ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোন তদারকি নেই

অপরিপক্ব লিচুতে ভরে গেছে দিনাজপুরের বাজার

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ১৯ মে ২০২২

অপরিপক্ব লিচুতে ভরে গেছে দিনাজপুরের বাজার

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ অপরিপক্ব লিচুতে ভরে গেছে লিচুর রাজ্য খ্যাত দিনাজপুরের বাজার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব মতে, পরিপক্ব লিচু বাজারে উঠতে আরও এক মাস বাকি আছে। কিন্তু এরইমধ্যে বাজারে অপরিপক্ব লিচু বিক্রি করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এই অপরিপক্ব লিচুতে রয়েছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি। এমনকি শিশুদের মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে বাজারে অপরিপক্ব লিচু বিক্রি হলেও কোন তদারকি নেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের। এর আগে অপরিপক্ব লিচু খেয়ে দিনাজপুরে মারা যায় ২৩ শিশু। কয়েকদিন ধরেই দিনাজপুর শহরের কালিতলা নিউমার্কেট বাজারে অপরিপক্ব লিচু বিক্রি করছেন সদর উপজেলার মাঝাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ। এরইমধ্যে তিনি প্রায় ৪ হাজারের বেশি অপরিপক্ব লিচু বিক্রি করেছেন। শুধু কালিতলা নয়, দিনাজপুর শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে অপরিপক্ব লিচু বিক্রি করা হচ্ছে। আব্দুল লতিফ জানান, আমার কাছে মাদ্রাজী জাতের লিচু আছে। প্রতি এক শ’ লিচু ২শ’ ২০ টাকা করে বিক্রি করছি। জেলার বিরল উপজেলার মাধবমাটি গ্রামের বাগান থেকে এনে এসব লিচু বিক্রি করছেন বলেও জানান তিনি। লিচু কিনতে আসা ক্রেতা জামিলুর রহমান বলেন, বছরের প্রথম লিচু আজ বাজারে দেখলাম। এই সময়ে বাজারে লিচু পাওয়া যাবে তা আমার ধারণা ছিল না। লিচুগুলো ঠিকমতো পাকেনি। খেতেও টক। তারপরও পরিবারের লোকজনের জন্য ৫০টা কিনলাম। বিরল উপজেলার মাধবমাটি গ্রামে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লিচু চাষী বলেন, আমাদের এই গ্রামের লিচু সাধারণত বাজারে প্রথম দিকে ওঠানোর টার্গেট নেয়া হয়। এজন্য ফাইটার, ক্যারোটে, যুবাস, রিভা, এমিস্টার টপসহ ইত্যাদি কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। এতে লিচু পরিপক্ব হওয়ার আগে গায়ে রং চলে আসে। ফলে ক্রেতারা পরিপক্ব ভেবে অপরিপক্ব লিচু কিনে নিয়ে যায়। দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক জানান, বর্তমানে আমাদের দেশে অপরিপক্ব কোন ফলই খাওয়া ঠিক না। কেননা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ফলকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার জন্য অত্যাধিক পরিমাণ কেমিক্যাল মেশান। এছাড়াও অনেকে ফলের দাম বেশি পাওয়ার জন্য কেমিক্যাল মিশিয়ে আগেই পাকিয়ে বাজারজাত করে। তেমনই একটি ফল লিচু। বেশি মুনাফার আশায় অসাধু চাষী ও ব্যবসায়ীরা লিচুতে অধিক পরিমাণ কেমিক্যাল মিশিয়ে ফলের রং তাড়াতাড়ি এনে বাজারজাত করেন। এটা খেলে স্বাভাবিকভাবে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, বাজারে যে লিচু পাওয়া যাচ্ছে তা অপরিপক্ব। তাই আমি ভোক্তাদের এই অপরিপক্ব লিচু খাওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করব। বাগানীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় লিচুগুলোতে কীটনাশক প্রয়োগ করে বাজারে বিক্রি করে। এই অপরিপক্ব লিচু খেলে মানুষের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপরিপক্ব লিচু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক শিশুদের জন্য। এমনকি এই লিচু খেলে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোঃ খালেদুর রহমান জানান, দিনাজপুরে লিচু পাড়ার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অপরিপক্ব লিচু বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগম বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে দিনাজপুরের লিচু নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আলোচনা হবে। সেখানেই লিচু নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা মুসফিকুর রহমান বলেন, দিনাজপুর শহরের কয়েক জায়গায় অপরিপক্ব লিচু বিক্রি হচ্ছে বলে আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে কৃষি অফিসের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও জেলা নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
×