ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্যোগে পাল্টে যাচ্ছে পিরোজপুর

প্রকাশিত: ২০:১১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

দুর্যোগে পাল্টে যাচ্ছে পিরোজপুর

নিজস্ব সংবাদদাতা, পিরোজপুর, ২০ সেপ্টেম্বর ॥ একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের নদী ভাঙ্গন ও বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হওয়ায় পাল্টে যাচ্ছে এ জেলার ভৌগোলিক মানচিত্র। প্রতিনিয়ত ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, সাইক্লোন, নদী ভাঙ্গন, অতি বর্ষণ, জোয়ার ও বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধকে মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হচ্ছে এ জনপদের প্রান্তিক লাখ মানুষকে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগে নদীপাড়ের শতশত নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী পানিতে ভাসছে আবার পানিতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছরই রাক্ষসি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে তাদের মাথা গোজার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে কাঁচা ঘর-বাড়ি। আবার দুর্যোগ কেটে গেলে নতুন করে বাঁধতে হয় ঘর। ভাঙ্গা-গড়ার এই দোলাচলে তাদের জীবনযাপন। পিরোজপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রমত্তা কচা,কালীগঙ্গা,সন্ধ্যা ও বলেশ্বর নদীরপাড়ে বসবাস করছে জেলে ও মৃৎ শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজারও পরিবারসহ ভূমিহীন নদী সিকস্তি মানুষ। ভরা জোয়ারে সারাবছর ভোগান্তি থাকলেও বর্ষা মৌসুমে বেড়ে যায় কয়েকগুণ। নদী থেকে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে যেমন বাড়িঘর প্লাবিত হয় তেমনি নদীগর্ভে বিলীন হয় হাজারো ঘর-বাড়ি। সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ,অতি বর্ষণ ও জোয়ারের পানি কয়েকফুট বৃদ্ধি পেয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেড়িবাঁধগুলো। এতে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্বরূপকাঠী,কাউখালী,মঠবাড়িয়া ও পিরোজপুর সদরসহ নদীপাড়ের কয়েক লাখ মানুষ। স্বরূপকাঠী সন্ধ্যা নদীপাড়ের বাসিন্দা হাচান সিকদার বলেন, বিভিন্ন সময় বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন,আন্দোলন সংগ্রাম করেও সুরাহা হয়নি সমস্যা সমাধানের। আমাদের এলাকায় প্রায় ৩০বছরে নদীতে সর্বস্ব হারিয়ে পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে কিংবা সরকারী রাস্তার পাশে। শুধু ঘর-বাড়িই নয় ঝুঁকিতে আছে বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী, দোকানপাট। কাউখালীর কালীগঙ্গা নদীপাড়ে গড়ে ওঠা মৃৎ শিল্পের কারিগর দিপীকা দাস তাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বছরের পর বছর ধরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার আশ্বাস দিয়েছেন সরকারী কর্মকর্তা,এমপি ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে বাস্তবে দেখিনি কোন কার্যক্রম। স্থানীয় সামাজিক উন্নয়ন কর্মী ও কালেরকণ্ঠ শুভসংঘের স্বরূপকাঠী উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন হালদার জানান, দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে পিরোজপুরের কয়েক শ’ গ্রাম। আর টেকসই ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও নদী শাসনের কথা জানান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মহিউদ্দিন মহারাজ। বেড়িবাঁধের সঙ্গে নদী শাসন করা না হলে, শুধুমাত্র মাটির তৈরি বেড়িবাঁধ কোন কাজেই আসবে না, এমনটাই মনে করছেন তিনি। নদীপাড়ের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে পানি উন্নয়ন বোর্ড অচিরেই নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকাসমূহ চিহ্নিত করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমনটাই আশা স্থানীয়দের।
×