ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

উজানের ঢলে বাঁধ ভেঙ্গে হাওড়ে ঢুকছে পানি লাখাইয়ে শতাধিক হেক্টরের বোরো ধান তলিয়ে গেছে

শতাধিক বাঁধ হুমকিতে

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ১৯ এপ্রিল ২০২২

শতাধিক বাঁধ হুমকিতে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ উজানের ঢলে ঝুঁকিতে পড়েছে হাওড়াঞ্চলের বাঁধ। সুনামগঞ্জের শতাধিক বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। দিরাইয়ে বাঁধ ভেঙ্গে হুরামন্দিরা হাওড়ে পানি ঢুকছে। ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। এদিকে নেত্রকোনার ধনু নদীতে পানি যত বাড়ছে, ফসল রক্ষা বাঁধ ততই হুমকিতে পড়ছে। নদী উপচে হাওড়ের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে পানি। আর হবিগঞ্জের লাখাইয়ে তিনটি হাওড়ের শতাধিক হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ফলে আধাপাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। কিশোরগঞ্জে হাওড়ের সবকটি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এতে ফের ফসলহানির আশঙ্কা করছেন কৃষক। খবর নিজস্ব সংবাদদাতাদের। সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বাঁধ ভেঙ্গে হুরামন্দিরা হাওড়ে পানি প্রবেশ করছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে সকল হাওড় হুমকিতে থাকবে। উপজেলার জগদল ইউনিয়নের হুরামন্দিরা হাওড়ের সাতবিলা স্লুইসগেট এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে হাওড়ে পানি প্রবেশ করে রবিবার রাতে। এদিকে পাহাড়ী ঢলে হাওড়ে পানি ছুঁই ছুঁই করছে। যে কোন সময় যে কোন বাঁধ ভেঙ্গে হাওড় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে প্রশাসন ও পাউবো। তাই জনসাধারণসহ সবাইকে আগামী ২৪ ঘণ্টা হাওড়ের বাঁধ রক্ষায় পাহারা দেয়ার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন। জেলার নদ নদীর পানি বৃদ্ধিতে হুমকির মুখে শতাধিক বাঁধ, ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকগণ। গত তিনদিন জেলার প্রধান নদ-নদীর অন্যতম সুরমা, যাদুকাটা, পাটলাই নদীর পানি দ্রুতই বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্তর ওপারে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি এবং ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে হাওড়ের ফসল আবারও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এর আগে রবিবার ভোর থেকেই তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওড়ের বর্ধিত গুরমার হাওড়ের বাঁধ উপচে ও পানি ঢুকছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে খাওয়াজুরি, নোয়াল, আইন্নাকলমা, গলগলিয়া, শনি ও মাটিয়ান হাওড় থাকবে খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার, কাছিরগাতি, খাই হাওড়, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওড়, হালির হাওড়, মিনি-পাগনার হাওড়ের ক্লোজারগুলো। এদিকে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে সোমবার বোগলা খাল, নান্টুখালি ক্লোজার দিয়ে পানি চুইয়ে প্রবেশ করছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন, সুরমা নদীর পানি ৫.৯৬ মিটারে আছে অর্থাৎ বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বাইছে। সোমবার সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ সেন্টিমিটার। সীমান্তনদী জাদুকাটার ২৩ সেন্টিমিটার, পাঠলাই নদীতে ৪৩ সেন্টিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পাহাড়ী ঢলে বাঁধে ফাটল ও ধসে পড়ায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা বোরো ফসলের ১৭ হাওড় ডুবে অন্তত ২০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। উল্লেখ্য, বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন ইতোমধ্যে। এই কমিটি আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে রিপোর্ট দেবে বলে জানিয়েছে তিনি। এদিকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকেও ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও তদন্ত কাজ শুরু করেছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত দল ধর্মাপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওড়ের বাঁধসহ বিভিন্ন হওড়ের বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। তদন্তে আসা ওই কমিটির সদস্যরা চন্দ্র সোনার থাল হাওড় পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য বলেন, হাওড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন বাঁধ আমরা পরিদর্শন করছি। আমরা স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা বোঝার চেষ্টা করেছি কেন এই অসময়ে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলো। তদন্তর স্বার্থে সব কিছু বলা যাবে না। আমরা যা পাবও তাই তদন্তপ্রতিবেদনে উঠে আসবে। তদন্তে কারও অনিয়মের সংশ্লিষ্টতা পেলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লিখব। আমরা যত দ্রুত সম্ভব তদন্তপ্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেব। