ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পিয়াসার লিভ টুগেদার আর বিয়ে বাণিজ্যের কৌশল ছিল মৌয়ের

প্রকাশিত: ২২:০০, ৫ আগস্ট ২০২১

পিয়াসার লিভ টুগেদার আর বিয়ে বাণিজ্যের কৌশল ছিল মৌয়ের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর শীর্ষ পেশাদার অপরাধীদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল পিয়াসার। অপরাধ জগতের অন্তত এক ডজন যুবকের সঙ্গে তার বিভিন্ন ইভেন্টে অবাধে বিচরণ করতে দেখা গেছে। এমনকি তাকে ফেসবুকে অত্যাধুনিক উজি অস্ত্র হাতে দেখা গেছে। বুধবার তার অস্ত্র ব্যবসার পার্টনার মিশু হাসান ও অপর একজনকে গ্রেফতার করার পর এ ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পিয়াসার অপর পার্টনার মরিয়ম আক্তার মৌয়েরও অবাধ যৌনাচার, দেহ ব্যবসা, মাদক কারবারের পর্যাপ্ত প্রমাণাদি পেয়েছে গোয়েন্দারা। মৌ এ পর্যন্ত কমপক্ষে এগারোটি বিয়ে করেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে ডিবি পুলিশ। রিমান্ডে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসছে। ডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, পিয়াসার নজর যার ওপর পড়ত তাকেই সে কাবু করত। হোক তিনি বিত্তবান কোন ব্যবসায়ী বা কোন সুন্দরী তরুণী। তাদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পরই ঘনিষ্ঠতা গড়ে সুযোগমতো কাজে লাগাতো। মিশু হাসানের সঙ্গে এভাবেই পরিচয় হয় একজন তরুণীকে দিয়ে। পরে নিজেই মিশুর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন অস্ত্র ব্যবসায়। পিয়াসা যখন শুধু একের পর বয়ফ্রেন্ড নিয়ে লিভ টুগেদার করত- তখন বিয়ে বাণিজ্যের কৌশল গ্রহণ করে মৌ। একের পর এক বিত্তবানদের বিয়ে করে কিছুদিন সংসার করার নামে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা স্বর্ণালঙ্কার ও গাড়ি। এভাবে তিনি অন্তত ১১টি বিয়ে করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। আর সেসব স্বামীদের কাছ থেকে হাতিয়েছেন অঢেল সম্পদ। মাদক মামলায় গ্রেফতারের পর মডেল মৌয়ের সঙ্গে ভিআইপিদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছে ডিবি। একই সঙ্গে অঢেল সম্পদের উৎস খুঁজে দেখছেন তারা। এ জন্য তার বাসার সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ডিবি জানায়- মৌ ১১টি বিয়ে করেছেন। তার সর্বশেষ স্বামী একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। ধনাঢ্যদের ফাঁদে ফেলে তিনি বিয়ে করতেন। বিপুল পরিমাণ সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার পর আরেকজনের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসতেন। রবিবার রাতে আরেক মডেল পিয়াসার দেয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয় মডেল মৌ আক্তারকে। দৃশ্যমান কোন আয়ের উৎস না থাকলেও মোহাম্মদপুরে পাঁচতলা আলিশান বাড়ি রয়েছে তার। নেক্সাস, পাজেরো ও টয়োটা ব্র্যান্ডের তিনটি দামী গাড়িও আছে। মৌ মডেলিং পেশার আড়ালে ব্ল্যাকমেলিং করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন। মাদক ও অনৈতিক ব্যবসায় তার সংশ্লিষ্টতার কিছু প্রমাণ ইতোমধ্যে গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। ডিবি পুলিশ জানতে পেরেছে, মৌয়ের নিয়ন্ত্রণে অর্ধশত সুন্দরী তরুণী রয়েছে। তাদের দিয়েই ধনী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে ভিডিও ধারণ করতেন। টাকা না দিলে ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিতেন। এভাবে অনেকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব সম্পদের উৎস এবং বিয়ে ও ব্ল্যাকমেলের বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি মৌ। এদিকে র‌্যাব জানিয়েছে, গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক ‘কর্মকা- সম্পর্কে জানা যায়। র‌্যাব বর্ণিত বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। তারই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর অভিযানে গত মঙ্গলবার বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ধরা হয় শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান (৩১) ও তার সহযোগী মাসুদুল ইসলামকে। মিশুর পিতার নাম নেয়ামত উল্যা। বাড়ি মাইজদী। মোঃ মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান (৩৯) এর পিতা মোঃ রফিকুল ইসলাম। বাড়ি পাবনার শালগাড়িয়ায়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অস্ত্র, গোলাবারুদ, ইয়াবা, ১টি ফেরারি গাড়ি, সিসার সরঞ্জামাদি, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও এটিএম কার্ড, পাসপোর্ট এবং ভারতীয় জালমুদ্রা ৫০ হাজার। এ সম্পর্কে র‌্যাব পরিচালক আল মঈন বলেন, তারা দুজনেই একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এই চক্রের সদস্য প্রায় ১০/১২ জন। তারা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকা বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকা-ের ব্যবস্থা করে থাকে। পার্টিতে তারা অংশগ্রহণকারীদের নিকট হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকে। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করত। এছাড়া বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করত। একইভাবে উচ্চবিত্তের প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টির আয়োজন করত। তারা ক্লায়েন্টদের গোপন ছবি ধারণ করে অপব্যবহার করত বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের চাহিদা ও পছন্দের গুরুত্ব দিয়ে পার্টিসমূহ আয়োজন করত। গ্রেফতারকৃতরা তাদের এই অবৈধ আয় হতে অর্থ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় (গাড়ির ব্যবসা, আমদানি ও গরুর ফার্ম ইত্যাদি) বিনিয়োগ করেছে। এই ব্যবসায় তাদের গ্রুপের সদস্যদের অবৈধ আয়েরও বিনিয়োগ রয়েছে। বর্ণিত ব্যবসায় অবৈধ অর্থের জোগানদাতাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছে। গ্রেফতারকৃতদের ব্যবসায়িক কাঠামোতে অস্বচ্ছতা রয়েছে। র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান বাংলাদেশে নামী দামী ব্রান্ডের বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবসা করে থাকে। সে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিত বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। সে নিজেও দামী ব্রান্ডের গাড়ি ব্যবহার করত। তার ব্যক্তিগত ২টি রেঞ্চ রোভার, এ্যাকুয়া, ভক্সওয়াগন ও ফেরারিসহ ৫টি গাড়ি রয়েছে। সে অত্যন্ত সুকৌশলে গাড়ির ট্যাক্স জালিয়াতি করে থাকে। গ্রেফতারকৃত জিসানের এলাকায় একটি গরুর ফার্ম রয়েছে। যেখানে অবৈধ অনুমোদিত ব্রামান গরু লালন পালন করা হয়ে থাকে। গ্রেফতারকৃত শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ইতিপূর্বে বিভিন্ন মামলায় তিনবার গ্রেফতার হয়েছিল। তার নামে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার সঙ্গে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত অপরাধীর যোগসাজশ রয়েছে।
×