ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিউলী আহমেদ

প্রযুক্তির বিশ্বে সাফল্য গাথা

প্রকাশিত: ০০:৪৫, ১৯ এপ্রিল ২০২২

প্রযুক্তির বিশ্বে সাফল্য গাথা

‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ কবি নজরুলের এই কথাগুলো এক সময় শুধু গল্প-কবিতায়ই পাওয়া যেত। বস্তবে তা কেউ স্বীকার করত না। সময় বদলেছে। মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে এখন যেমন সংসার সামলাচ্ছে। তেমনি বিভিন্ন অফিস-আদালতেও কাজ করছে। শুধু তাই না। পুরো দস্তুর সংসারি মেয়েরাও এখন নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার কথা ভাবছে। আর এই সুপ্ত ইচ্ছেগুলো বাস্তবায়ন করতে তাদের জন্য স্বপ্নের দ্বার খুলে দিয়েছে ইন্টারনেট। অনলাইনে ব্যবসা করে এখন অনেক মেয়েরাই স্বাবলম্বী। সংসারেও সময় দিচ্ছে। বাড়তি কিছু আয়ও হচ্ছে। তেমনি একজন নুসরাত জাহান ইমা। নামটা উচ্চারণ করলেই আমার কানে ভেসে আসে কিশোরী এক মেয়ের খিলখিল হাসি। ওর হাস্যোজ্জ্বল মুখটা সবকিছুতেই যেন বলেছেÑ ধূর, এটা কোন ব্যাপার! স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়Ñ প্রতিটা স্তরে প্রথম। ইডেন থেকে ‘ফাইন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং’ এ অনার্স-মাস্টার্স করা ইমা প্রাণশক্তিতে ভরপুর, পূর্ণ উদ্যমী একজন মানুষ। আর দশটা মেয়ের মতোই পড়াশোনা শেষে ভাল চাকরি করার পরিকল্পনা ছিল ইমার। অনার্স শেষ হতেই বেশ ভাল একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে জবও হয়ে যায়। ২ বছর পর আরও ভাল প্রতিষ্ঠানে চলে যায়। কিন্তু খুব আইডেন্টি ক্রাইসিসে ভুগছিল ইমা। জেন্ডার ডেস্ক্রিমিনেশন ছিল সেখানে চূড়ান্ত পর্যায়ের। নিজের আর পরিবারের জন্য সময়ও হচ্ছিল না। ইমা বলে, ‘২০১৭’র ডিসেম্বরে বিয়ে হয়ে যাবার পর ভালমতো ফিল করলাম, নিজের মতো স্বাধীনভাবে কিছু করা দরকার। এরপর চাকরিরত অবস্থাতেই ২০১৯-এর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করি ‘বিবির সিন্দুক’ নামে আমার অনলাইন পেজ।’ ইমা প্রথমে নিজের করা ডিজাইনের মেটালের গহনা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। আর এ সময় সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট দিয়েছিল তার হাজবেন্ড। অল্প কয়েক মাসে ‘বিবির সিন্দুক’ এর রেসপন্স ছিল অসম্ভব ভাল। ২০২০ এর মার্চে করোনা শুরুর প্রাক্কালে কিছুটা রিস্ক নিয়েই জবটা ছেড়ে দেয় ইমা। তার মতে, ‘এই করোনাকালীন সময় আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে সার্ভাইব করতে হয়, রিস্ক নিতে হয়। সেদিন চাকরি না ছাড়ল হয়ত ‘বিবির সিন্দুক’ আজ এ পর্যন্ত আসত না।’ বিবির সিন্দুকের মূল পণ্য এখন ঢাকাই জামদানি। সঙ্গে আছে নিজস্ব নকশায় তৈরি মেটালের গহনা, দেশী টাঙ্গাইল শাড়ি। আর সাম্প্রতিককালে যুক্ত হয়েছে ইন্ডিয়ান ট্রেডিশনাল শাড়ি। প্রত্যেক ধরনের ঐতিহ্যবাহী শাড়ির পেছনের কিছু গল্প আছে, আছে শত বর্ষের ইতিহাস, আছে নানারকম লোক কাহিনী। এসব নিয়ে পড়তে, ইতিহাস খুঁজে বের করে সেসব সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ইমার রয়েছে আলাদা দুর্বলতা। পাশাপাশি তার পেজে শাড়ি ও গহনা কিভাবে যতেœ রাখতে হয় সেই সম্পর্কেও সবাইকে অবগত করে। ঈদসহ বিশেষ উৎসবে থাকে বিশেষ আয়োজন। একজন ফুলটাইম চাকরিজীবী থেকে মুক্ত ব্যবসায়ী হওয়ার চ্যালেঞ্জ অনেক। প্রায় আড়াই বছর পার হয়ে গেলেও এখনও পরিবার, বন্ধু-বান্ধবসহ সব জায়গা থেকেই প্রতি নিয়ত জবাবদিহি করতে হয়Ñ কেন উদ্যোক্তা হওয়ার পথ বেছে নিলাম? তার মতে, ‘আয় আগের থেকে অনেক কমে গেলেও এখন আমি স্বাধীন। নিজের ক্রিয়েটিভ চিন্তাগুলোকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জন্য পোশাক আর গহনা তৈরি করছি। ৯টা-৫টার গৎবাঁধা রুটিনমাফিক কাজ থেকে নিষ্কৃতি নিয়ে, কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়ার সুযোগটাও এই ব্যবসা থেকেই শুরু করেছি।’ ইমার মতো অনেক মেয়েরাই এখন ঘর সামলে অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছে। তবে সবার যাত্রাটা ইমার মতো সহজ নয়। কাউকে পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গিয়েও পথ চলতে হয়। নারীরা এখন অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তৃপ্তি নিয়ে সংসারে পুরুষদের পাশে দাঁড়াতে পারছে। পরিবারের সদস্যদের উচিত তাদের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। তাদের সুপ্ত স্বপ্নগুলোও তাহলে পাখা মেলবে মুক্ত আকাশে।
×