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্তকমিটির প্রধান করা হয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা সালমা জাফরীনকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহা পরিচালক মাহববুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এনায়েত উল্লাহ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোবাশশেরুল ইসলাম, সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার উল হালিম। প্রসঙ্গত সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার ৫২টি হাওড়ের ৭২৭টি পিআইসি’র মাধ্যমে ১৩৫টি ক্লোজারসহ মোট ৫৩২ কিলোমিটার কাজ হয়েছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে এ পর্যন্ত (সোমবার বিকেল) ৫ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে যা আবাদি জমির ৩২ শতাংশ ধান কর্তন হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোমের দাবি। সুনামগঞ্জে এ বছর ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছে। নেত্রকোনা ॥ উজানের পাহাড়ী ঢলে ধনু নদীর পানি যত বাড়ছে, জেলার হাওড়াঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধগুলো তত বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছে। একেক সময় একেক জায়গায় দেখা দিচ্ছে নতুন নতুন ফাটল। আর তা মেরামত করতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় কৃষকদের। সোমবার বিকেলের সর্বশেষ পরিমাপে দেখা গেছে, ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী উপচে হাওড়ের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে পানি। এদিকে খালিয়াজুরীর কীর্তনখোলার পর নগর ইউনিয়নের পাইয়ার বাঁধেও বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। রবিবার রাতে বাঁধটির ১৫-২০ ফুট জায়গাজুড়ে ফাটল দেখা দেয়। রাত থেকেই উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় স্থানীয় কৃষকরা বাঁশ, চাটাই প্রভৃতি দিয়ে বাঁধটি মেরামতের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। একই চেষ্টা চলছে কীর্তনখোলা বাঁধেও। খালিয়াজুরীর পুরানহাটি গ্রামের মহসিন মিয়া জানান, পাইয়ার বাঁধ ভেঙ্গে গেলে পাইয়া, বড় পাইয়া, বড়বন্দ, শিবপুর, চাতল প্রভৃতি হাওড় তলিয়ে যাবে। পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার কয়েকটি হাওড়েও ছড়িয়ে পড়বে পানি। এদিকে নদীর পানি যত বাড়ছে, তত বেশি বাড়ছে কৃষকদের আতঙ্ক। ধান পাকার আগেই কাঁচা ধান কেটে খোরাকি জেগারের চেষ্টা করছেন তারা। কিন্তু কাঁচা ধান কেটে খুব একটা লাভ হচ্ছে না কারও। কারণ অপুষ্ট ধানের বেশিরভাগই চিটা হয়ে যাচ্ছে। উদয়পুর গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষক প্রান্তোষ সামন্ত বলেন, ঠিকমতো ধান পাকতে আরও অন্তত ৭ থেকে ১০ দিন দরকার। কিন্তু সে সময় পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই নিরুপায়ে অনেকে কাঁচা ধান কেটে ফেলছেন। আর এতে ক্ষতি যা হওয়ার হয়েই যাচ্ছে। খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, এ বছর এ উপজেলার ২০ হাজার ১শ’ ২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে ৬৫ ভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। তবে কৃষিবিভাগের এ হিসাবটি মনগড়া বলে দাবি করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। জাহেরপুর গ্রামের কৃষক আলী নেওয়াজ ও কুড়িহাটির ফখরুদ্দিন বলেন, ব্রি-২৯ বা হাইব্রিড ধান এখনও সম্পূর্ণ কাঁচা। তাই এসব জমিতে কাঁচি ধরার প্রশ্নই আসে না। শুধুমাত্র ব্রি-২৮ ধান কাটা হচ্ছে। এসব চিত্র শুধু খালিয়াজুরীরই নয়। পার্শ্ববর্তী মোহনগঞ্জ এবং মদন উপজেলার হাওড়গুলোর চিত্রও হুবহু। সেখানেও বাড়ছে পানি। ঝুঁকির মুখে আছে বহু বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেন, ‘বাঁধগুলোতে আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। যেখানেই ফাটল দেখা দিচ্ছে, সেখানেই দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোন বাঁধ এখনও ভাঙ্গেনি।’ এদিকে বিএডিসির চেয়ারম্যান এএফএম হায়াতুল্লাহ মোহনগঞ্জের বড়ান্তর এলাকার ৬ কিলোমিটার বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি কৃষকদের বলেন, বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আমরা তা মেরামত করে রাখব, যাতে কোন অবস্থায়ই হাওড়ে পানি ঢুকতে না পারে। তাছাড়া এটির বিপরীত পাশেও আরেকটি বিকল্প বাঁধ তৈরি করা হবে। ঢেউ ঠেকানোর জন্য স্থানীয় প্রযুক্তিকেও কাজে লাগানো হবে। হবিগঞ্জ ॥ কালনী ও মেঘনা নদীর পানি প্রবেশ করে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলায় ৩টি হাওড়ের শতাধিক হেক্টর বোরো ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানি বাড়তে থাকলে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর বোরো ক্ষেত তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কৃষকরা আধাপাকা ধানই কাটা শুরু করেছেন। উপজেলার এক নম্বর লাখাই ইউনিয়নে অবস্থিত মেঘনা ও কালনী নদী সরাসরি হাওড়ের সঙ্গে যুক্ত। ফসল রক্ষা বাঁধ না থাকায় গত দুইদিন ধরে নদীর পানি হাওড়ে প্রবেশ করছে। এতে ইউনিয়নটির শিবপুর, সুজনপুর ও বারচর হাওড়ের শতাধিক হেক্টর জমির আধাপাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাখাইয়ে এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ২০০ হেক্টরে। এর মধ্যে শুধু লাখাই ইউনিয়নে হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ হেক্টরে। কিছু জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান প্রায় ৬০ শতাংশ পেকেছে। তবে বেশিরভাগ জমির ধান অর্ধেকও পাকেনি। হাওড়গুলোতে এখন ধানের শীষ ডুবুডুবু