বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রগামিতায় নিরন্তর এগিয়ে যাচ্ছে। সমৃদ্ধির বিভিন্ন সূচকে অনন্য কৃতিত্ব অর্জন ও এখন নজরকাড়া। বিশেষ করে জনগোষ্ঠী প্রায়ই সমানসংখ্যক নারীরাও নিজেদের অংশীদারিত্ব প্রমাণ করে বৃহত্তর সামাজিক আঙিনায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পেছনের দিকে তাকাচ্ছে না। শিক্ষায় পুরুষের তুলনায় নারীর এগিয়ে যাওয়া একেবারে সময়ের চাহিদা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের বোর্ড পরীক্ষার ফলে এবার ছাত্রীদের নজরকাড়া কৃতিত্ব দৃষ্টিনন্দন। এখন বিভিন্ন পেশায়ও নারীরা ক্রমবর্ধমান হারে সম্পৃক্ত হচ্ছে। একসময় গৃহিণীরা পারিবারিক সীমাবদ্ধ বলয়ে সাংসারিক কাজকর্মে নিজেদের ব্যস্ত রাখত। স্বামী-সন্তানের পরিচর্যা করা ছাড়াও বয়োবৃদ্ধদের দেখভালের দায়িত্ব নিত। আর পেশা বলতে শিক্ষকতা এবং চিকিৎসক হওয়ার প্রত্যাশা পোষণ করাও ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু সময় এবং যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তি সহায়ক সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ অবারিত হওয়া পরিস্থিতির অনিবার্য চাহিদা। শুধু তাই নয় যে ব্যবসা বাণিজ্যে নারীর অনাগ্রহ ছিল অত্যন্ত সীমিত সেখানেও আজ তারা নিজেদের সম্পৃক্ত করছে আপন ইচ্ছায়। সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তার আসন পোক্ত করা ছাড়াও উর্ধতন অধিকতার পর্যায়ে চলে যেতেও কোন অসুবিধাই আজ আর হচ্ছে না। ফলে বৃহত্তর সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক দায়বদ্ধতা সামলাতে গিয়ে ছোট্ট পারিবারিক আঙিনাটি সামলানোও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সন্তান যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় সেখানে সমস্যা খুব বেশি হয় না। কিন্তু একান্ত শিশু যারা তাদের দেখভালের জন্য সর্বক্ষণিক একজন সাহায্যকারীর প্রয়োজন পড়ে। উন্নত দেশের মতো আমাদের সেভাবে কোন ‘শিশু দিবাযতœ’ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নিতান্ত নগণ্য। সঙ্গত কারণে চাকরিজীবী মাকে শিশু সন্তানের সার্বিক যতœআত্তির জন্য একজন দায়বদ্ধ সেবাদানকারীর প্রয়োজন পড়ে। বাচ্চাদের সামলাতে মূলত কিশোরী মেয়েরাই অনেক পারদর্শী হয়। যারা সংসারের অন্যবিধ কাজকর্মের চাইতেও শিশুর সযতœ পরিচর্যায় অনেক বেশি সক্ষমতার পরিচয় দেয়। তাই কোলের সন্তানকে রেখে যেতে কর্মজীবী মায়েরা উঠতি বয়সের কিশোরীদের ওপরই অনেক বেশি আস্থা রাখতে পারেন। বয়স কম হওয়াতে বাচ্চাদের মনমানসিকতাও রপ্ত করতে পারে উদীয়মান এমন কিশোরীরা, শিশুরাও নিরাপদে মায়ের অনুপস্থিতিতে তাদের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটায়। সময় নির্ধারণ করে খাওয়ানো থেকে শুরু করে গোসল করা, ঘুম পাড়ানো, খেলায় মনোযোগ দিয়ে বাচ্চাদের সঙ্গে সময় ভাগ করে নেয়াও যেন নিত্যনৈমিত্তিক জীবনপ্রবাহ। তবে যাদের ওপর ভরসা করে মাকে কাজে কিংবা শিক্ষা গ্রহণে বের হতে হয় সেই মেয়েদের ওপরও যথার্থ নজরদারি করে তাদের সুরক্ষা দেয়াও ঘরের কর্ত্রীর একান্ত কর্তব্য। মাকে সেই সকাল ৯টায় বের হয়ে যেতে হয় এবং ফেরার সময় প্রায়ই সন্ধ্যা ৬টারও অধিক। সুতরাং নিরাপদ বেষ্টনীতে কোলের সন্তানকে যার জিম্মায় রাখতে হয় তা সেই সেবাপ্রদানকারীকে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়াও অন্যতম দায়বদ্ধতা। আবার এখানে বিপত্তি ঘটতেও সময় লাগে না। অপরিচিত কোন মেয়েকে দায়িত্বে বহাল করার আগে তার সার্বিক পরিচিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়াও অত্যন্ত প্রয়োজন। