ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে দিশাহারা কৃষক

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

রংপুরে দিশাহারা কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ২৮ সেপ্টেম্বর ॥ রংপুর অঞ্চলে কয়েক দফা বন্যায় কৃষির প্রায় ১৭২ কোটি টাকার ক্ষতির পর গত সাতদিন ধরে টানা ভারি বৃষ্টিপাতে প্রায় ৮ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এর মধ্যে রোপা আমনের জমি হচ্ছে ৭ হাজার ৬৭৯ হেক্টর। কৃষি অফিসের দাবি বন্যার পানি দ্রুত নেমে গেলে আক্রান্ত জমির ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা তেমন নেই। রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২১ থেকে ২৪ সেপ্টেম্ববর পর্যন্ত চারদিনে এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে প্রায় ২৫০ মিলিমিটার। শুধু তাই নয় চলতি মাসে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যস্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সাড়ে ৫শ’ মিলিমিটার। রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩৩ মিলিমিটার। আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মোঃ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, বৃষ্টিপাত আরও দুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে শনি ও রবিবার ৭মদিনের মতো একটানা ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। জমির মধ্যে পানি প্রবেশ করায় এই নিয়ে মোট ৫ দফায় কৃষির ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। অনেকের তিনবার আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। অবশেষে বাইরে থেকে চারা কিনে এনে আবাদ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে বৃষ্টিতে ডুবে গেছে আমন ধানের জমি। এছাড়া পানিতে কলা বাগান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ফসল পানিতে নিমজ্জিত হওয়া মানে নষ্ট হওয়া নয়। যদি পানি ১ সপ্তাহের আগে সরে যায় তাহলে জমির ফসলের কোন ক্ষতি হবে না। তিনি আরও বলেন, জমির পানি যদি পরিষ্কার হয় তাহলে তেমন চিন্তা নেই। তবে যদি পানিতে কাদা মিশ্রিত হয় এবং তাহলে ফসল দ্রুত সারিয়ে তুলতে পানি স্প্রে করে কাদা ধুয়ে ফেলতে হবে। যদি বৃষ্টির পানি বেশি দিন স্থায়ী হওয়ার জন্য ফসলের ক্ষতি হয় তাহলে ওই জমিগুলোতে মাষকালাই, পেঁয়াজ, চীনা বাদামসহ আগাম রবিশস্য চাষ করার জন্য তিনি কৃষকদের পরামর্শ দেন। কৃষি অফিস সূত্র জানায়, প্রথম দফা বন্যায় (২০ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত) রংপুর অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৮ হাজার ২৯১ হেক্টর, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ১০৩ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষরের সংখ্যা হচ্ছে ৮২ হাজার ২৫২ জন। পরে পরপর দুই দফা বন্যায় রংপুরের পাঁচ জেলার ৬ হাজার ১৭২ দশমিক ২৪ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬৯ কোটি ৪৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৪ টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৮৯ হাজার ৮২৭ জন কৃষক। বগুড়া স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস থেকে জানান. অসময়ে অধিক বৃষ্টি আবার ভাদ্রের রোদে আমন আবাদের কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। একই অবস্থা সবজি চাষীদের। আমনের চারা বেড়ে ওঠার সঙ্গেই মাজরা পোকা আক্রমণ করেছে। ব্লাস্ট ও গোড়াপচা রোগও দেখা দিয়েছে। সবজি আবাদে অধিক বৃষ্টি ক্ষতি করছে। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন খুব বেশি জমিতে এই অবস্থা হয়নি। তারপরও আমন ও সবজির ফলন ভালই হবে। চলতি আমন মৌসুমে বগুড়া অঞ্চলে আমন আবাদের টার্গেট করা হয় ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭শ’৩৫ হেক্টর জমি। যা থেকে চাল উৎপাদন হওয়ার কথা ৫ লাখ ৬১ হাজার ৪শ’৮৫ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) জানায় কৃষক ধার্য করা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে আবাদ করেছে। যে পরিমাণ অন্তত ১ লাখ ৮০ হাজার ৪শ’৮৫ হেক্টর। আশা করা হচ্ছে সব মিলিয়ে অন্তত সাড়ে ছয় লাখ টন চাল উৎপাদন হবে। গত ক’বছর ধরে বগুড়া ধান আবাদে উদ্বৃত্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বগুড়ার চাল রফতানিও হয়েছে। মাজরা পোকা, ব্লাস্ট ও গোড়াপচা রোগের বিষয়ে কৃষকরা বলছেন, ওই রোগগেুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে গাছের ওপরের অংশের পাতার মধ্যে ধানের কুশি হয় না। শীষ না এলে ওই পাতা খড়ে পরিণত হয়। উৎপাদন কমে যায়। ধান গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলে রোগ বালাই বেশি হয়। যা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। নীলফামারী স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, আগাম আলুচাষী লালবাবুর মাথায় বাজ পড়েছে। টানা ৬ দিনের অতিমাত্রার বৃষ্টি তার রোপিত আগাম আলু খেতকে তলিয়ে দিয়েছে। অপরদিকে যারা আগাম আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করেছিল তাদেরও একই অবস্থা। আগাম আলু চাষের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলা। দেশের সর্বপ্রথম আলু বাজারে আসে এই উপজেলা থেকেই। আলু চাষীরা জানালেন উপজেলায় সেভেন, বারী-৪০, বারী-৪৬ ও গ্রানুলা জাতের আগাম আলু আবাদ হয়। আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহেই মঙ্গা বা অভাব তাড়ানোর আগাম আমন ধান ঘরে তুলেই আগাম আলু উৎপাদনে মাঠে নেমেছিল তারা। আগাম জাতের আলু রোপণের শুরুতেই ধাক্কা খেতে হয়েছে তাদের। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের অতিবৃষ্টিতে আলুর জমি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। সোমবার সরেজমিনে আলু চাষীরা জানান, গত ৬ দিনের টানা ও অতিবৃষ্টির কারণে তাদের প্রস্তুতকৃত আগাম আলু চাষের জমিগুলো পানির নিতে তলিয়ে আছে। কিছু কিছু জমির পানি নামলেও সেই জমি কাদা হয়ে রয়েছে। ঝলমলে কড়া রৌদ্র না পেলে জমি শুকাবে না, পানি নামবে না। ফলে আগাম আলু চাষ পিছিয়ে পড়ছে।
×