অবস্থায়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, ৭০ হেক্টর বোরো জমি পুরোপুরিভাবে তলিয়ে গেছে। তারা তালিকা করছেন। আগামী দুই দিন এভাবে পানি বাড়লে কমপক্ষে আরও ৫০০ হেক্টর জমি তলিয়ে যাবে। তিনি আরও জানান, হাওড়ের সঙ্গে নদী সরাসরি যুক্ত হওয়ায় পানি বেশি ঢুকছে। হাওড়ের কিছু ক্ষেতের ধান প্রায় ৬০ শতাংশ পেকেছে। অনেক স্থানে অর্ধেকও পাকেনি। এ অবস্থায় কৃষকরা প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির আধাপাকা ধান ঘরে তুলেছেন। বাকি ২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমি তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে। তবে কিছু ধান কাঁচা থাকতেই কৃষকদের কাটার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অনেকে তা করছেনও। লাখাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ শরীফ উদ্দিন বলেন, লাখাই ইউনিয়নের বোরো জমিগুলো তুলনামূলক নিচু। পরিদর্শনে দেখেছি ধানক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে যায় যায় অবস্থায়। এ অবস্থায় দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিশোরগঞ্জ ॥ ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টি হওয়ায় জেলার বিস্তীর্ণ হাওড়াঞ্চলের নদীগুলোতে পাহাড়ী ঢলে আবারও পানি বাড়ছে। বর্তমানে হাওড়ের সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এ অবস্থায় ফসলহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসন কৃষকদের সর্বাধিক অগ্রাধিকারসহকারে যত দ্রুত সম্ভব ধান কেটে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কালনী-কুশিয়ারা নদী পানি ৫৩ সেন্টিমিটার, ধনু নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার, মেঘনা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার ও বৌলাই নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এছাড়া বৌলাই নদীর পানি কালিয়াজুড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পাউবো সূত্র জানায়। ইটনা উপজেলার ধনু নদীর পানি বিপথসীমার কাছাকাছি অবস্থান করায় হুমকির মুখে পড়েছে জিওলের বাঁধ। এর পাশেই আরও একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে পাউবো। এছাড়া করিমগঞ্জের চামটাঘাট স্টেশনে ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কোথা কোন স্থানে যদি ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দেয় অথবা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তবে দ্রুত সম্ভব স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের অবহিতের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়ায় বর্তমানে ধান কাটায় ব্যস্ত হাওড়াঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক। পানি বাড়তে থাকায় দ্বিতীয় দফায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় কাঁচা-পাকা ধান কেটে ফেলছেন তারা। ইতোমধ্যে জেলার হাওড়াঞ্চলের প্রায় ৩০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। ধনপুর গ্রামের কৃষক আসাদুল হক জানান, পানি আবার বাড়তেছে। তাই কাঁচা-পাকা ধান আগা থেকে কেটে আনতেছি। আবার যদি পানি বাড়ে, তাই আমার শেষ হয়ে যাব। কৃষক ইন্নছ আলী জানান, পানি বাড়ায় প্রশাসনের লোকজন এলাকায় মাইকিং করতেছে। আমারও কাঁচা-পাকা ধান কেটে ফেলতেছি। বছরের একটি মাত্র ফসল দিয়ে চলে হাওড়ের মানুষের সারা বছরের জীবন-যাপন। ভালোয় ভালোয় ফসল ঘরে না উঠলে তাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। আগাম বন্যার হাত থেকে ফসল বাঁচাতে জেলার হাওড়াঞ্চল ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় ৭৩টি ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এ বাঁধ নির্মাণে উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ। ফলে যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে হাওড়ে পানি ঢোকার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, সময় মতো বাঁধগুলো মেরামত না করায় বেশকটি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে এগুলো মেরামতের কাজ চলছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ছাইফুল আলম গণমাধ্যমে জানান, পানি বাড়তে থাকায় কৃষকদের ধান ৭০ ভাগ পাকলেই কেটে ফেলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ধান কাটার জন্য পর্যাপ্ত কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে হাওড়ের ৩০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। সপ্তাহ খানেক সময় পেলে সব ধান কেটে ফেলা যাবে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান গণমাধ্যমে জানান, ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করায় আগাম বন্যার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে গণমাধ্যমে জানান, ফসল রক্ষা বাঁধগুলো এখনও অক্ষত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো মেরামত করা হয়েছে। এছাড়া ফসলডুবিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। প্রসঙ্গত জেলার ১৩টি উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওড়াঞ্চলেই ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তবে দুই সপ্তাহ আগে উজানের ঢলে প্রায় সাড়ে ৬০০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়। অনেক কৃষক জমির কোন ধানই কাটতে পারেননি। অনেকে পানির নিচ থেকে আধপাকা ধান কেটেছেন।
×