ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

টিউশন ফি দুই মাস বকেয়ায় ভর্তি বাতিল, প্রতিবাদ

বকেয়া পরিশোধ না হলে অনলাইন ক্লাস নয় মাস্টারমাইন্ডে!

প্রকাশিত: ১৮:৩০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

বকেয়া পরিশোধ না হলে অনলাইন ক্লাস নয় মাস্টারমাইন্ডে!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টিউশন ফি বকেয়া থাকায় অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করছে না ইংরেজি মাধ্যমে নামী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত মাস্টারমাইন্ড স্কুল। কেবল তাই নয়, টিউশন ফি দুই মাস বকেয়া হলে শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হবে বলে জারি করা হয়েছে নির্দেশনা। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুই মাসের টিউশন ফি পরিশোধ না করলে অনলাইন ক্লাষে প্রবেশ বন্ধসহ রেজিস্টার থেকে শিক্ষার্থীদের নাম বাদ দেয়া হবে। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে স্কুলটির অভিভাবক ফোরাম এক সংবাদ সম্মেলনে মাস্টারমাইন্ড স্কুল কর্র্তৃপক্ষের এসব কর্মকান্ড তুলে ধরেছেন। জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজ ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকদের পক্ষে শমী ইব্রাহিমসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। টিউশন ফি দুই মাস বকেয়া হলে শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হবে- স্কুলের জারি করা এমন নির্দেশনা তুলে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। স্কুল কর্তৃপক্ষের কর্মকান্ডে ক্ষুদ্ধ অভিভাবক ফোরামের নেতৃবৃন্দ বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের কর্মকান্ডে তারা ক্ষুব্ধ। কর্তৃপক্ষ এসব করছে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে। সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকরা বলেন, ৫০ শতাংশ টিউশন ফি নেয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে অভিভাবকরা আন্দোলন করছেন। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বেতন পরিশোধ না করলেও অনলাইনে যুক্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশ না মেনে গত ১৪ সেপ্টেম্বর টিউশন ফি আদায়ে নোটিশ করেছে। নোটিশে বলা হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুই মাসের বকেয়া পরিশোধ করতে না পারলে রেজিস্ট্রার থেকে নাম বাদ দেয়া হবে। এছাড়া যেসবইশক্ষার্থীর টিউশন ফি অভিভাবকরা দিতে পারেনি সেসব শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করতে দেয়া হচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, জুলাই মাসের বেতন যেসব শিক্ষার্থীরা দিয়েছে তারা অনলাইনে যুক্ত হতে পেরেছে, যারা জুলাই মাসের বেতন দেয়নি তারা যুক্ত হতে পারেনি। এরই মধ্যে অনলাইনে ক্লাস শুরু করে দেয়া হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর মাস্টারমাইন্ড কর্তৃপক্ষের নোটিশের পর অভিভাবকরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করেন। অধিদফতর ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেয়া অভিযোগ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান টিউশন ফি ছাড়াই অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মাস্টারমাইন্ড স্কুল অমানবিক আচরণ করছেন অভিভাবকদের সঙ্গে। নজিরবীহিন অমানবিক আচরণে অভিভাবকরা দিশেহারা। এক প্রশ্নের জবাবে অভিভাবকরা বলেন, করোনাভাইরাসের এ বৈশ্বিক মহামারিতেও মাস্টারমাইন্ড স্কুল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করছে না। গত মার্চ মাস থেকে ঘরবন্দি থেকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে যুক্ত রাখতে বারবার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ এ অনুরোধ আমলে না নেয়ায় আমরা রাজপথে নেমে আন্দোলন করতে বাধ্য হই, আদালতে রিট করি। আদালত থেকে আমাদের পক্ষে নির্দেশনা দিলেও তা অমান্য করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। দাবি আদায়ে অভিভাবকরা বড় ধরনের আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন বলেও হুশিয়ারী দিয়েছেন তারা। অভিভাবক শমী ইব্রাহিম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কিছু অভিভাবক নির্ধারিত সময়ে টিউশন পরিশোধ করতে পারছেন না। এ কারণে তাদের সন্তানদের অনলাইন ক্লাস থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার ওপর টিউশন ফি ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করতে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুই মাসের বকেয়া হলে ভর্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের এটি একটি অমানবিক আচরণ, আমরা তা মেনে নেব না। তিনি বলেন, আমরা চাই সকল শিক্ষার্থীকে ক্লাস করার সুযোগ দিতে হবে। আর্থিক সমস্যায় থাকা অভিভাবকদের কাছে কিস্তিতে টিউশন ফি নেয়ার প্রস্তাব জানানো হয়েছে, সেটিও কর্তৃপক্ষ মানছে না। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি মেনে নেয়া না হলে নতুনভাবে আন্দোলন শুরু করা হবে। এদিকে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, স্কুল বন্ধ থাকলেও টিউশন ফির সঙ্গে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ না দিলে টিউশন ফি গ্রহণ করা হচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও প্রতিমাসে পরীক্ষার ফি আদায় করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে সন্তানদের মাসিক বেতনের সঙ্গে নানা ধরনের ফি বাবদ অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন অভিভাবকরা। কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফরহাদ হোসেন বলছেন, আমরা ফির জন্য অভিভাবকদের চাপ দিচ্ছি না। ২০ শতাংশের মতো অভিভাবক ফি পরিশোধ করছেন। এজন্য আমরা শিক্ষকদের আগস্টের বেতন পর্যন্ত দিতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য ফি আদায় করা হচ্ছে না। শুধু ভবন সংস্কার ও ল্যাব ফি আদায় করা হচ্ছে।
×