ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোদির সফর চূড়ান্ত করতে জয়শঙ্কর আসছেন আজ

প্রকাশিত: ০১:২৪, ৪ মার্চ ২০২১

মোদির সফর চূড়ান্ত করতে জয়শঙ্কর আসছেন আজ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসছেন প্রতিবেশী দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সকালে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছানোর পর দুপুর সোয়া ১২টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাত করার কথা রয়েছে জয়শঙ্করের। পরে বিকেল ৫টায় ভারত ভবনে (পুরনো হাইকমিশন ভবন) একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। খবর বিডিনিউজের। জয়শঙ্করের সফরের নানাদিক জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, সামনে আমাদের মুজিববর্ষের চলমান কর্মসূচীর অংশ হিসেবে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ বেশ কিছু অনুষ্ঠান সাজানো হচ্ছে। সেটা সামনে রেখে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর একটি সফর হওয়ার কথা রয়েছে। সব সফরকে ঘিরে আমাদের প্রত্যাশা থাকে, অন্ততপক্ষে জটিল বিষয়গুলো আলোচনা করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপার, এগুলো নিয়ে আলাপ করার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন। মোদির সফর ঘিরে যোগাযোগ বা ‘কানেক্টিভিটির’ ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়টি জোর পেয়েছে মন্তব্য করে শাহরিয়ার আলম বলেন, যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। নতুন একটি ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ার কথা রয়েছে। সেটি আশা করি, আমরা চালু করতে পারব খুব শীঘ্রই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ঘোষণা দেবে। পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতার উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়েও আলোচনা হবে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ কেবল একটি স্বাস্থ্যগত জরুরী অবস্থা নয়, এটি অর্থনৈতিক জরুরী অবস্থাও তৈরি করেছে। বিশেষ করে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো একটি বড় অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটার একটি বড় প্রভাব কিন্তু আমাদের মতো সরবরাহকারী দেশগুলোর ওপর পড়তে পারে। ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণ কাঁচামাল আসে। যেগুলো দিয়ে আমাদের রফতানি বাণিজ্য চাঙ্গা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও হবে। সেক্ষেত্রে এই কাঁচামাল এবং আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে বাধাগুলো কীভাবে দূর করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের আলোচনায় সাম্প্রতিক ‘অগ্রগতি’ হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নদী বা পানি বিষয়ক যে বৈঠকগুলো হচ্ছিল না, সেগুলোর ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে যে কোন কিছু চূড়ান্ত হবে, আমরা জোরালোভাবে তা প্রত্যাশা করি না। কারণ, কয়েকদিন পরে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আছে। ডেলিবারেবলস যেগুলো, আমরা সেগুলো বড় সফরের জন্যই রেখে দিই। তবে চেষ্টা করা হবে, সেগুলো যতটুকু পর্যন্ত চূড়ান্ত করে রাখা যায়, বাকিটা সময়ই বলবে। তিস্তা চুক্তির বিষয়টি বাংলাদেশের অগ্রাধিকারে থাকবে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আমাদের সব সময়ের প্রায়োরিটি। ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ’ চুক্তির বিষয়টি দু’দেশের আলোচনার টেবিলে রয়েছে। এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি যৌথ সমীক্ষা করার জন্য এর আগে দুই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে যোগাযোগ, বাণিজ্য বাধা দূর করা এবং নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশপত্র পেয়েছে। সামনের তিন বা ছয় বছরে আমাদের অর্থনীতি আরও গতিশীল করার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা এটা আজকের এজেন্ডা নয়। আমাদের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ থাকার পরও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে, যেটাকে অনেকে মনে করেছিলেন অভ্যন্তরীণ ঝুঁকি থাকতে পারে, আমি ট্র্যানজিটের কথাটি বলছি, সেটা এখন আর বড় কোন ইস্যু মোটেই নয়। কিন্তু সেখানে দক্ষতা এবং বাধাহীন কীভাবে করা যায়। ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশের যানবাহনকে সরাসরি ভুটান ও নেপালে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, এটা আমাদের জন্য একটি বড় পাওয়া। ভারতের ডাউকি ও বাংলাদেশের তামাবিল অংশে একটি ‘পেট্রাপোল’ নির্মাণ ‘প্রায় হয়েই’ গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এই কাজগুলোর মধ্য দিয়ে সামনের দিনে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তারে শুধু কম্প্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ নয় আরও অনেক কিছু আসতে পারে। নতুন করে স্থলবন্দর চালু এবং একটি স্থলবন্দর ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার যে পরিকল্পনা দুই দেশ করছে, সে প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা অব্যাহতভাবে রিভিউ করে যাব এবং ভারতও এটা অনুভব করে। কারণ তাদের রফতানি বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, রফতানিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোন বর্ডারটি খোলা যায়, ফ্লাইটের সংখ্যা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটা আলোচনায় থাকবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির বিষয়টি যেসব কারণে বাধাগ্র্রস্ত হয়েছে, সেগুলো খুব দ্রুত সরাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী। বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য ভারতের চেন্নাইতে বাংলাদেশের একটি সহকারী হাইকমিশন খোলার উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরিকল্পনা শুধু নয়, চূড়ান্ত অনুমোদন হয়ে গেছে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে নিয়োগে যে দাফতরিক কার্যক্রম, সেটাও সম্পন্ন করেছি।
×