ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

জলাবদ্ধতার অপচয়

প্রকাশিত: ২০:২৮, ১৬ মে ২০২২

জলাবদ্ধতার অপচয়

টাকার অপচয় কিংবা ক্ষতি বোঝাতে আমরা বলে থাকি- টাকা গেল জলে। ঢাকার জলাবদ্ধতার জলেও যে বিপুল অঙ্কের টাকা অদৃশ্য হতে পারে- এটি কি ঢাকাবাসী আগাম আন্দাজ করেছিলেন! এখন হিসাব নিতে বসে দেখা যাচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে তিন হাজার কোটি টাকা একরকম জলেই গেছে। ২০০১ সালে ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প’ নিয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। দফায় দফায় ব্যয় বাড়িয়ে ২০১১ সালে ২০৩ কোটি টাকায় প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। এরপর দ্বিতীয় ধাপের জন্য আরও ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প-২ বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১৩ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষে রাজপথ যেন পরিণত হয় সাগর-নদীতে। কেবল এ দুটি প্রকল্পই নয়, গত দেড় দশকে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে ঢাকা ওয়াসা এবং অবিভক্ত ও বিভক্ত দুই সিটি কর্পোরেশন। কর্পোরেশন দুটি মহানগরে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের প্রায় ১০ শতাংশ খরচ করেছে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে। জলাবদ্ধতা কমেনি একটুও। বর্ষা আসবে প্রকৃতির নিয়ম মেনে বাঙালী কিছুটা আবেগপ্রবণ জাতি। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই বর্ষাবন্দনার জোয়ার লক্ষ্য করা যায়। কবিগুরু বলে গেছেন, এমন দিনে তারে বলা যায়। ফলে মনের ঝাঁপি খুলে কথা বলতে ইচ্ছে করে বহুজনের। কিন্তু যারা বাস্তববাদী, প্রতিদিন জীবিকার জন্য ঘরের বাইরে বের হতে হয়, তাদের কাছে বর্ষাকাল রোম্যান্টিকতার নয়, বরং বিপন্নতার সঙ্কেত। বর্ষায় জলাবদ্ধতা রাজধানীর একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষার শুরুতেই গণমাধ্যম আমাদের স্মরণ করিয়েও দেয় যে, ঢাকার দুই সিটিতে কয়টি এলাকা জলাবদ্ধতাপ্রবণ। সাম্প্রতিক কয়েকটি মাঝারি বর্ষণেই দেখা গেছে মিরপুর ১ নম্বর, কাজীপাড়া, গ্রীন রোড, কাঁঠালবাগান, কাওরান বাজার, ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোড, আসাদগেট, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মতিঝিলের কিছু অংশ, সোনারগাঁও মোড়, রামপুরা ও খিলগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধসংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। এবারের বর্ষা মৌসুমেও এসব এলাকার জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে কি নগরবাসীর মুক্তি মিলবে? বরং এর সঙ্গে যোগ হতে পারে আরও কিছু এলাকা। একটি আধুনিক নগরীতে জলাবদ্ধতার কোন সুযোগ নেই। ঢাকার জলাধার, জলাশয় হিসেবে ঝিল ও খালের কার্যকারিতা বিগত দশকগুলোতে ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে দখল ও দূষণের কারণে। এটি যে কত বড় অপরিণামদর্শিতা এবং আত্মঘাতী কার্যকলাপ সেটি নগরবাসী প্রতিবছরই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। এর ফলে পরিবেশ দূষণ ঘটছে মারাত্মকভাবে। অপরদিকে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখার পথ অবরুদ্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধতা ও জলজট হয়ে উঠেছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা স্বরূপ। খালগুলো যেন ইচ্ছেমতো যত খুশি যেভাবে খুশি বর্জ্য ফেলার স্থান। সব মিলিয়ে ঢাকার অধিকাংশ খালই মরণ দশায় নিপতিত। এসব খাল ভরাট করে অবৈধভাবে বহুতল ভবন, দোকানপাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা। রাজধানীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত রাখতে হলে খালগুলোয় টেকসই পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। খালগুলোকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণও করতে হবে, যাতে কেউ দখল বা ভরাট করতে না পারে। একইসঙ্গে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনাও আধুনিক করা অত্যাবশ্যক।
×