ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য ‘বিশেষ বৈশ্বিক উদ্যোগ’ দাবি নাগরিক সমাজের

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ১৮ এপ্রিল ২০২১

জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য ‘বিশেষ বৈশ্বিক উদ্যোগ’ দাবি নাগরিক সমাজের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানে অনুষ্ঠিতব্য লিডার্স সামিটে জলবায়ু তাড়িত বাস্তুচ্যুতদের জন্য বিশেষ বৈশ্বিক উদ্যোগের বিষয়টি তুলে ধরতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ। শনিবার ‘লিডার্স সামিট : নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তারা এই আহ্বান জানান। ভার্চুয়াল সেমিনারে নাগরিক নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একসময় জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য বৈশ্বিক উদ্যোগের কথা বলেছিলেন। এখন তার সামনে একটি রাজনৈতিক সুযোগ এসেছে। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত লিডার্স সামিটে যোগ দিচ্ছেন। এ সুযোগে বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কোস্ট ফাউন্ডেশন এবং স্থায়িত্বশীল পল্লী জীবন-জীবিকার জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল), ক্লিন-বিডি, বিআইপিএনইটি-সিসিবিডি, সিপিআরডি এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডঃ কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ এতে সভাপতিত্ব করেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। কোস্ট ফাউন্ডেশনের রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, জলবায়ু বিসিএএস এর নির্বাহী পরিচালক বিশেষজ্ঞ ডঃ আতিক রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত, প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব ডঃ মনজুরুল হান্নান খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, সিএসআরএলের জিয়াউল হক মুক্তা, সিপিআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুদ্দোহা, বিপনেট-সিসিবিডি’র মৃণাল কান্তি ত্রিপুরা, ক্লিন-বিডি’র হাসান মেহেদি এবং বাংলাদেশ ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে কোস্টের সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, জলবায়ু পরির্বতন মোকাবেলার আন্দোলনে বৈশ্বিক নেতৃত্ব নিতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে, যেমন-গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমণ হ্রাস করা, সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচীতে অর্থায়ন করতে হবে। মূল প্রবন্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরা হয়, যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কার্বন নিঃসরণ মাত্রা ২০১০ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করে জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্য শতাংশ হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রকে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে ৩ বিলয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে এবং সর্বোচ্চ বিপদাপন্ন দেশগুলোর অভিযোজন এবং প্রশমনের সহায়তার জন্য মেধাস্বত্ব শিথিল করতে হবে। ডঃ কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, যে ক্লাইমেট ভালনারেবল ন্যাশন ফোরাম (সিভিএফের) চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ আসন্ন এই শীর্ষ সম্মেলনে তার জলবায়ু বিপদাপন্নতার বিষয়গুলো তুলে ধরবে। এছাড়াও অতিবিপদাপন্ন দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের ক্ষেত্রে জিসিএফ’র দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে অভিযোজনের জন্য অর্থ ও প্রযুক্তি সহায়তার দাবি জানাতে হবে এবং আমাদের উচিত প্যারিস চুক্তির আওতায় অভিযোজন সম্পর্কিত আলোচনা প্রক্রিয়ায় ‘লস এ্যান্ড ড্যামেজ’ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একটি বহুপাক্ষিক উদ্যোগ নেয়ার সম্ভাবনা যাচাইয়ের অংশ হিসেবেই জো বাইডেন এই শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বড় কার্বন নির্গমণকারীদের জন্য আমাদের ১.৫ ডিগ্রী সীমা বেঁধে দিতে হবে এবং এই লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে পূরণের কর্মসূচী দিতে হবে। তিনি লক্ষ্যপূরণের জন্য উপযুক্ত শীর্ষ বছরের সময়সীমা নির্ধারণকেও গুরুত্ব দেন। ড. আইনুন নিশাত বলেন, প্যারিস চুক্তির আওতায় বাজার ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ হয়ত লাভবান হবে না। বরং অর্থায়ন এবং জলবায়ু অভিবাসনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসন বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। ডঃ আতিক রহমান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের শেষ চার বছরের ভূমিকা এবং কার্বন নিঃসরণ ভুলে গিয়ে শীর্ষ সম্মেলনের নামে লোক দেখানো আয়োজন করছে। জিয়াউল হক মুক্তা বলেন, জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা চাই। শামসুদ্দোহা এবং কাওসার আহমেদ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য সিভিএফকে একটি বিশেষ গ্রুপ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান । জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে অস্তিত্ব সঙ্কটের আশঙ্কা করেন ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারী এমপি। তিনি বলেন, এই বিষয়গুলো শীর্ষ সম্মেলনে তুলে ধরতে হবে। আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে তহবিল গঠন করা উচিত। হাসান মেহেদী মার্কিন বিনিয়োগকারীদের কার্বন নির্গমণ প্রকল্পে বিনিয়োগ বন্ধ করার জন্য জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান, কারণ যুক্তরাষ্ট্রেই বৈশ্বিক গ্রিন হাউস গ্যাসের ১১৭ গুণ বেশি নির্গত হয়। মনজুরুল হান্নান বলেন, কার্বন নিঃসরণ প্রকল্পের নামে নানা ধরনের ক্ষতিকর প্রকল্প উন্নত দেশগুলো এমভিসি দ্বারা বাস্তবায়ন করবে, যা গ্রহণ করা উচিত নয়। ধনীদেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জাতীয় লক্ষ্যমাত্র বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া উচিত।
×