ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঝর্ণাসহ দুই নারীকে খুঁজছে পুলিশ

আরেক বিনোদন সঙ্গিনীর সঙ্গে মামুনুলের ফোনালাপ ভাইরাল

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ১২ এপ্রিল ২০২১

আরেক বিনোদন সঙ্গিনীর সঙ্গে মামুনুলের ফোনালাপ ভাইরাল

শংকর কুমার দে ॥ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা ও আরও এক বিনোদন সঙ্গীসহ দুই নারীকে খুঁজছে পুলিশ। মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টি তার ব্যক্তিগত বিষয় বলে জানিয়েছেন হেফাজতের ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। শুধু তাই নয়, বাবু নগরী হুমকি দিয়েছেন যে, লকডাউনেও সরকার মাদ্রাসা বন্ধ করতে পারবে না। রাজধানীর রমনা থানায় নিরাপত্তা চেয়ে জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করেছে ঝর্ণার প্রথম স্বামীর ঘরের বড় ছেলে আবদুর রহমান জামি। রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ মামুনুলের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী ও আরও এক বিনোদন সঙ্গিনী নারী বলে পরিচিত যে দুই নারীকে খুঁজছে তার মধ্যে বিনোদন সঙ্গিনীর সঙ্গে ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে যাওয়ার পর থেকে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণাকে খুঁজে পাচ্ছেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন বড় ছেলে আব্দুর রহমান জামি। ঝর্ণা মামুনুল হকের সঙ্গে গত ৩ এপ্রিল নর্থ সার্কুলার রোডের বাড়িতে সাবলেট ভাড়া বাসা থেকে বের হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত আর বাসায় ফিরে আসেননি। গতকাল রবিবার পর্যন্ত ঝর্ণার হদিস পায়নি পুলিশ। এদিকে খোঁজ নিতে গিয়ে আরেক নারীর সঙ্গেও মামুনুলের যোগাযোগের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ওই নারীর বিষয়েও তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর একটি রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করার ঘটনা নিয়ে পরিস্থিতি ক্রমে ঘোলাটে হচ্ছে। সর্বশেষ জান্নাত আরা ঝর্ণার তিনটি ডায়েরি ফাঁসের পর তাদের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। এ পরিস্থিতিতে মামুনুলের বিষয়টি নিয়ে তদন্তকারীরা তার কথিত স্ত্রীকে খুঁজছেন। গত শুক্রবার মামুনুলের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে পরিচিতি পাওয়া ঝর্ণার ২০০ পৃষ্ঠার তিনটি ডায়েরি উদ্ধার হলে সেটি তার মায়ের বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ছেলে আব্দুর রহমান। ঝর্ণার ডায়েরিতে লেখা, ‘আমাকে বিয়ে না করেই গ্রিন রোডের একটি বাসায় রাখেন মামুনুল হক। আমাকে খরচের টাকাও দিতেন। কিন্তু বিয়ে করে স্ত্রী বানাননি। মামুনুল হক প্রায় দুই বছর আগে বিয়ের কথা বললেও ডায়েরির বর্ণনা মতে কয়েক মাস আগেও তাদের বিয়ে হয়নি। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি সূত্র জানায়, মামুনুলের রিসোর্টকান্ডের জেরে নাশকতার ঘটনা ঘটায় ব্যক্তিগত বিষয়টিকেও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। গণমাধ্যমে কথিত সেই স্ত্রীর ডায়েরি প্রকাশের পর তাদের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ কারণে ঝর্ণার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছে পুলিশ। তবে রবিবার বিকেল পর্যন্ত ঝর্ণার অবস্থান নিশ্চিত হতে পারেননি তদন্তকারীরা। আর মায়ের সন্ধান চেয়ে আব্দুর রহমান একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলেও জানান। ডিবি পুলিশ ঝর্ণার সেই ডায়েরি উদ্ধার করে পর্যালোচনা করছে। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, সোনারগাঁর ঘটনায় সোনারগাঁয় মামলা হয়েছে। আমরা নাশকতার ব্যাপারে তদন্ত করছি। আসামিদের গ্রেফতারেও আমাদের তদন্ত চলছে। মামুনুল-ঝর্ণার ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে আরেক নারীর ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে মামুনুলের। তার সঙ্গে মামুনুলের সম্পর্ক যাচাই করা হচ্ছে। এসব ঘটনা ফৌজদারি আপরাধের সঙ্গে কোন ধরনের সম্পৃক্ত হলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয় নাশকতার ঘটনায় দুই মামলায় মামুনুল এজাহারনামীয় আসামি। এ ছাড়া ঢাকায় গত ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম কেন্দ্রীয় মসজিদে নাশকতার ঘটনায় পল্টন থানার দুই মামলার আসামি মামুনুল হক। মামুনুল হকের ঘটনা ব্যক্তিগত- বাবুনগরী ॥ হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী ঝার্ণার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে নাকি অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে সেই বিষয়টি নিয়ে এখন সর্ব মহলে আলোচিত হচ্ছে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। রবিবার, ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের জরুরী বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন বাবুনগরী। তিনি আরও জানান, মামুনুল হকের ২য় বিবাহ শরীয়ত সম্মত। এটা নিয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। মামুনুল হকের অব্যাহতির বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাবুনগরী বলেন, এ বিষয়ে আজকের সভায় কোন আলোচনা হয়নি। এদিন দুপুর ১২টায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতাদের এ বৈঠক শুরু হয়, যা চলে বিকেল তিনটা পর্যন্ত। এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হেফাজত আমির বলেন, আজকে আমাদের বৈঠকে কোন ব্যক্তিকে নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি, কাউকে প্রত্যাহার অথবা অব্যাহতি দেয়ার কোন আলোচনা হয়নি। মামুনুল হকের বিষয়ে আমাদের একটি জবাব এটি উনার ব্যক্তিগত বিষয়। এর বাইরে আমরা এ বিষয়ে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি নই। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। এতে হাতেগোনা হেফাজতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে আগামী ২৯ মে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন ঘোষণা করা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা ও গ্রেফতারের নিন্দা জানান বাবুনগরী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মুনির কাসেমী প্রমুখ। হেফাজতের বৈঠক থেকে সরকারকে হুমকি ॥ মাদ্রাসায় করোনা আসবে না বলে হেফাজতে ইসলামের আমির বাবুনগরীর দাবি। হুমকি দিয়ে হেফাজত ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ‘লকডাউনেও সরকার মাদ্রাসা বন্ধ করতে পারবে না’। তিনি বলেন, লকডাউন সরকার দিতে পারবে। কিন্তু আমাদের মাদ্রাসা বন্ধ করা যাবে না। নুরানী, হেফজখানায়, কওমি দ্বীনি মাদ্রাসা বন্ধ রাখা যাবে না। যেখানে কোরান, হাদিস পাঠ করা হয়, যেখানে হেফজখানায় ছাত্ররা কোরান পাঠ করে সেখানে করোনা আসবে না। তার কারণ হলো আল্লাহর রহমত। বাবুনগরী বলেন, মসজিদের জামাত বন্ধ করা যাবে না। ইতেকাফ বন্ধ করা যাবে না। তারাবি নামাজ চলবে, জুমা চলবে। জুমায় ১০ জন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ইমামসহ ৫ জন এগুলো মানা যাবে না। এগুলো শরীয়ত পরিপন্থী। নাশকতার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন হেফাজতের আমির ॥ গত ২৬ মার্চ হাটহাজারীতে ভাংচুরের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি বলেন, গত ২৬ মার্চ যে ঘটনা ঘটেছে, ওই দিন হেফাজতে ইসলামের কোন কর্মসূচী ছিল না। জাতীয় ও আঞ্চলিক কোন জায়গায় আমাদের কোন কর্মসূচী ছিল না। এ কারণে বিষয়টি আমরা ওয়াকিবহাল ছিলাম না। আমি নিজেও অনেক দূরে ছিলাম। কিছু মানুষ মিছিল বের করেছে, তারা বলেছে আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করেছি। এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে প্রশাসনের কিছু লোক, পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে। হাটহাজারীতে চারজনকে হত্যা করেছে। আমাদের কথা হচ্ছে তারা কারা আমরা জানি না, আমরা ছিলামই না। জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, তারা যদি কিছু ভাংচুরও করে, তাহলে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে পারে। রাবার বুলেট ছুড়তে পারে। এরপর গুলি করতে হলেও হাঁটুর নিচে গুলি করবে। যেন উত্তেজনা দমন হয়ে যায়। কিন্তু আমি সফরে ছিলাম, সফর থেকে আসার পথে হাসপাতালে গিয়েছি। চমেক হাসপাতালে সেখানে চারজন লাশের কারও পেটে গুলি, কারও বুকে গুলি, কারো মাথায় গুলি দেখেছি। এগুলো কি দেশের আইন? তিনি আরও বলেন, হাটহাজারীর ঘটনার আগে বায়তুল মোকাররমে মুসল্লি আর আওয়ামী ক্যাডারদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানেও হেফাজতের কোন কর্মসূচী ছিল না। পুলিশী হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি হলো যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। যাদের কপালে আছে শহীদ হওয়া, শাহাদাত বরণ করা। তাদের কপাল ভাল। এমনিতেও তো মরতে হবে। যা হওয়ার আছে, হয়ে গেছে। মাদ্রাসা এখন বন্ধ। কিন্তু প্রতি রাতে এলাকায় পুলিশ, র্যা ব বের হয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করতেছে। ধরে নিয়ে যাচ্ছে, গ্রেফতার করতেছে, চালান করে দিচ্ছে। এই জুলুম নির্যাতন কেন করা হচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি, এই সমস্ত হয়রানি বন্ধ করতে হবে। মামুনুলের কথিত স্ত্রী ঝর্ণার ছেলের জিডি ॥ হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে তার বড় ছেলে আবদুর রহমান একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। শনিবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর পল্টন থানায় তিনি এই জিডি করেন। জিডিতে আব্দুর রহমান তার নিজের ও মায়ের জীবনের নিরাপত্তার আশঙ্কার কথা বলেন। একইসঙ্গে তার মায়ের তিনটি ডায়েরি সংরক্ষণের বিষয়েও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। পল্টন থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সেন্টু মিয়া বলেন, জান্নাত আরা ঝর্ণার ছেলে থানায় এসে একটি জিডি করেছে। সে কোথায় থাকছে, তার খোঁজ আমরা রাখব, যেন তার কোন সমস্যা না হয়। জিডির তদন্ত শুরু হয়েছে। আর তার মা কোথায় আছে, সেটিও দেখা হবে। পল্টন থানার ওসি আবদুল লতিফ শনিবার রাতে বলেন, আবদুর রহমান তার মায়ের সন্ধান ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছেন। একজন এসআইকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীর (জান্নাত আরা ঝর্ণা) সঙ্গে অবস্থান করার সময় অবরুদ্ধ হন মামুনুল হক। ওই দিন তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সঙ্গে থাকা ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে তিনি বিয়ে করেছেন। যদিও কয়েকটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপের সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় বিয়ে করার বিষয়টি মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রী জানতেন না। তা ছাড়া রিসোর্টে কথিত স্ত্রী ঝর্ণার সঠিক নাম বলেননি মামুনুল। মামুনুল হক হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব। রয়্যাল রিসোর্টে তিনি ঘেরাও থাকা