ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মায়ের সংবাদ সম্মেলন

রায়হান হত্যাকাণ্ডের আলামত সংগ্রহ করার দাবি

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ১৫ নভেম্বর ২০২০

রায়হান হত্যাকাণ্ডের আলামত সংগ্রহ করার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ রায়হান আহমদ হত্যা মামলার মূল অভিযুক্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্য গ্রেফতার হলেও অভিযুক্তরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী না দেয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম। রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, আমার নিরপরাধ ছেলেকে কারা ধরে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে এবং তাকে কি জন্য, কারা নির্যাতন করেছে সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার হয়নি। এই মামলায় আশেক এলাহিসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা কেনইবা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিচ্ছেন না, এটা আমার কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে। তবুও আমি আশাবাদী, তদন্ত সংস্থা পিবিআই রায়হান হত্যার নেপথ্য কারিগরদের শনাক্ত করবে। রায়হান হত্যার আলামত সংগ্রহ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ১০ অক্টোবর রাতে রায়হানকে যখন পুলিশ ধরে নেয় তখন তার পরনে ছিল নীল শার্ট। অথচ পরদিন ১১ অক্টোবর সকালে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পড়ে থাকা রায়হানের মরদেহে ছিল লাল শার্ট। এছাড়া লাশ হস্তান্তরের সময় তার মোবাইল ফোনও ফিরিয়ে দেয়নি পুলিশ। রায়হান মারা যাওয়ার একমাস পরও এর কোনটিই ফিরে পাইনি আমরা। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারী সংস্থাকে আলামতগুলো উদ্ধার করতে হবে। নতুবা এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব হবে না। শনিবার দুপুরে নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ায় রায়হানের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে রায়হানের মা সালমা বেগম হত্যা মামলার সকল আলামত দ্রুত সংগ্রহ করার জন্য পিবিআইর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আটক হওয়ার পর আকবর জানিয়েছেন, উর্ধতন কর্মকর্তাদের বুদ্ধিতে তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন। আমরাও মনে করি রায়হান হত্যা এবং আকবরের পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে আরও অনেক পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত। রিমান্ডে আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জড়িত অন্যদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করতে হবে। রায়হান হত্যা মামলায় আকবর ছাড়াও তিন পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিবিআই। ঘটনার দিন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কর্মরত থাকা এএসআই আশেক এলাহি, কনস্টেবল টিটু চন্দু দাস ও হারুনুর রশীদ রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিতে রাজি হননি। তবে তারা জবানবন্দী না দিলেও এই মামলার সুষ্ঠু বিচারের ক্ষেত্রে তা কোন প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা জজ কোর্টের সাবেক পিপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। শনিবার রায়হানের মায়ের সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে তিনি বলেন, পুলিশের তদন্ত কমিটি নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরাও সাক্ষী দিয়েছেন। এখন আসামিরা জবানবন্দী না দিলেও তা বিচারে কোন প্রভাব ফেলবে না। এছাড়া এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর। ঘটনার সময় তিনি বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ ছিলেন। তার নেতৃত্বেই নির্যাতন চালানো হয় বলে সবাই বলেছেন। আটকের পর জনতার কাছে আকবরও স্বীকার করেছেন- ৫/৬জন মিলে মারধর করেছেন। ফলে তার জবানবন্দীটাই এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ। রায়হান হত্যার বিচারের দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসী মিলে গড়ে তুলেছেন ‘বৃহত্তর আখালিয়া (১২ হামছায়া) সংগ্রাম পরিষদ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রায়হান হত্যার তদন্তে কোন অবহেলা হলে বা কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হলে আরও কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা রায়হান হত্যার ন্যায়বিচার প্রত্যাশী। এই মুহূর্তে আমাদের প্রত্যাশা সুষ্ঠু বিচার। যাতে অপরাধীরা পার না পায়। তাই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কোন অবহেলা থাকলে সিলেটবাসী কাউকে ক্ষমা করবে না। রায়হান হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এলাকাবাসী রাজপথ ছাড়বে না। সেই সময় পর্যন্ত সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ছাড়াও রায়হান উদ্দিন হত্যার বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফয়েজ আহমদ, এ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিন আহমদ, এ্যাডভোকেট ফয়েজ উদ্দিন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস, ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জগদীশ দাস ও রায়হানের মামাত ভাই শওকত আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, গত ১০ অক্টোবর রাতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নেয়া হয় রায়হান আহমদকে। পরদিন সকালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন রায়হান। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথম থেকেই দাবি করা হচ্ছে ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে মারা গেছেন রায়হান। ১১ অক্টোবর রাতেই রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে ওই কমিটি নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে। ওই কমিটি দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন সদস্যকে প্রত্যাহার করে। এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের বহিষ্কৃত উপ পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন পালিয়ে গেলে গত ৯ নবেম্বর সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ১০ নবেম্বর তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
×