ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বিশিষ্টজনদের দাবি

পাকিস্তান সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, জামায়াত সন্ত্রাসী সংগঠন

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৭ নভেম্বর ২০২০

পাকিস্তান সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, জামায়াত সন্ত্রাসী সংগঠন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুম্বাইয়ে জঙ্গী হামলার ১২তম বার্ষিকী স্মরণে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ও জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার দাবি উঠেছে। বৃহস্পতিবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এ ওয়েবিনারে মানবাধিকার কর্মী, আইনজ্ঞ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, উপমহাদেশে ইসলামের নামে জঙ্গী সন্ত্রাসের গডফাদার হচ্ছে পাকিস্তান। এখন সময় এসেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবল জনমত সৃষ্টি করা- যাতে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এবং জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করা হয়। অন্যথায় ইসলামের নামে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসী হামলা উপমহাদেশসহ পৃথিবীতে বার বার ঘটবে। ওয়েবিনারের বিষয় ছিল- ‘উপমহাদেশে ইসলামের নামে জঙ্গী সন্ত্রাসের গডফাদার পাকিস্তান’। সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক (উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি), শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল (কেন্দ্রীয় সদস্য, নির্মূল কমিটি), অধ্যাপক মেজবাহ কামাল (কেন্দ্রীয় সদস্য, নির্মূল কমিটি), ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ (কেন্দ্রীয় সদস্য, নির্মূল কমিটি), ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল (সাধারণ সম্পাদক, নির্মূল কমিটি চিকিৎসা সহায়ক কমিটি), লেখক মারুফ রসুল (সহযোগী সম্পাদক, জাগরণ), সাহিত্যিক ও সাংবাদিক দিব্যেন্দু দ্বীপ (সহকারী সম্পাদক, জাগরণ), গবেষক তাপস দাস (নির্বাহী সদস্য, ইন্দো বাংলাদেশ ফোরাম ফর সেকুলার হিউম্যানিজম ভারত), মুক্তিযোদ্ধা আক্তার এম জামান (সভাপতি, নির্মূল কমিটি সুইডেন), সমাজকর্মী হাসনাত ফারুক শিমুল রবিন (সহসভাপতি, নির্মূল কমিটি অস্ট্রেলিয়া), মানবাধিকারকর্মী আনসার আহমদ উল্লাহ (সাধারণ সম্পাদক, নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় কমিটি), মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্তী (আহ্বায়ক, নির্মূল কমিটি সিলেট), ডাঃ মফিজুল ইসলাম মান্টু (সভাপতি, নির্মূল কমিটি রংপুর), সংস্কৃতিকর্মী জ্যোতি আহমেদ (সভাপতি, নির্মূল কমিটি কুড়িগ্রাম), এ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ (সভাপতি, নির্মূল কমিটি মানিকগঞ্জ) ও কাজী মুকুল (কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, নির্মূল কমিটি)। শাহরিয়ার কবির বলেন, এক যুগ পার হলেও পাকিস্তান মুম্বাই বিস্ফোরণের কুশীলবদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বিচারের নামে চলেছে প্রহসন। বরং ২০০৮ সালের মুম্বাইয়ে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটানোর নেপথ্য নায়কেরা পুরস্কৃতও হয়েছে পাকিস্তানে। ভারতের পক্ষ থেকে প্রামাণ্য নথিপত্র দেয়া হলেও পাকিস্তানী সরকার লোক দেখানো কিছু বিবৃতি দেয়া ছাড়া কোন শাস্তি দেয়নি মুম্বাইয়ের সন্ত্রাসী হামলাকারীদের। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও এ বিষয়ে সেনাবাহিনী পরিচালিত পাক-সরকারের কোন মাথাব্যথা নেই। মুম্বাই হামলা নিয়ে ইসলামাবাদের আচরণ প্রমাণ করছে মুম্বাইয়ের ২৬/১১ হামলা ছিল পাকিস্তানের সরকারী মদদে ভয়ঙ্কর এক সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ড। মুম্বাই হামলা যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদদেই হয়েছিল, সেটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও আজ স্পষ্ট। তাই হামলার মূল চক্রী, লস্কর-এ-তৈয়বা (এলইটি)-র প্রধান হাফিজ সঈদ ও তার সঙ্গীদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে ব্যস্ত ইসলামাবাদ। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ড থেকে আরম্ভ করে গত চল্লিশ বছরে বিভিন্ন হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী এবং পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘এখন সময় এসেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবল জনমত সৃষ্টি করাÑ যাতে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এবং জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করা হয়। অন্যথায় ইসলামের নামে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসী হামলা উপমহাদেশসহ পৃথিবীতে বার বার ঘটবে। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া এখন সময়ের দাবি। কিন্তু চীনের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। পাকিস্তান চীনের অস্ত্র বিক্রির বিশাল বাজার, ফলে চীন সবসময় ভেটো দিয়ে পাকিস্তানকে রক্ষা করে। পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় তথা পৃথিবীতে জঙ্গীবাদী সন্ত্রাস রফতানি করছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে বাংলাদেশে প্রতিটি জঙ্গী হামলার সঙ্গে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইএসআই মদদপুষ্ট জামায়াত ইসলামী জড়িত।’ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, এদেশে জঙ্গী কারা, জঙ্গীদের কারা মদদ দেয় তা আমরা জানি। ধর্ম তাদের হাতিয়ার, ‘নাস্তিকতা’ তাদের একটি অজুহাত। কাউকে নাস্তিক আখ্যা দিতে পারলে কাজটা তাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যারা কথা বলবে, আমাদের বাঙালী সংস্কৃতির পক্ষে যারা কথা বলবে তারা তাদের শত্রু। ফলে তরুণ প্রজন্মকে আমাদের বোঝাতে হবে যে, পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, যারা পবিত্র ইসলাম ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ’৭১-এ এদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল। ওরা এখন একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমাদের দেশটা যেন ওদের মতো না হয়ে যায়। ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, জঙ্গীদের একটি অন্যতম টার্গেট হচ্ছে আদালত। কারণ তারা বাংলাদেশের সংবিধান মানে না। আর আদালত যেহেতু সাংবিধানিক আইন প্রয়োগ করে এবং উচ্চ আদালত সংবিধানকে সুরক্ষা দেয়, ফলে তারা সবসময় আদালত পাড়ার দিকে মনোযোগ রাখে। আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে কীভাবে জঙ্গীরা ২০০৫ সালের ১৪ নবেম্বর গাড়িতে বোমা মেরে ঝালকাঠির দুই বিচারক জগন্নাথ পাড়ে ও সোহেল আহমেদকে হত্যা করে। সুপ্রীমকোর্টের সামনে থেকে ন্যায়বিচারের প্রতীক জাস্টিশিয়া ভাস্কর্য সরানোর দাবিটিও কোন রাজনৈতিক দাবি ছিল না। জঙ্গীবাদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই তারা দাবিটি করেছিল। আস্কারা পেতে পেতে এখন তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলতে চাইছে! নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে নির্মূল কমিটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তখনই মাঠে নেমেছিল যখন মৌলবাদীদের ভয়ে কোন রাজনৈতিক দল মাঠে নামতে সাহস করছিল না। সুতরাং আবারও আমাদের সরব হতে হবে। ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে আমরা আবার মাঠে নামছি। বিজয়ের মাসে আমরা স্বাধীনতার শত্রুদের রাস্তায় নামতে দেব না।
×