ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হবিগঞ্জে সড়ক বেহাল

প্রকাশিত: ২১:১৩, ২৭ অক্টোবর ২০২০

হবিগঞ্জে সড়ক বেহাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ, ২৬ অক্টোবর ॥ জেলার বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ ভায়া শিবপাশা সড়কের বেহাল অবস্থায় জনদুর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছেছে। এ সড়কের প্রায় ৪ কিলোমিটার অংশের সংস্কার কাজ গত জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান না হওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা বাজারে কর্দমাক্ত রাস্তাটিতে ধানের চারা রোপণ করে দুর্ভোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থানীয় জনতা। তারা শীঘ্রই নির্মাণ কাজ শেষ করে জনদুর্ভোগ নিরসনের দাবি জানিয়েছেন। জানা গেছে, দশ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ ভায়া শিবপাশা সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার অংশ েেমরামত কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। ব্যয় ধরা হয়েছিল পৌনে চার কোটি টাকা। কাজটি পান আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান। চুক্তি অনুযায়ী গেল জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরবর্তীতে মেয়াদ বাড়ানো হয় আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এ পর্যন্ত কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি। সরেজমিনে দেখা গেছে, চার কিলোমিটার রাস্তাজুড়েই খানাখন্দ। শিবপাশা বাজার অংশে হাঁটুকাদা। এতে যানবাহন চলাচলে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বাজারে আসা পথচারীদের চলতে হয় প্যান্ট হাঁটুর উপরে তুলে। এ অবস্থায় দ্রুত রাস্তার কাজটি সম্পাদন করার দাবি জানিয়েছেন তারা। বিক্ষোভ চলাকালে স্থানীয়রা বলেন, দ্রুত রাস্তার কাজ শেষ না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। হবিগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, করোনা সংক্রমণের কারণে রাস্তার কাজ শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে। ঠিকাদার মেয়াদ বাড়িয়েছেন। কাজের অগ্রগতি অনুযায়ী এখনও তার দেড় কোটি টাকার বিল পাওনা। সঠিকভাবে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি বিল দেয়া হবে না। সান্তাহার নিজস্ব সংবাদদাতা সান্তাহার থেকে জানান, পুনর্নির্মাণের পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আদমদীঘি-আবাদপুকুর সড়কের বেহাল অবস্থা হয়েছে। বর্তমানে দেখে মনে হয় সড়ক তো নয় যেন আমন আবাদের চষা জমি। উপজেলা সদরের বাজার থেকে মিটারগেজ রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং হয়ে কুসুম্বী পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে বড় বড় খানা-খন্দক সৃষ্টি হয়েছে। ধানসহ কৃষি পণ্যের বড় মোকাম আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ। মোকামটিতে যাতায়াতের এটিই প্রধান সড়ক। ফলে বেহাল অবস্থা মাড়িয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। জানা গেছে, ২০১৮ সালের শেষে শুরু করে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে এ সড়কের সংস্কার কাজ শেষ করে বগুড়ার এমএম বিল্ডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আদমদীঘি থেকে আবাদপুকুর পর্যন্ত ১৫কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাড়ে ৪কিলোমিটার অংশ আদমদীঘি উপজেলার। আদমদীঘি উপজেলা প্রকৌশল দফতর সূত্রে জানা গেছে, এই সাড়ে ৪কিলোমিটার সড়ক উন্নত ও টেকসই করে পুনর্নির্মাণের জন্য ব্যয় করা হয়েছে এক কোটি ৮২ লাখ টাকা। এছাড়া ১২ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৮ফুট প্রস্থ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। পুরনো ইটের খোয়া, নিম্নমানের বালু এবং নামমাত্র বিটুমিন ব্যবহার করে দায়সারাভাবে কাজ শেষ করে, সমুদয় বিল তুলে নিয়ে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কের কাজ চলার সময় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ সে সময়ের উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানো হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। উল্টো অভিযোগকারীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এ বিষয়ে বর্তমান উপজেলা প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, সে সময়ের উপজেলা প্রকৌশলী কিভাবে কাজটির বুঝে নিয়েছেন তা আমার জানা নেই। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি সরেজমিন সড়কটি পরিদর্শন করা হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে বড় বড় খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে এবং কোথাও কোথাও সড়ক দেবে গিয়ে যান চলাচলে ব্যাপক বিঘœ ঘটছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানের দুই পাশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করাায় দ্রুত নষ্ট হয়েছে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কাপ্তাই নিজস্ব সংবাদদাতা রাঙ্গুনিয়া থেকে জানান, কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের অনুন্নত ডংনালা এলাকায় পাহাড়ী জনপদে একটি সড়কের উন্নয়নের অভাবে পাঁচ গ্রামের মানুষ যোগাযোগে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। আর এ্যান্ড এইচ রোড থেকে হাতিমারা হয়ে ডংনালা পদুয়া বর্ডার পর্যন্ত সড়কটি কাঁচা। ইউনিয়নের ডংনালা, টংশীপাড়া, পরিগ্যাপাড়া, হাতিমারা, খ্যাংদংপাড়া গ্রামে যোগাযোগ রক্ষাকারী একমাত্র রাস্তা এটি। দীর্ঘ সময়েও সড়কটির উন্নয়ন না হওয়ায় ওই পাঁচ গ্রামের সাড়ে ৩ হাজার বসতির যোগাযোগ ব্যবস্থায় চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। ডংনালা টংশীপাড়া গ্রামের থোয়াই চিং বলেন, সড়কটি পাকা না হওয়ায় কোন যানবাহন চলে না। হেঁটে গ্রামের মানুষকে দূরে অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা সদর ও হাটবাজারে যেতে হয়। খুদে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না। ফলে এলাকার মানুষের সার্বিক জীবন মান উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির সময় পানির তোড়ে বিভিন্নস্থানে মাটির রাস্তার উপর পাহাড় ধস নামে। বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট স্রোতে রাস্তা ভেঙ্গে যায়। সড়কের কাছে বিস্তৃত বসতিগুলো ঝুঁকির মুখে পড়ে। পিচ্ছিল মাটির দুর্গম পথে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় সাধারণ মানুষকে। যোগাযোগের দুরাবস্থার কারণে দুর্যোগের সময়ও কোন সরকারী কিংবা বেসরকারী সংস্থার সাহায্য মিলে না এলাকাবাসীর ভাগ্যে। প্রাকৃতিক খেয়াল খুশির উপর নির্ভর করেই চলে গ্রামের মানুষের জীবন। থোয়াই চিং জানান, এলাকার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৭-১৮ সড়কটির উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সাংসদ উষাতন তালুকদার ডিও লেটার দেন। এরই ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্দেশে কাপ্তাই উপজেলা প্রকৌশলী কর্তৃক প্রাক্কলন তৈরি করে ২০১৮ সালের ১৮ জুলাই নির্বাহী প্রকৌশলী এলজিইডি রাঙ্গামাটির কাছে প্রেরণ করেন। কিন্তু প্রকল্পটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। ফাইলেই আবদ্ধ রয়েছে এই প্রকল্পটি।
×