ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

‘গল্পনির্ভর কাজে গুরুত্ব দিতে হবে’

প্রকাশিত: ০০:০৮, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

‘গল্পনির্ভর কাজে গুরুত্ব দিতে হবে’

রোবেনা রেজা জুঁইয়ের ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল সঙ্গীতশিল্পী হবেন। গান করে শ্রোতাদের হৃদয় জয় করবেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার সেই স্বপ্ন পাখির মতো দিগি¦দিক ঘুরতে থাকে। এক সময় জুঁই বাসা বাঁধেন অভিনয় শিল্পের ঘরে। বর্তমানে গান মিউট করে চলছে তার অভিনয়ের কারিশমা। দর্শক মুগ্ধ জুঁইয়ের সাবলীল অভিনয়ে। যে কারণে অভিনয়ে দারুণ ব্যস্ত তিনি। সমানতরাল করে চলেছেন- নাটক, টেলিফিল্ম এবং একের পর এক ধারাবাহিক! নিজের স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে আনন্দকণ্ঠকে জুঁই বলেন, ছোটবেলা স্বপ্ন দেখতাম সঙ্গীতশিল্পী হব। গান খুব পছন্দ করতাম। যখন কথা বলতে শুরু করি তখন থেকেই গুনগুনিয়ে গাইতাম। গলায় বেশ ভালই সুর ছিল। যখন একটু বড় হলাম তখন নিজেও উপলব্ধি করি গান খারাপ করছি না। তখন আরও ভাললাগা বেড়ে যায়। তবে সে সময়ে পরিবারে পড়াশোনার গুরুত্ব বেশি ছিল। যার কারণে গানে সময় দিতে পারিনি। পরবর্তীতে যুদ্ধ করে গানের স্কুলে ভর্তি হই। তবে নিয়মিত হতে পারিনি। তাই বলে আক্ষেপ নেই। সম্প্রতি অভিনেতা রওনক হাসান পরিচালিত ‘বিবাহ হবে’ প্রথম ধারাবাহিকে অভিনয়ের পাশাপাশি নাটকের টাইটেল গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। এটিই প্রথম নয় এর আগেও নাটকের একটি টাইটেল গানে কণ্ঠ দিয়েছেন জুঁই। যদিও নাটকটি এখনও প্রচার হয়নি। তবে এটি প্রচার হওয়া প্রথম গান। রওনক হাসানের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে গানটি অবমুক্ত হবার পর বেশ সাড়া পাচ্ছেন। ৬ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাভিশনে তারকাবহুল ধারাবাহিকটি প্রচার শুরু হবে। জুঁইয়ের বর্তমান ব্যস্ততা ‘এক কাপ চা’ ঘিরে। তবে এটি কোন নাটক নয়। সম্প্রতি এ অভিনেত্রী উত্তরা একটি কফি শপ চালু করেছেন। নাম দিয়েছেন ‘এক কাপ চা’। কাজের ফাঁকে এখানে সময় দিচ্ছেন তিনি। শূটিং না থাকলে এখানে নিয়মিত পাওয়া যাবে তাকে। গেল ঈদ-উল-আজহার তিনটি নাটকে জুঁইকে দেখা গেছে। ঈদের সাধারণ ছুটি কাটিয়ে শূটিংপাড়া মুখরিত হলেও এখনও শূটিংয়ে অংশ নেননি তিনি। তবে আগামীকাল থেকে একটি নাটকের শূটিংয়ে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। নতুন ধারাবাহিকের চরিত্র প্রসঙ্গে জুঁই বলেন, রুপালী ও দিপালী দুই বোন। রুপালীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। তবে যার সঙ্গে রুপালীর বিয়ে ঠিক হয়েছে সে ছোট বোন দিপালীকে দেখে বিয়ে করতে রাজি হয়। তবে বিয়েতে এসে দেখেন দিপালী ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শেষমেষ বিয়েটি ভেঙে যায়। আরও কিছু নাটকীয়তার মধ্যে এগোতে থাকে গল্পটি। দর্শক নাটকটি উপভোগ করবে। শোবিজের শুরু গল্প জানতে চাইলে জুঁই বলেন, দুই হাজার দশ সালে শোবিজে কাজ শুরু করি। আগামী অক্টোবরে পথচলার দশ বছর হতে যাচ্ছে। প্রথমে নিজেও কনফিউজড ছিলাম আমি পারব কিনা। সে সময় চর্চাও ছিল না। স্কুল-কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতাম। সেই জায়গায়ই সীমাবদ্ধ ছিল। সেখান থেকে শোবিজের প্রতি ভালবাসা শুরু। নাসির আল মনির পরিচালিত ‘সিমিলার টু’ শিরোনামের নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু করি। কাজটি করার পর এডিটিং হবার পর তারা আমার কাজে ভীষণ সন্তুষ্ট হয়। এরপর শামীম জামানের প্রযোজনায় কবির বাবু পরিচালিত ‘জামাই মেলা’ ধারাবাহিকে কাজ করি। তারাও কাজের প্রশংসা করেন এবং অনুপ্রেরণা দেন। এরপর আস্তে আস্তে কাজের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে ব্যস্ততা একটু বাড়ে। বারো সালে আরও দিগুণ ব্যস্ততা শুরু হয়। সেই থেকে শুরু তার পরের গল্প সবারই জানা। টার্নিং পয়েন্ট কোন নাটক? মাসুদ সেজান পরিচালিত ‘রেড সিগন্যাল নাটক প্রচারের পর পরিচিতি আসে। সেখানে অফিস সহকারীর একটি চরিত্রে অভিনয় করি। সেজান ভাইও আমার অভিনয় খুব পছন্দ করেন। গান নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা আছে? গানের জন্য চর্চা খুব জরুরী। নিয়মিত রেওয়াজ না করলে সম্ভব না। সে চর্চার তো সুযোগ নেই। তবে এখনও ভাললাগে গাইতে। ভাললাগা থেকে নাটকের টাইটেল গান করেছি। নিয়মিত না হতে পারলেও বছরে বা দিবস কেন্দ্রিক গানে পাওয়া যাবে। বর্তমান নাটকে অনেক চরিত্র হারিয়ে যেতে বসেছে। কেন্দ্রীয় চরিত্রের চাপে পার্শ্বচরিত্রগুলো কমে গেছে। এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। আপনি বিষয়টা কীভাবে দেখেন? ছোটবেলা পরিবার কেন্দ্রিক নাটক বেশি দেখতাম। পাশাপাশি পার্শ্বচরিত্র থাকত বর্তমানে তা সংখ্যায় কম। এখনকার নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্রকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। পার্শ্বচরিত্র সেভাবে পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও সংখ্যায় কম। বরাবরই নির্মাতাদের কাছ থেকে শুনতে হয় বাজেট স্বল্পতার কারণে পার্শ্বচরিত্র ও পারিবারিক কেন্দ্রিক নাটক কম হয়। এতে করে দর্শকও অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একটা পরিবারের মা, বাবা, ভাই-বোনসহ অনন্য মানুষ না থাকলে একটি চরিত্র উন্মোচন হয় না। পরিবার কেন্দ্রিক নাটকে দর্শককে অনেক কিছু দেখানো যায়। কিন্তু চরিত্র না থাকলে সেটি অভিনেত্রী হিসেবে আমি দেখাতে পারছি না। যার ফলে দর্শকও অনেক কিছু হারাচ্ছে। আমি দর্শক হিসেবে পরিবার ও গল্পনির্ভর নাটক খুব মিস করি। সাম্প্রতিককালে নাটকের মূল ঘাটতি কি বলে মনে করেন? গল্পের ঘাটতি ছিল তা কাটিয়ে উঠতেছে। তবে এ সময়ে সবচেয়ে বড় ঘাটতি বাজেট। নাটকের বাজেট বাড়াতে হবে। বিশেষ দিবসে বেশি বাজেট না দিয়ে সেটি সারা বছর দিলে আরও ভাল গল্পনির্ভর কাজ করা সম্ভব। প্রায়শই শুনতে হয় শোবিজের বিচ্ছেদের সংসার। তবে মোশাররফ করিম-রোবেনা রেজা জুঁই শোবিজের আদর্শ দম্পতি বলা চলে। ২০০৪ সালে ভালবেসে বিয়ে করেন তাঁরা। তার আগে দীর্ঘ চার বছর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বর্তমানে তাদের সংসার জীবন সুখে কাটছে। জুুঁইয়ের কাছে জানতে চাই বিয়ের আগে এবং পরে মোশাররফ করিমের মধ্যে পার্থক্য কতটা চোখে পড়ে? সে রকম পরিবর্তন চোখে পড়ে না। মোশাররফ আগে থেকেই আনমনা, মনভোলা মানুষ। বিয়ের আগে এতটা ব্যস্ত ছিল না। তখন অনেক সময় দিতে পাড়ত। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বের হতে পারতাম। একসঙ্গে বসে ছবি দেখতাম। আমাকে কবিতা আবৃত্তি করে শোনাত। তবে এখন চাইলেও সেটি সম্ভব না। মাঝে মাঝে এ নিয়ে খুব মন খারাপ হয়। তবে দর্শকের কথা চিন্তা করে পরক্ষণে মন ভাল হয়ে যায় কারণ দর্শকের জন্যই আমরা, আমাদের জন্যই দর্শক। তাদের ভালবাসার গুরুত্ব দিতে হবে। তবে পুরনো সময়গুলো খুব মিস করি। যোগ করে তিনি বলেন, অভিনেতা মোশাররফ করিমের অভিনয় সবাই দেখেছে তবে সে যে কত ভাল লেখে সেটা কেউ দেখেনি। লেখক মোশাররফ করিমকে যদি তার পাঠকরা না দেখতে পায় তাহলে অনেক কিছু মিস করবে! রোবেনা রোজা জুঁই নাকি জুঁই করিম কোন পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? রোবেনা রেজা জুঁই করিম পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এই নামেই সব জায়গায় বড় হয়েছি। সাম্প্রতিককালে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের কদর বেড়েছে। রয়েছে বিতর্কও। জুঁই ডিজিটাল মাধ্যমে কাজকে পজিটিভভাবেই দেখছেন। তবে নিজস্ব সংস্কৃতি মাথায় রেখেই সবার কাজ করতে হবে। আমাদের দর্শক যে ধরনের সংস্কৃতির সঙ্গে অভ্যস্ত সে দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সময়ের পরিবর্তন মেনে নিতে। মাধ্যম বিষয় না আমার উদ্দেশ্য কি, আমি কি দেখাতে চাই সেটি বড় বিষয়। যুগের সঙ্গে অনেক কিছুররই পরিবর্তন হবে। তবে সেটি মেনে নিয়ে দর্শকের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে। বাংলা নাটকের ভবিষ্যত নিয়ে অনেকেই নানা রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তবে জুঁই মনে করেন আগের চেয়ে অনেক ভাল নাটক নির্মাণ হচ্ছে। সামনে আরও ভাল গল্পনির্ভর কাজ হবে।
×