ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

কড়াইল বস্তির শিশু মীম হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

কড়াইল বস্তির শিশু মীম হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী ঢাকার বনানী এলাকার কড়াইল বস্তির বাথরুম থেকে বুধবার চার বছরের এক কন্যা শিশুর লাশ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। হত্যাকারী আর কেউ নয়, নিহত মীম আক্তারের বড় ভাই। বয়সে কিশোর এই হত্যাকারী বোন হত্যার দায় স্বীকার করেছে। বলেছে, পিতামাতা মীমকে বেশি আদর করত। এটি তার সহ্য হতো না। এজন্যই সে মীমকে হত্যা করে। যাতে মীমের অনুপস্থিতে পিতামাতা তাকে বেশি বেশি আদর করে। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে কড়াইল বস্তির একটি বাথরুম থেকে মীম আক্তার (৪) নামের ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। মীমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। চিকিৎসকদের ভাষ্য মোতাবেক, মীমকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বনানী থানায় নিহত শিশুর পিতা অজ্ঞাত খুনীদের আসামি করে মামলা করেন। মীমের পিতার নাম লিটন মিয়া। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। ভ্যানে করে পেয়ারা ও আমড়া বিক্রি করেন। মা রুখসানা আক্তার অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। তাদের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানাধীন পাড়াতলী এলাকার সিংরাতলী গ্রামে। পরিবারটি কড়াইল জামাই বাজার বস্তিতে হিমেলা বেগমের ঘরে প্রায় তিন বছর ধরে ভাড়ায় বসবাস করে। চার বছরের শিশুকে হত্যার পর লাশ বাথরুমে ফেলে দেয়ার ঘটনাটি আলোড়ন সৃষ্টি করে। রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লেঃ কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জানান, বোন খুন হলেও ভাই আল আমিন ওরফে সজিবের (১৪) মধ্যে কোন ভাবান্তর লক্ষ্য করা যাচ্ছিল না বরং তার মধ্যে এক ধরনের বাড়তি ফুরফুরে ভাব ছিল। ভাইকে যেখানে মর্মাহত থাকার কথা, সেখানে উল্টো চিত্র দেখে গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়। সন্দেহের বশবর্তী হয়েই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব-১ এর মাধ্যমে সজিবকে হেফাজতে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসতে থাকে মীম হত্যার রহস্য। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেঃ কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে মীমের বড় ভাই সজিবকে হেফাজতে নেয়া হয়। সজিব হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেয়। সজিবের ভাষ্য মোতাবেক, তারা দুই ভাই বোন। সে বড়। মীম ছোট। অথচ মা-বাবা তার চেয়ে মীমকে বেশি আদর করে। যেটি তার সহ্য হচ্ছিল না। সকালে মা কাজে যায়। পিতা ভ্যানে করে মালামাল বিক্রির জন্য বেরিয়ে যায়। এমন সুযোগে সে মীমকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা টিপে হত্যা করে। লাশ ঘরের খাটের নিচে রেখে দেয়। পরে সুযোগ বুঝে খানিক দূরের একটি বাথরুমে নিয়ে রেখে আসে। সজিব একটি স্থানীয় স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ত। ঘরে ফিরে পিতা দেখেন, মেয়ে নেই। তিনি মেয়ের সন্ধান করতে থাকেন। মেয়েকে না পেয়ে তিনি স্থানীয় মসজিদে মাইকিং করান। সকাল দশটার দিকে বাসার একটু দূরে গোসলখানায় শিশুটির লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ বেলা এগারোটার দিকে লাশ উদ্ধার করে। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, বিভিন্ন সময় মেয়ে দুষ্টুমি করলেও, পিতামাতাকে তাকে বকাঝকা করত না। অথচ সজিব সামান্য দুষ্টুমি করলেই তাকে পিতামাতা বকাঝকা এমনকি মারধর করত। এটিও তার পিতা মাতা ও বোনের ওপর[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশ ক্ষোভের একটি কারণ ছিল। এজন্য সজিবের ধারণা হয়, মীম যদি না থাকে, তাহলে পিতামাতা তাকে বেশি আদর করবে। সেই ধারণা থেকেই সজিব তার ছোট বোনকে হত্যা করে।
×