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ছাড়াও যার মাধ্যমে তাকে কাজে বহাল করা হলো তার সম্পর্কেও নিঃসন্দেহ হওয়া পরিস্থিতির অনিবার্য দাবি। এখন অনলাইনভিত্তিক গৃহকর্মী নিয়োগ দেয়াও এক আশঙ্কার বিষয়। ষড়যন্ত্র আর প্রতারণা চক্র সব সময় ওঁৎ পেতে থাকে কারও গৃহে প্রবেশ করে চরম সর্বনাশ করার অপেক্ষায়। হরহামেশাই এমন সব বিব্রতকর তথ্য গণমাধ্যমে উঠে আসতেও সময় লাগছে না। তার পরও মায়ের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এসব কর্মীর ওপর যথেষ্ট ভরসা রাখতে হয়। একসময় একান্তবর্তী পরিবারে দাদি কিংবা নানির হাতে সন্তান রেখে মেয়ে অথবা বউমারা তাদের কাজের জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যে চলে যেতে পেরেছে। কিন্তু এখন একক ছোট পরিবারে তেমন সুযোগও একেবারে সীমিত। আর শিশু দিবা পরিচর্যা কেন্দ্রও প্রয়োজনের তুলনায় এত কম যার ওপর নির্ভর করা যায় না। তাই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও অবাধ সম্প্রসারণের যুগে শিশুদের যতœআত্তির এক কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে কর্মজীবী মায়েদের জন্য। বাচ্চাটার যে সব সময় দেখভাল করে তাকেও পরিবারের অন্য সকলের যথার্থ তত্ত্বাবধান করা দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। শিশুর যতœ যে মেয়েটি সর্বক্ষণিকভাবে করে যাচ্ছে তার খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো হলো কিনা সেদিকেও বিশেষ দৃষ্টিনিবদ্ধ করা মানবিক দায়বদ্ধতা। সময়মতো তারও ঘুমের প্রয়োজন। গোসলের জন্যও তাকে একটু ছুটি তো দিতে হবে। শিশুটিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে গেলে গৃহকর্মীকে ঠিকঠাক সুরক্ষা দিতে হবে। করোনার চরম দুর্বিপাকে তা আরও বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা অন্যতম অপরিহার্য বিষয় হয়ে সামনে দাঁড়াচ্ছে। আধুনিক শিল্পায়নের যুগে কর্মজীবী মায়েরা তাদের শিশুর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন যথার্থ সেবা প্রদানকারী কর্মীকে নিয়োগ দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে যায়। অনেক সময় ভাল মেয়ে পেয়ে যাওয়াও এক প্রকার ভাগ্য। সারা দিন যার ওপর নির্ভর করে শিশুটিকে রেখে আসা সেটা যে কত বড় ঝুঁকি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনাকাক্সিক্ষত বিপন্নতাও পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে দেয়।
অসতর্কতা কিংবা অসাবধানে শিশুটির ওপর অনেক বিপদ-আপদ ভর করে। যেটা বিভিন্ন সময় মায়ের ক্ষেত্রেও হয়ে যায়। তার পরেও বিবেচনায় রাখা সঙ্গত যে হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোন দুর্ভোগ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে না ঘটে তা হলে পরিস্থিতি সামলে নেয়াটাও যৌক্তিক। কারণ এমন সব গৃহকর্মীর ওপর আস্থা রেখেই কর্মজীবী মাকে ঘর থেকে বাইরে পা রাখতে হয়।
অপরাজিতা প্রতিবেদক
শীর্ষ সংবাদ: