ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব মঞ্চে প্রথম তারা

প্রকাশিত: ০০:২৫, ২০ অক্টোবর ২০২১

বিশ্ব মঞ্চে প্রথম তারা

শুরু হয়ে গেল আরও একটি বিশ্বকাপ। চার-ছক্কার ধুন্ধুমার ফরম্যাট। মরুর বুকে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। আগামী ২৩ তারিখ থেকে শুরু হবে সুপার টুয়েলভের লড়াই। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল গঠন করা হয়েছে তারুণ্যনির্ভর। বিশ্বমঞ্চে প্রথমবার খেলার জন্য ডাক পেয়েছেন তরুণ প্রতিভাবান ৮ ক্রিকেটার। ১৫ জনের দলে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ৮ ক্রিকেটার খেলার সুযোগ পেলেও চমক ছিল না তেমন। কেননা, সম্প্রতি জিম্বাবুইয়ে, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা দল থেকেই যে নির্বাচকরা বেছে নিয়েছেন বিশ্বকাপ স্কোয়াড। বিশ্বকাপ মানেই স্বপ্ন। যে কোন খেলোয়াড়ের কাছেই তা পরম সাধনার বিষয়। আর প্রথমবারের মতো স্বপ্নের এই টি-২০ বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়া ৮ তরুণ ক্রিকেটার হলেন- লিটন কুমার দাস, নাঈম শেখ, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন, শেখ মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শরিফুল ইসলাম এবং নাসুম আহমেদ। স্ট্যান্ডবাই হিসেবে সুযোগ পাওয়া আমিনুল ইসলাম বিপ্লবও ছিলেন প্রথমবার বিশ্বকাপ দলের সঙ্গী। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই যে শেষ হয়ে যায় তার স্বপ্ন। গত সপ্তাহেই দেশে ফিরে এসেছেন তরুণ প্রতিভাবান এই লেগ স্পিনার। অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবেই ওমানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিপ্লবকে। কিন্তু দলে তার ‘প্রয়োজন’ ফুরিয়ে যাওয়ার কারণেই অন্য দলগুলো যখন এক থেকে দুজন লেগ স্পিনার সঙ্গে নিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে তখন দলের সঙ্গে যাওয়া এই একমাত্র লেগ স্পিনারকেই ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। আর টিম ম্যানেজমেন্ট বিপ্লবকে দেশে ফেরত পাঠানোর পেছনে যুক্তি দেখিয়েছে, খেলার সুযোগ করে দিতেই তাকে দেশে পাঠানো হয়েছে। বিশ্বকাপের মঞ্চে পা রাখার আগে সা¤প্রতিক সময়ে খুব ভাল ফর্মে ছিলেন না লিটন দাস। তারপরও পরীক্ষিত ব্যাটসম্যানের ট্যাগ লাগানো তার গায়ে। ৩৭ ম্যাচে ১৩০.৭৮ স্টাইক রেটে ২০.০২ গড়ে লিটনের রান ছিল ৭০১। আছে চারটি হাফসেঞ্চুরি। লিটনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি ম্যাচেই ওপেনিংয়ে ব্যাট করেছেন নাঈম শেখ। ২১ ম্যাচে ২ হাফসেঞ্চুরিতে তার রান ৫৪৭। যদিও স্ট্রাইক রেট ১০৫.৮০। জিম্বাবুইয়ে ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বেশ কয়েকটি ম্যাচ জিততে ভূমিকা রেখেছিলেন আফিফ হোসেন। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও ভূমিকা রাখার যোগ্যতা রাখেন এই অলরাউন্ডার। কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে ২৭ ম্যাচে ১২০.৪৪ স্ট্রাইক রেটে আফিফের রান ৩২৪। হাফসেঞ্চুরি আছে একটি। মেহেদী যেকোনও পজিশনে ব্যাটিং করতে পারেন, বোলিংয়ের ক্ষেত্রে ¯øগ ওভার, পাওয়ার প্লে, মিডল- সবখানেই পারদর্শী। ১৮ ম্যাচে ১২০ রানের পাশাপাশি ১৫ উইকেট নিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। ২৫ টি-টোয়েন্টিতে ১০৬.৮৩ গড়ে সাইফের রান ১৭২। বোলিংয়ে নিয়েছেন ২৬ উইকেট। সা¤প্রতিক সময়ে দারুণ ফর্মে আছেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম। ১৩ ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ১৭। এছাড়া যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের দুই ক্রিকেটার শামীম ও শরিফুল আছেন বিশ্বকাপ দলে। শরিফুল জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই দারুণ বল করে চলেছেন। মুস্তাফিজুর রহমান-সাইফ উদ্দিনের কারণে একাদশে নিয়মিত সুযোগ হচ্ছে না তার। তারপরও যখন সুযোগ পাচ্ছেন, নিজের সেরাটা দিচ্ছেন। ১০ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়েছেন শরিফুল। এই পেসারের মতো শামীমও প্রথমবার বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছেন। গত জিম্বাবুইয়ে সিরিজে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক। অভিষেক সিরিজে নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছেন এই তরুণ। আর তাতেই বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করে নিলেন তিনি। ৬ ম্যাচে ১৫৫.৫৫ স্টাইক রেটে তার রান ৭০। এবারের বিশ্বকাপ থেকে আগেভাগেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের হার্ড-হিটার ওপেনার তামিম ইকবাল। এছাড়া অভিজ্ঞ তিন ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসানম আর মুশফিকুর রহিম অনুমিতভাবেই দলে রয়েছেন। এর আগে হয়ে যাওয়া টি-২০ বিশ্বকাপের ছয়টি আসরেই অংশ নিয়েছেন তারা। তাছাড়া একটি করে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে সৌম্য সরকার, নুরুল হাসান সোহান, মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের। ভারতে অনুষ্ঠিত ২০১৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে খেলেছেন তারা। অন্যদিকে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে দলে থাকা রুবেল হোসেন তিনটি (২০০৯, ২০১০, ২০১৪) বিশ্বকাপ খেলেছেন। গত রবিবার পর্দা উঠেছে এবারের আসরের। বাংলাদেশ দলের টি২০ বিশ^কাপ মিশনও শুরু হয়েছে এদিন। তবে শুরুটা হয়েছে হতাশাজনক হারে। প্রাথমিক রাউন্ডের ‘বি’ গ্রæপে ওমানের মাটিতে স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে যায় টাইগাররা। এর ফলে স্কটিশ দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়েই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সূচনা ঘটে। প্রথম রাউন্ডে ‘বি’ গ্রæপের ম্যাচে আইসিসি সহযোগী স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হেরে যায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। স্কটিশদের কাছে হারলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন ডানহাতি অফস্পিনার শেখ মেহেদি হাসান। বাংলাদেশের বোলারদের চেপে ধরেছিলেন ব্যাটার জর্জ মুনসে ও ম্যাথু ক্রস। আর একই ওভারে দুজনকেই আউট করে টাইগার শিবিরে স্বস্তি ফেরান এই মেহেদি। পরে আরেকটি উইকেট শিকার করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নিজের চার ওভারে মাত্র ১৯ রান খরচায় শেখ মেহেদি শিকার করেন ৩ উইকেট। প্রায় তিন বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটাই তার সেরা বোলিং। তাও আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে। ২০১৮ সালের ফেব্রæয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেকের পর এই বিশ্বকাপ শুরুর আগ পর্যন্ত ১৮ ম্যাচ খেলেছিলেন মেহেদি। যেখানে তার ঝুলিতে ছিল ১৫ উইকেট। তার সেরা বোলিং ফিগার ছিল সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ রানে ২ উইকেট। ক্যারিয়ারে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে নেমে নিজের আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন মেহেদি। বি গ্রæপে স্কটল্যান্ড ছাড়া বাংলাদেশের বাকি দুই প্রতিপক্ষ পাপুয়া নিউগিনি এবং ওমান।
×