ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

শীতের তীব্রতা আরও দুদিন থাকবে

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২১

শীতের তীব্রতা আরও দুদিন থাকবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবহাওয়ার তিন প্যারামিটারে শীতের অনুভূতি বাড়ছে। দুদিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পর তাপমাত্রা কমছে। বাড়ছে শীত। এছাড়া শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে ঘন কুয়াশা শীতের তীব্রতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই অবস্থা আরও দুদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তারা জানায়, দেশের তিন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। একদিনের ব্যবধানের তাপমাত্রা আরও কমে ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াসে এসেছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে। ফলে সূর্যের পর্যাপ্ত আলো আসছে না। ফলে শীতের আমেজ বাড়ছে। সকাল সন্ধ্যায় শীতের কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে দেশবাসীর। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের তীব্রতা মূলত তিনটি প্যারামিটারের ওপর নির্ভর করে। প্রথমত বেশি পরিমাণ কুয়াশা থাকলে রাত ও দিনের তাপমাত্রা কাছাকাছি থাকে। দিনে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় বেশি ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। উপরের ঠাণ্ডা বায়ুর (জেড বায়ু) প্রকোপ বাড়লে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে বৃষ্টিপাত হলেও শীত পড়ে। গত কয়েকদিনের আবহাওয়ায় এই তিন প্যারামিটারের সংযোগ হওয়ায় শীতের অনুভূতি বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তারা জানান, তুলনামূলক সারাদেশে তাপমাত্রা বেশি মাত্রা কমেনি। মৃদু শৈত্যপ্রবাহও সব অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে না। শীতের ঢাকার তাপমাত্রাও এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক পর্যায়ে নামেনি। কিন্তু তিন প্যারামিটার এক হওয়ায় রাজধানীসহ সারাদেশেই শীতের অনুভূতি বাড়ছে। তারা জানায় তাপমাত্রা বেশি না কমলে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ব্যবধান খুব কাছাকাছি রয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে অবস্থান করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। এছাড়াও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর ঘন কুয়াশায় সর্বত্র শীতের অনুভূতি বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও অন্তত দুদিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকবে বলে আভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, রাঙ্গামাটি, শ্রীমঙ্গল ও পঞ্চগড় অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। রাজধানীসহ অনেক জায়গায় ১০-১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকলেও ঘন কুয়াশা থাকায় বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। আরও দুদিন এ ধরনের শীত থাকবে। তিনি জানান, চলতি সপ্তাহে রাতের তাপমাত্রা বাড়লেও জানুয়ারির শেষে আরেক দফা শীতের দাপট থাকবে। আবহাওয়াবিদরা জানান, দুদিন পর তাপমাত্রা আবারও বেড়ে যেতে পারে। এ সময় পশ্চিমা লঘুচাপ আবারও সক্রিয় হলে দুর্বল হয়ে যেতে পারে উত্তরের হিমেল হাওয়া। তবে ৩০ জানুয়ারির দিকে তাপমাত্রা আবারও কমবে। এ সময় আরেক দফা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। গত ১৮-২৩ ডিসেম্বর এবং ২৬-৩১ ডিসেম্বর এই মৌসুমের প্রথম এবং দ্বিতীয় দফায় রংপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ১৯ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। ১৫ জানুয়ারি বদলগাছিতে থার্মোমিটারের পারদ নেমে যায় ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে, যা চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এদিকে আবহাওয়ার পূর্বভাসে বলা হয়েছে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পরের তিনদিন রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, নদী অববাহিকায় ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯-১০টা পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে ৩০০ মিটার বা কোথাও কোথাও আরও কম হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তবে কোন সতর্ক সংকেত দেখাতে হবে না। কুড়িগ্রাম ॥ ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডার সঙ্গে বয়ে যাচ্ছে উত্তরের হিমেল বাতাসে কাহিল হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ধরলা তিস্তা ব্রহ্মপুত্র দুধকুমারসহ বিভিন্ন নদ-নদীর অববাহিকার ৪০৫টি চর-দ্বীপ চরের প্রায় ৭ লাখ মানুষ দারুণ দুর্ভোগে পড়েছে। ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডায় এ জেলার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ক্রমেই আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় শিশু ও বৃদ্ধরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুগুলো চরম কষ্টে পড়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালে এসব রোগীর ভিড় বাড়ছে। শনিবার সকালে স্থানীয় রাজারহাট আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহে জেলার ৯ উপজেলার মানুষজনের কষ্টের মাত্রা আরও বেড়েছে। বিকেল হলেই সবখানে তাপমাত্রা কমতে থাকে। প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকে। রাতে কুয়াশা কম পড়লেও উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে জনজীবন কাহিল হয়ে যায়। দিনের বেলা রোদ উঠলেও তাপমাত্রা অনেক কম। কুড়িগ্রাম বাজারে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়লেও কম্বল ও শীতবস্ত্রের দাম বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ পুলক রায় জানান, কয়েকদিনে ঠাণ্ডা বেড়ে যাওয়ায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বৃদ্ধরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
×