ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২৫ জানুয়ারি ২০২১

পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুরুটা হয়েছিল ১৬ জানুয়ারি। নয় দিনব্যাপী সেই শিল্প সফরের শেষ হলো রবিবার। সেই সফরে রাজধানীর আট ভেন্যুতে দর্শকরা দেখেছেন দেশ-বিদেশের বিচিত্র বিষয়ের ছবি। রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত উৎসবটিতে চলচ্চিত্রানুরাগীরা উপভোগ করেছেন ৭৩ দেশের ২২৭ ছবি। শিল্পের বর্ণিলতায় সজ্জিত সেই ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে। দুই শতাধিক চলচ্চিত্রের মধ্যে বিচারকদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে পাঁচ বিভাগের সেরা চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রদান করা হয় পুরস্কার। উৎসবের সবচেয়ে আলোচিত এশিয়ান কম্পিটিশন বিভাগে সেরা ছবির পুরস্কার জয় করে নিয়েছে কিরগিজস্তানের চলচ্চিত্র ‘দ্য রোড টু ইডেন’। সম্মানী হিসেবে ছবির নির্মাতা পেয়েছেন এক লাখ টাকার পুরস্কার। এশিয়ান কম্পিটিশনসহ বাকি চার বিভাগের বিভিন্ন ছবির নির্মাতা, শ্রেষ্ঠ অভিনেতাসহ বিভিন্ন শাখায় পুরস্কারপ্রাপ্তদের স্মারক ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। মহামারীর কারণে দেশের ছবির বাইরে বিদেশী ছবিগুলোর পুরস্কারজয়ীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সভাপতিত্ব করেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উৎসবের নির্বাহী কমিটির সদস্য ম. হামিদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাছান মাহমুদ মহামারীর প্রতিকূল পরিবেশেও এমন একটি উৎসবের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং আর্থিক দৈন্যতা সত্ত্বেও ম্লান হয়নি এই উৎসব। দেশের সীমানা পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এই উৎসব। করোনার কারণে জীবন থমকে গেলেও থেমে যায়নি রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, উল্টোদিকে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে মহামারীর মাঝেও অব্যাহত রয়েছে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। সে কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে আমাদের রেমিটেন্স বেড়েছে। আমরা এশিয়ার মধ্যে সবেচেয়ে সক্ষম দেশে পরিণত হয়েছি। জীবনের সঙ্গে চলচ্চিত্রের তুলনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, চলচ্চিত্র সবসময় জীবনের কথা বলে। তাই সমকালীন বিষয়কে ধারণ করেই নির্মিত হয় চলচ্চিত্র। সে কারণে করোনা নিয়েও চলচ্চিত্র নির্মিত হতে পারে। বর্তমানে ওটিটি মাধ্যমের প্রতি মানুষের ঝোঁক প্রেক্ষাগৃহের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেনি। তাই নতুন বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়েই চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে নির্মাতাদের। দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রেক্ষাগৃহ চালু করা এবং চলমান প্রেক্ষাগৃহের আধুনিকায়নে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হচ্ছে। পাশাপাশি অনুদানের চলচ্চিত্রে অর্থের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পীদেরে জন্য কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত এদেশের চলচ্চিত্রও এক সময় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। শাহরিয়ার আলম বলেন, নয়দিনের এই উৎসবে সাধারণের পাশাপাশি রাজনীতিবিদ থেকে বোদ্ধারা অংশ নিয়েছেন। সে কারণে এবার বিদেশী অতিথিরা না এলেও উৎসবের অর্জন একেবারে কম নয়। আর বিশেষ দিক হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন হয়েছেন এ উৎসবের মাধ্যমে। কে এম খালিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই এদেশে চলচ্চিত্রশিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৫৭ সালে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে তিনি এদেশের চলচ্চিত্রের সূতিকাগার এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই বাস্তবতায় বর্তমানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ ধরনের উৎসবকে যতটা সম্ভব আর্থিকভাবে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কারণ আমরা জানি দেশের ইতিহাস সংরক্ষণে চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ ধরনের উৎসব মূলত দেশের চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। সমাপনী অনুষ্ঠানে পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল ২০২২ সালের ১৫ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশতম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ঘোষণা দেন। আলোচনা শেষে প্রদর্শিত হয় সুইজারল্যান্ডের চলচ্চিত্র ‘রোল দ্য ড্রাম।’ উৎসবে বাংলাদেশ প্যানারোমা বিভাগে দর্শক জরিপে সেরা ছবির পুরস্কার পেয়েছেন ফাখরুল আরেফীন খান নির্মিত ‘গণ্ডি’ এবং জুরিদের বিচারে মাসুদ হাসান উজ্জ্বল পরিচালিত ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ পুরস্কার পেয়েছে। শ্রেষ্ঠ শিশু চলচ্চিত্র বাদল রহমান পুরস্কার পেয়েছে রাশিয়ান চলচ্চিত্র ‘তাগানক টিম’। নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা বিভাগে স্বল্পদৈর্ঘ্যে ইরানী সিনেমা ‘তিরিশকো’র জন্য শাকিবা খালেঘি এবং একই বিভাগে স্পেশাল ম্যানশন পুরস্কার পেয়েছেন সুইডেনের জেসিকা লরেন নির্মিত ‘ওয়ে হোম’। নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা বিভাগে শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্রের পুরস্কার পেয়েছে ইভডোকিয়া মোসকভিনা পরিচালিত ‘ফরবিডেন চিলড্রেন’ (রাশিয়া, সিরিয়া)। ‘দ্য লিটল ব্ল্যাক ড্রেস’ ছবির জন্য সেরা নারী নির্মাতার পুরস্কার পেয়েছেন মারগারিদা পাইভা। স্পিরিচ্যুয়াল বিভাগে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেয়েছেন সাইপ্রাসের মারিনোস কারতিক্কিস নির্মিত ‘সিনিয়র সিটিজেন’। একই বিভাগে শ্রেষ্ঠ ডকুমেন্টারি পুরস্কার জিতেছে মেহরদাদ ওস্কোই। এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগে সেরা স্ক্রিপ্ট রাইটার হয়েছেন নাসিম আহমদপুর ও শারাম মোকরি (ক্যায়ারলেস ক্রাইম)। একই বিভাগে শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফার নির্বাচিত হয়েছেন ওটগনজুরিগ ব্যাচুলুউন (দ্য ওম্যান)। ‘মারিয়াম’ ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন মেরুইরট সুব্বুসিনোভা এবং ‘নাইন পয়েন্ট সেভেন ফাইভ’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হয়েছেন নিজাত ইসলার। শ্রেষ্ঠ পরিচালক হয়েছেন কসেনিয়া লাগুটিনা। সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘দ্য রোড টু ইডেন।’ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আগে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বে নৃত্য পরিবেশন করে সামিনা হুসাইন প্রেমার পরিচালিত নৃত্যদল ভাবনা, এম আর ওয়াসেক পরিচালিত নন্দন কলা কেন্দ্র এবং শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা।
×