ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্যোক্তা হতে চান জবি শিক্ষার্থী হুমায়ুন

প্রকাশিত: ০০:২১, ১৮ এপ্রিল ২০২১

উদ্যোক্তা হতে চান জবি শিক্ষার্থী হুমায়ুন

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে কেউ বিসিএস ক্যাডার, ব্যাংকার, শিক্ষক ও সরকারী বড় পদে চাকরি করার জন্য মনস্থির করে। কিন্তু তিনি সেইগুলো পাশ কাটিয়ে একজন উদ্যোক্তা হতে চান। লিখেছেন- মোঃ মামুন শেখ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সবাই এক নামে তাকে চেনে। শিক্ষার্থীদের যে কোন বিপদে তিনি সকাল, দুপুর, রাত বলে কোন কথা নেই তিনি তাদের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। সারাদিন কাজ নিয়ে পড়ে থাকেন। নাওয়া-খাওয়া ভুলে যান। কাজটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি নেই। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সারাক্ষণ। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে যুক্ত থাকার কারণে ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। হুমায়ুন কবির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের একজন মেধাবী ছাত্র। পড়াশোনা, সংগঠন, উপস্থাপনা, ব্যবসা পরিচালনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে তিনি নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ক্যাম্পাসের প্রিয় হুমায়ুন ভাইয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট বড় সকলে তাকে এ নামেই ডাকে। পরিচয়ের শুরুটা সাংবাদিকতার মাধ্যমে। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার পর সেই পরিচিতিটা নিজ ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে পুরো দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়েছে। বিনয়ী, পরোপকারী ও বিভিন্ন প্রতিভার অধিকারী হওয়ায় সবার কাছে হুমায়ন একটি প্রিয় নাম, ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখ। সাংবাদিকতার বিষয়ে বিশদ ধারণা থাকায় বন্ধুরা তাকে ডাকেন ‘সাংবাদিক’ নামে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চেনা নাম, প্রিয়মুখ হিসেবে বেশ পরিচিত। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন দেশীয় বিভিন্ন অঙ্গনে। বর্তমানে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ইন্টেলিজেন্ট গ্রুপসহ অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অসহায় শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি, ল্যাব ফি, বিভাগ উন্নয়ন ফি প্রদান করে তাদের স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকেন। শুধু পড়াশোনা বা জনসেবা না, তার দক্ষতা দেখিয়েছেন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও। তিনি সবার কাছে একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবেও পরিচিত। ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হওয়ারও ইচ্ছা ও সাংবাদিকতা নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। নৈতিকতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা হওয়ারও ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তিনি। ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘নিজের একটা ইন্টেলিজেন্ট গ্রুপ আছে। সেইটাকে কাজে লাগিয়ে একজন দেশসেরা তরুণ উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে মেলে ধরতে চাই।’ তিনি ২০১২ সালে ইন্টেলিজেন্ট গ্রুপ নামে একটা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। যার মূল কাজ কম খচরে শিক্ষার্থীদের জন্য ডোমেস্টিক ও ইন্টারন্যাশনালী ট্যুরের ব্যবস্থা করা। এছাড়াও বিভিন্ন প্রোডাক্ট সুলভ মূল্যে বাজারে এনেছে তিনি। বর্তমানে সেখানে ১০০ জন ব্যক্তি কর্মরত রয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় সহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়,কলেজের বিভিন্ন বিভাগে ইন্টেলিজেন্ট গ্রুপের কর্মী আছে। জানা যায়, তিনি কক্সবাজার জেলার খরুলিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলহাজ ছুরত আলমও একজন বিশিষ্ট সফল ব্যবসায়ী ও এলাকার মাতব্বর হিসাবে পরিচিত। বাবার অনুপ্রেরণাই তার স্বপ্নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলা। তার মাতা মৃত, জাহানারা বেগম। আদর্শ এবং নৈতিকতার চর্চা তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। তিনি ছয় ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র ভাই। হুমায়ন কবির ২০০৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ ও এইচএসসি পরীক্ষায় একই বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে কৃতকার্য হন। তারপরে তিনি ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যনির্বাহী পদে, দফতর সম্পাদক, সেক্রেটারি এবং বর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার বিষয়ে হুমায়ুন কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, সাংবাদিকতার তাগিদ হৃদয় থেকে অনুভব করতে হয়। ইচ্ছা থাকতে হয়। প্রশংসার পাশাপাশি সহ্য করতে হয় অপমান, অপবাদ ও কটু কথা। আর ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় সেটা আরও বেশি পরিলক্ষিত হয়। আবার এই ক্যাম্পাস সাংবাদিকরাই পরিচিতি পান ক্যাম্পাস হিরো হিসেবে। বাধাবিপত্তি কাটিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে যারা সামনে এগোতে পারেন, তারাই সফল হন এ পেশায়।’ তিনি আরও বলেন, জবিসাস একটা আত্মার সংগঠন। যেখানে আমি অনেক কিছু শিখেছি, আমাকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে যাওয়ার, এই সংগঠন যুক্ত অনেক মানুষের উপকার করার সুযোগ হয়েছে, প্রতিটি মুহূর্তে নতুন কিছু শিখেছি, সমিতির সবাইকে নিজের পরিবারের সদস্য মনে করেছি, নিজের পরিবারের অভিভাবক হিসাবে ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করেছি, সবার সঙ্গে মিশে সিনিয়র আর জুনিয়র দূরুত্ব কমানোর চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে সবাইকে আপন করে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত আছি। অনেক বাধার সম্মুখীন তো হয়েছিই, যেটা ছাড়া সাংবাদিক জীবন অপূর্ণ। সর্বোপরি এসব সাময়িক হলেও যে ভালবাসাটুকু পেয়েছি, তাকে আঁকড়ে ধরে সামনে এগিয়ে যেতে চাই, এগিয়ে নিতে চাই প্রিয় সংগঠনকে।’ সদ্য ১৬তম বছরে পা দেয়া জবিসাসকে ভবিষ্যতে এক অনন্য উচ্চতায় দেখতে চান তিনি। তিনি আরও বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ব্যাবসায়িক কর্মকা-ে যুক্ত থাকা মানে কিছুটা হলেও সময়ের সঙ্গে মিলে জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানো। হুমায়ন কবিরের জীবনের লক্ষ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের একজন সফল ব্যবসায়ী ও উদ্যোগতা হতে চাই । এছাড়াও আত্মনির্ভরশীল হতে চাই এবং আত্মোন্নতি করার পাশাপাশি দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলময় কিছু করতে চাই। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক ঝাঁক স্বপ্নবাজ তরুণদের নিয়ে শুরু হয় তার ইন্টেলিজেন্ট গ্রুপের পথচলা। জানা যায়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীদের কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করা এবং দেশ-বিদেশের যে কোন জায়গায় কম খরচে ভ্রমণের সহায়তা করা। দেশে পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। পড়াশোনার পাশাপাশি বিশ্ব ভ্রমণ করার উৎসাহিত করা। সর্বোপরি দেশের মানুষের সহজে ভ্রমণের সেবা প্রদান করা এই তরুণদের মূল উদ্দেশ্য। বর্তমানে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলছে। ইতোমধ্যে তারা দেশের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, প্রযুক্তি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশে সব প্রতিষ্ঠানে তাদের ছাত্র প্রতিনিধি নিয়ে ভ্রমণের সকল সেবা-সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের ব্যাচ ট্যুর, গ্রুপ ট্যুর, পিকনিক, ডে ট্যুর, সাক ট্যুরসহ ছোট-বড় যে কোন ট্যুরের আয়োজন করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সপ্তাহে বা মাসে কমন ট্যুরের আয়োজন করেন তারা। যেটা শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক শিক্ষণীয় ও অনেকটা আনন্দায়ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিটি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিভিন্ন সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে সাহস যোগায়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত তিনি।
×