ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

চলচ্চিত্রে রাষ্ট্রীয় অনুদানে স্বচ্ছতা দাবি

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০

চলচ্চিত্রে রাষ্ট্রীয় অনুদানে স্বচ্ছতা দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের সমস্যা-দুর্দশা যেন আর যেতে চাইছে না। নিম্নমানের ছবি আর প্রদর্শনের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় বড় পর্দা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে দর্শক। দেশের সিনেমা শিল্পের ভগ্নদশা দু’দিনের নয়। দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পের উপর চালানো হচ্ছে নানা অত্যাচার। একে একে বন্ধ হচ্ছে সিনেমা হল। ১৪শ’ হলের এখন বাকি আছে এক শ’ পঁচানব্বই। বাকি হল মালিকদের মুখেও বিদায়ের সুর। কোন কোন জেলা শহরে সিনেমা হল পুরোই বিলুপ্ত। লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে প্রযোজকরাও সিনেমায় টাকা লগ্নি করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। চলচ্চিত্রের এই করুণ পরিণতির জন্য প্রযোজক-পরিচালক দায়ী করছে হল মালিকদের। অন্যদিকে হল মালিকরা অভিযোগ তুলছে মানহীন ছবি থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কেউ বলছে এর দায় সরকারের। আবার চলচ্চিত্র শিল্পীরা ছবি প্রদর্শনের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক বলছে, ভাল ছবি হলে হল আরও ভাল হবে, পরিচালক বলছে ছবি ভাল হচ্ছে, হল ভাল নয়। একে অপরে এ রকম কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে দীর্ঘ দশ বছরেরও অধিককাল ধরে। চলচ্চিত্রশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকার চালু করেছে অনুদান প্রথা। সেটাও এখন বিতর্কিত। দেশের চলচ্চিত্র সংসদকর্মীদের দাবির মুখে শিল্পগুণসম্পন্ন নান্দনিক ও নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছর থেকে চলচ্চিত্রে অনুদান প্রদানের প্রথা শুরু করে সরকার। শুরুর পর্যায়ে চলচ্চিত্র অনুদানেই নির্মিত হয়েছিল ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ বা ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’র মতো কালজয়ী চলচ্চিত্র। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে অনুদান প্রদানের এই ব্যবস্থাটি ক্রমান্বয়ে বিতর্কিত হয়েছে এবং অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অনুদানপ্রাপ্ত বিভিন্ন চলচ্চিত্রের মান ও গুণ উভয়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অনুদান প্রাপ্তিতে রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসনিক তদবির বা অন্যান্য অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার অবসানের দাবিতে এক মানববন্ধন হয় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সোমবার সকালে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পর্ষদ আয়োজিত এ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পর্ষদের জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক বেলায়াত হোসেন মামুন, ঢাকা বিভাগের আহ্বায়ক চলচ্চিত্র নির্মাতা নির্তেশ সি দত্ত, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পর্ষদের ঢাকা বিভাগের সদস্য সচিব আহমেদ হিমু, ঢাকা বিভাগীয় কমিটির সহ-সদস্য সচিব রুমকী রুসা, তানভীর আহমেদ প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চলচ্চিত্রে রাষ্ট্রীয় অনুদানের অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার অবসানে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিষয়টি কিছুদিন ধরেই আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গনে আলোচিত এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বহু সেমিনার, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কয়েকজন চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক এই বিষয়ে জাতীয় দৈনিকে কলাম ও নিবন্ধ লিখে তথ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়াস করেছেন। কিন্তু কার্যত আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন সাড়া পাইনি অথবা তথ্য মন্ত্রণালয়কে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। আমরা চাই চলচ্চিত্র অনুদানের এই রাষ্ট্রীয় প্রণোদনাটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহি প্রক্রিয়ায় গতিশীল থাকুক। আমাদের দাবি চলচ্চিত্র অনুদান কেবলমাত্র শিল্পগুণসম্পন্ন নান্দনিক ও নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্রের জন্য সংরক্ষিত থাকুক। চলচ্চিত্র অনুদান দেশের তরুণ চলচ্চিত্রকর্মীদের সৃষ্টিশীলতাকে ধারন করুক। চলচ্চিত্র অনুদান প্রাপ্তিতে রাজনৈতিক প্রভাব, প্রশাসৈনিক তদবির বা অন্যান্য অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার অবসান হোক।
×