ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

এক ঘণ্টার মধ্যেই তরুণীর জীবন রক্ষা

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ১১ অক্টোবর ২০২০

এক ঘণ্টার মধ্যেই তরুণীর জীবন রক্ষা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ পুলিশ যে চাইলেই পারে, আবারও তার প্রমাণ দিল। মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে এক তরুণীর জীবন রক্ষা করে চমকে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে পুলিশ। ওই তরুণী পরিচিত এক ছেলের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেলের শিকার হন। সুযোগ বুঝে ওই তরুণীর আপত্তিকর ভিডিও করে। তার সঙ্গে আরও কিছু আজেবাজে ছবি সংযোগ করে। পুরোপুরি একটি নোংরা ভিডিও তৈরি করে মেয়েটিকে টানা তিনদিন কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। উপায়ান্তর না দেখে মাসহ ওই তরুণী পুলিশের শরণাপন্ন হন। পুলিশ মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই সেই প্রতারক যুবককে ভিডিও ক্লিপসহ গ্রেফতার করে ফেলে। চমকপ্রদ এই ঘটনাটি ঘটেছে খোদ ঢাকার খিলক্ষেত থানা এলাকায়। গত ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা সাতটার দিকে এক তরুণী তার মাকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যান। ডিউটি অফিসারের সামনে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। মেয়ের সঙ্গে মাও কাঁদতে থাকেন। ডিউটি অফিসার তো রীতিমতো হতভম্ব। কান্নার কারণ জানতে চাইলে ওই তরুণী তা কোনমতেই বলতে রাজি হন না। শুধু বলেন, আমাদের ওসি সাহেবের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেন। করুণ আর্তনাদের কারণে সদয় হয়ে ডিউটি অফিসার ওসি সাহেবকে বিষয়টি অবহিত করেন। খিলক্ষেত থানার ওসি মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন তখন নিজ অফিসেই ছিলেন। তিনি দ্রুত তার রুম থেকে সব লোকজনকে খানিক সময়ের জন্য অন্যত্র সরে যেতে অনুরোধ করেন। এরপর যথারীতি মা আর মেয়ে ওসির সামনে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। তরুণী কাঁদতে কাঁদতে জানান, আমাকে ভিডিওটা এনে দেন। না হলে আমি আত্মহত্যা করব। ওসি মাথামু-ু কিছুই বুঝছেন না। তাদের শান্ত হয়ে বসে পুরো বিষয়টি খুলে বলতে বলেন। ওই তরুণীর বিবরণ মোতাবেক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসএ্যাপে আবির নামের এক যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে নিয়মিত চ্যাটিং বা যোগাযোগ বা মেসেজ আদান-প্রদান হতো। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। কিছুদিন তারা প্রেম করে। প্রেমের সম্পর্কের গভীরতার সূত্রধরে আবিরের সঙ্গে সে আবেগপ্রবণ হয়ে আপত্তিকর ভিডিও চ্যাট করেন। আবির সেই ভিডিও চ্যাট গোপনে নিজের মোবাইলে সেভ করে রাখে। কিছুদিন যেতে না যেতেই তার সঙ্গে অন্য ছেলের সম্পর্ক আছে বলে অপবাদ দিতে থাকে। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আবির তার সঙ্গে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়। তারপরেও সব স্বাভাবিকই চলছিল। গত ৩ অক্টোবর হঠাৎ তার হোয়াটসএ্যাপে আগে ধারণ করে রাখা সেই আপত্তিকর ছবি (আপত্তিকর ভিডিও চ্যাট) পাঠায় আবির। ওই তরুণীকে প্রথমে টানা কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। তাতে রাজি না হলে হোয়াটসএ্যাপে আবির তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতে থাকে। টাকা দিতে বা অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন না করলে ওইসব আপত্তিকর ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দিচ্ছে। টানা চারদিন আবিরকে নানাভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু আবির তাতে কোনক্রমেই রাজি হয়নি। এমন বর্ণনা দিতে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে ছিল তরুণী। তার সঙ্গে ওই তরুণীর মায়ের করুণ আর্তনাদ। ওই তরুণীর একটিই কথা, আমি ভূল করেছি। আমাকে যে শাস্তি হয় দেন। কিন্তু ডিভিওটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার আগে এনে দেন। ইন্টারনেটে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দিলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তাৎক্ষণিক এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় মামলা দায়ের হয়। শুরু হয় আবিরকে শনাক্ত করার কাজ। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে আবিরকে শনাক্ত করে ফেলে পুলিশ। ওইদিনই সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে আবিরকে মিরপুর-১ গোলচত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর আবিরকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ তার মেসে অভিযান চালায়। সেখান থেকেই সেই ডিভিও ক্লিপটি জব্দ করা হয়। ভিডিও ক্লিপটি মোবাইল ও ল্যাপটপে সেভ করে রাখা ছিল। আবিরকে কড়া জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই ভিডিও ক্লিপ আরও কোথায় আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপটি আর কোথাও নেই বলে জানায়। পুলিশও তল্লাশি করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরপর আবিরকে তার মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপসহ হাজির করা হয় খিলক্ষেত থানার ওসির সামনে। মাত্র সোয়া এক ঘণ্টার মধ্যে এমন ঘটনায় মা-মেয়ে দু’জনই রীতিমতো হতবাক। খিলক্ষেত থানার ওসি জানান, গ্রেফতারকৃত আবির একটি সংঘবদ্ধ সাইবার অপরাধ চক্রের সদস্য। সে দীর্ঘদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অনেক মেয়েকে এভাবে ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে আসছিল। আর আত্মহত্যা করতে হবে না বলে পুলিশের প্রতি চরম কৃতজ্ঞা জানিয়ে থানা ত্যাগ করেন ওই তরুণী ও তার মা। তাদের পুলিশ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে।
×