৫ মে ২০২২

ঘরছাড়া সুমনকে ১২ বছর পর পরিবারে ফিরিয়ে দিল পিবিআই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জুয়ায় ১০০ টাকা হেরে মোবাইল খোয়ান মোঃ সুমন। এই ভয়ে সুমন আর বাবা-মায়ের কাছে কাছে ফেরেনি। তখন বয়স ছিল ১৬ বছর। এরপর শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। কখনও বায়তুল মোকাররম মসজিদের বারান্দায়, কখনও ফুটপাথে রাত কাটে তার। এরপর শুরু হয় তার কর্মজীবনের নানা কাহিনী। কখনও বাসের হেলপার, কখনও ফুলের মার্কেটে কাজ, হোটেলের বাবুর্চির কাজ করত। এভাবে ১২ বছর ঘর ছেড়ে সুমন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। এমনকি ভ্যানে করে রুমা এ্যাকুরিয়াম সেন্টার, পপুলার এ্যাকুরিয়াম সেন্টার ঘুরে ইউসেফ টেকনিক্যাল স্কুল ও বারডেম হাসপাতালের যাত্রী আনা নেয়া করত। ইউসেফ স্কুলের এক ছাত্রীর মায়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান সুমন। আগের স্বামীকে তালাক দিয়ে সুমনকে বিয়ে করেন ওই ছাত্রীর মা। চার বছরে দম্পত্য জীবনে তাদের ঘর আলো করে একটি ছেলে সন্তান হয়। স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে রায়েরবাগ এলাকার বিভিন্ন স্থানে বসবাস করে আসছিলেন সুমন। সবশেষ বাসের ড্রাইভিং পেশায় যোগ দেন। এরই মধ্যে সুমনের সন্ধানে বাবা মোজাফফর হোসেন থানায় জিডি করেন। মামলাও করেন। তদন্ত ভার থানা, ডিবি, সিআইডির হাত বদলে সর্বশেষ আসে পিবিআইয়ের হাতে। কিন্তু ১২ বছরে কেউ সন্ধান দিতে পারেনি তার। সুমনও নিজ উদ্যোগে আর ফিরে আসেনি তার বাবা-মায়ের কাছে। সবশেষ সুমনের স্ত্রীর সহযোগিতা আর পিবিআইয়ের লেগে থাকা তদন্তে দীর্ঘ ১২ বছর ঘরছাড়া সুমন ফিরে আসে পরিবারে। সোমবার রাতে রাজধানী কদমতলী থানাধীন মদিনাবাগ এলাকা থেকে সুমনকে উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় মিরপুর-১১ নম্বর বাজার এলাকায় জুয়া (তিনতাস) খেলায় বসেন সুমনসহ তার সহযোগীরা। সেখানে ১০০ টাকার বাজি হেরে মোবাইলটি খোয়ান। মোবাইল খোয়ানোর ভয়ে সুমন আর পরিবারে ফেরেনি। সেদিন সকাল ৮টায় বাবা মোজাফ্ফর (৫২) ছেলে সুমন (১৬) নিয়ে বাসা থেকে তার কর্মস্থল ডায়মন্ড প্যাকেজিং গার্মেন্টেসে যান। কিন্তু গার্মেন্টস থেকে ফিরে দেখেন ছেলে সুমন বাসায় ফিরেনি। পরে মোজাফ্ফর ছেলের সন্ধান চেয়ে ওই বছর ৫ অক্টোবর পল্লবী থানায় একটি জিডি করেন। এর মধ্যে বাবার কাছে তথ্য আসে সুলায়মান হোসেন (২৮), শাওন পারভেজ (১৮), রুবেল (২০), সোহাগ (২০) ও মানিক (২৫) নামে কজন মিলে সুমনকে অপহরণ করেছে। এতে সন্দেহবশত বাদী হয়ে ২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর পল্লবী থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন তিনি। মামলা নং-৯০। পরে তদন্তভার থানা, ডিবি, সিআইডির হাত বদলে সর্বশেষ আসে পিবিআইয়ের হাতে। কিন্তু ১২ বছরে কেউ সন্ধান দিতে পারেনি তার। সুমনও নিজ উদ্যোগে আর ফেরেনি পরিবারে। তবে সবশেষ সুমনের স্ত্রীর সহযোগিতা আর পিবিআইয়ের লেগে থাকা তদন্তে দীর্ঘ ১২ বছর ঘরছাড়া সুমন ফিরে আসে পরিবারে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের তদারকিতে সোমবার রাতে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন মদিনাবাগ এলাকা থেকে সুমনকে উদ্ধার করে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম।
×