অবস্থায় স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সেখানে ব্যাপক ভাংচুর করেন। পরে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যান হেফাজতের কর্মীরা। মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার দুই সন্তান আবদুর রহমান ও তামিম তাদের বাবার সঙ্গে খুলনায় থাকে। আবদুর রহমান কয়েক দিন আগে ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুল হক সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে তার বিচার দাবি করে। পাশাপাশি আবদুর রহমান তার মা-বাবার বিচ্ছেদ ও তাদের পরিবার ধ্বংসের জন্য সরাসরি মামুনুল হককে দায়ী করে। মাদানীর বিরুদ্ধে আরেক মামলা গাজীপুরে ॥ মিথ্যা তথ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে সহায়তায় অভিযোগে রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে গাজীপুরে আরেকটি মামলা হয়েছে। আসামি রফিকুল ইসলাম মাদানী (২৭) গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নলজানি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ‘মারকাজুল নূর আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায়’ বসে দেশদ্রোহী ও নাশকতার কার্যকলাপ চালান এবং নাশকতামূলক কর্মকা-ের পরিকল্পনা করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। মামলার এজাহারে আরও অভিযোগ, কিছু বক্তা ওয়াজ মাহফিলের নামে ধর্মীয় বক্তব্যের আড়ালে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রদান করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছে। তাদের অন্যতম রফিকুল ইসলাম মাদানী ওরফে ‘শিশু বক্তা’। রফিকুল তার বক্ত্যের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘটে যাওয়া সহিংসতার পেছনে অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে কাজ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, মাদানী গত ২৫ জানুয়ারি থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্যের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে অপমানজনক ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়া দেশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সম্পর্কে অপমানজনক বক্তব্য দিয়ে ফেসবুক পেজ, ইন্টারনেট ও ইউটিউবে আপলোড করার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বিরাজমান সহিংসতা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছেন। তার এসব বক্তব্যের ভিডিও ইউটিউবে ‘ইসলামিক জীবন’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে আপলোড করা হয়। গাজীপুর মহানগর পুলিশের বাসন থানার ওসি কামরুল ফারুক জানান, রবিববার সকালে টেকনাগপাড়ার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে বাসন থানায় ডিজিটাল আইনে মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে মাদানীর বিরুদ্ধে গাজীপুরের গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরও একটি মামলা হয়েছিল, যে মামলায় তিনি এখন কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন। গত বুধবার (৭ এপ্রিল) ভোরে রফিকুল ইসলামকে তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার লেটিরকান্দা থেকে আটক করে র্যা ব সদস্যরা। পরদিন বৃহস্পতিবার র্যা বের নায়েক সুবেদার আবদুল খালেক বাদী হয়ে গাজীপুরের গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে প্রথমে জেলা কারাগারে ও পরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ স্থানান্তর করা হয়েছে। বিনোদন সঙ্গিনী নারীর সঙ্গে মামুনুলের ফোনালাপ ॥ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হকের ‘তৃতীয় প্রেমিকা’র সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জান্নাত আরা ঝর্ণার মতো ডিভোর্সি এই নারীর সঙ্গে মামুনুল হকের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট মামুনুল হক সম্পর্কে ছায়া অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই তথ্য পায়। এই নারীকে এতদিন তারা প্রথম স্ত্রী ধারণা করেছিলেন। কিন্তু গত কয়েকদিনে মামুনুল হকের একাধিক ফোনালাপ ফাঁস ও ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তৃতীয় প্রেমিকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। জানা গেছে, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই নারীর সঙ্গেও দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মামুনুল হক। ওই নারীর ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে এ সংক্রান্ত অনেক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। ওই নারী একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যেখানে শিক্ষকতা করেন তার পাশেই একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন ওই নারী। এই বাসাতেই মাওলানা মামুনুল মাঝেমধ্যেই যাতায়াত করতেন। ওই মাদ্রাসার প্রধান উপদেষ্টা হলেন মামুনুল হক। এই সুবাদে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সংক্রান্ত অনেক তথ্য প্রমাণ হাতে রয়েছে। মাওলানা মামুনুল হক ও ওই নারীর একাধিক ফোনালাপ হাতে এসেছে। ফাঁস হওয়া এসব ফোনালাপের মাধ্যমে তাদের অনৈতিক সম্পর্ক ও ওই শিক্ষিকার বাসায় যাতায়াতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। মামুনুল হকের রিসোর্টকান্ডের পর একটি ফোনালাপের তার তৃতীয় প্রেমিকা সম্পর্কে কিছুটা তথ্য পাওয়া যায়। ওই ফোনালাপে রয়েল রিসোর্টে থাকা অবস্থায় মুফতি এনায়েতুল্লাহকে ফোন করেছিলেন তিনি। এসময় মুফতি এনায়েতুল্লাহকে কথিত স্ত্রী নিয়ে রিসোর্টে যাওয়ার কথা জানালে এনায়েতুল্লাহ জিজ্ঞাসা করেন ‘কোন ভাবি, কাপাসিয়ার?’ মামুনুল হক উত্তরে বলেন, না, খুলনার। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মুফতি এনায়েতুল্লাহ কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। গত ২৬ মার্চ থেকে মোদিবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই মাওলানা মামুনুল হক ওই নারীর বাসায় গিয়ে একান্ত সময় কাটিয়েছেন। ৪৯ সেকেন্ডের অডিওতে মামুনুল ওই নারীকে বলেন, ‘হ্যালো আমি আসছি।’ উত্তরে ওই নারী বলেন, ‘চলে আসছেন? গেট খোলা আছে।’ মামুনুল বলেন, ‘গেট খুলে আমাকে রিসিভ করার ব্যবস্থা করো। এছাড়া কেউ আছে নাকি দেখো আগে।’ ওই নারী আচ্ছা বলে ফোনের লাইন কেটে দেন। ওই বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর মামুনুল হক ও ওই নারীর কথোপকথনের আরেকটি ফোনালাপও ফাঁস হয়েছে। সেখানে তাদের কথোপকথন নিচে তুলে ধরা হলো- মামুনুল : চলে আসছি। বুঝছো নারী : ঠিক আছে। শুনছি। মামুনুল : চোরের মতো কথা কও কিল্লাইগা। জোরে জোরে কথা কইতে পারো না? নারী : জোরে কে কমু। বেশি করে কমু। সমস্যা কি? মামুনুল : হে হে হে. গুড নাইট। ফ্রেস-ট্রেস হয়ে নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া করো। বুঝছো। নারী : কি হইছে? মামুনুল : ফ্রেস হইয়া নামাজ-টামাজ পরবা না? নারী : হু। মামুনুল : নামাজ পড়ো আর আমার জন্য দোয়া করো। নারী : বাসায় পৌঁছে একটা মেসেজ দিয়েন। মামুনুল : বাসায় পৌঁছে মেসেজ দেয়ার কি আছে? বাসায় তো পৌঁছায়া গেছি। নারী : কি হইছে। মামুনুল : বাসাতো এইখানে। নারী : আচ্ছা যান। মামুনুল : আচ্ছা। নারী : আসসালামু আলাইকুম। ফাঁস হওয়া আরেকটি ফোনালাপে মামুনুল হক ও ওই নারীর প্রায় ৩ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের অডিওতে মামুনুল ও ওই নারী রাতে বাইরে একসঙ্গে কাটানোর বিষয়ে কথা বলেন। এছাড়া ওই নারীকে তাকে সমুদ্রে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতির কথাও মনে করিয়ে দেন। সেই ফোনালাপ নিচে তুলে ধরা হলো : নারী : আসসালামু আলাইকুম। মামুনুল : ওলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ। নারী : দেখছো। মামুনুল : না। নারী : তাহলে আগে প্লানটা বলেন। মামুনুল : পিলান-টিলান আর বলতে পারুম না। হাতে সময় বের করতে পারি কিনা। পারলে তখন কি করবো সেটা বলো। নারী : আমি বলি শোনেন। আপা আছে না। মামুনুল : হ্যাঁ। নারী : আপার ইবনে সীনায় কিছু টেস্ট আছে। মামুনুল : হ্যাঁ। নারী : চাইছিলাম আজকে টেস্টগুলো করতে দেয়ার জন্য। মামুনুল : হ্যাঁ। নারী : আমি বের হলেও তো এদিকে কাজগুলো পারবো না। আর আপার টেস্টের জন্য বের হলে সাড়ে ৩টার পরে বের হবো। মামুনুল : সাড়ে ৩টায় বের হও। আমার প্রোগ্রাম আরও পরে। তারপর কি করবা। ওনি কি করবে তুমি কি করবা। নারী : বাসায় নিয়া আমু। আমারে জিগাইসে দেরি হলো কিল্লায়গা। আমি বলেছি ডাক্তারের সিরিয়াল পাইতেছিলাম না। সিরিয়াল পাইতে দেরি হইছে। পরে আমি বলছি আর সমস্যা নাই। আমি বাসায় একলা থাকতে পারব। থাকতে তো পারব এটা আমিও জানি। সমস্যা কি? থাকব। কিন্তু আমি যদি রাতে ব্যাক করি। রাতে তো মনে হয় ব্যাক করা হবে না। আসলে সকালে। বুঝছো। মামুনুল : সেরকমই তো। এখন কি করবা বলো। ঝামেলা হয়ে গেল। নারী : আমারে নিয়ে না আপনার কই যাওয়ার কথা। মামুনুল : কোথায়, বলো। নারী : হু মামুনুল : কই যাওয়ার কথা। নারী : সমুদ্রে যাওয়ার কথা। মামুনুল : না। সেটা তো আলাদা, আলাদা প্রোগ্রাম করতে হবে। সেটা তো আরও কয়েকদিন পরে করবো ইনশা আল্লাহ। নারী : আচ্ছা। আপনি সময় পেলে করবেন। আমি আপারে টেস্ট করায়ে, হয়তো টেস্ট শেষ হতে রাত ৮/৯টা বাইজে যাইতে পারে। মামুনুল : ওরে বাপরে বাপ। নারী : আল্ট্রা করে যে উনি বসে ৬টায়। ও তো একলা আসতে পারব না এটা কয়ে লাভ না। বাসা পর্যন্ত। আজকে মনে হয় না হইব। মামুনুল : আচ্ছা ঠিক আছে। নারী : আর যদি মনে করেন খুব বেশি সমস্যা তাহলে আজকে না কালকে গেলাম। কালকে শনিবার। এখন আপনার ওপর নির্ভর। আপনি তো সময় বের করা সো টাফ। মামুনুল : সারাদিন তো কাজ-কাম। কোন কিছু সহজ না। নারী : এহন আপনার ইচ্ছা। আমারে যা কইবেন তাই। আমার অতো শখ নাই। মামুনুল : আচ্ছা তুমি তোমার মতো কাজ চালাইতে থাকো। টেস্ট-মেস্ট করাও তারপর দেখি। নারী : আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আমি সাড়ে ৩টার পর আপারে নিয়ে বেরুব। মামুনুল : ঠিক আছে। নারী : আচ্ছা, আসসালামু আলাইকুম। মামুনুল : ওলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ। ফাঁস হওয়া আরও একটি ফোনালাপ : নারী : আসসালামু আলাইকুম। মামুনুল : ওলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ। কি অবস্থা। ঝামেলা নাকি। নারী : না। বলেন। মামুনুল : কথা এমনে কইতাছো ক্যান। মনে হয় যে ঘুমায় ঘুমায় কথা কইতাছো। নারী : ঘুমায় ঘুমায় কথা বলতাছি না। ক্লাসে আছি। অফিসে বসেন। আমি আসতাছি। মামুনুল : কেন আমি অফিসে বসব। আমি অফিসে বসব না। আমি এখন কথা বলবো এবং যা ইচ্ছা তাই বলব। নারী : বাড়াবাড়ি করতাছেন যে মামুনুল : কি বাড়াবাড়ি কি করছি আবার। কথা বলা মানুষের বাক স্বাধীনতা। নারী : আপনি তো আমার বাক স্বাধীনতা হরণ করছেন। পোলাপাইনের সামনে অনেক কিছু বলতে পারছি না। মামুনুল : হা হা হা নারী : মজা নিতাছেন। মামুনুল : এটা ঠিক না, এটা ঠিক না। একজনকে লাইনে রাইখা আরেকজনের সঙ্গে কথা বলা। না এটা ভদ্রতা পরিপন্থী কাজ। ওনারা থাকলে এখন তো আর যাওয়া যাইবে না। নারী : এক ঝামেলার মধ্যে এত রস আসে কোত্থেকে। মামুনুল : আজকেই বিকেলে, সন্ধ্যায় আসতাছি। নারী : আরে নাহ। মামুনুল : আচ্ছা ঠিক আছে তুমি জানাও।
×