ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২৪ জুলাই ২০২০

বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বন্যা দুর্গত এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ জারি করেছে পুলিশ সদর দফতর। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে জেলা ও থানা পুলিশকে নৌ পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করতে বলা হয়েছে। কারণ, বন্যা দুর্গত এলাকায় নৌ ডাকাতের তৎপরতা বাড়তে পারে। করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক মানুষই এখন অভাবগ্রস্ত। এতে করে অধিকহারে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেদিক বিবেচনা করে বন্যা দুর্গত এলাকায় যাতে কোন ধরনের নৌ ডাকাতির ঘটনা না ঘটে এজন্য পুলিশের সংশ্লিষ্ট সকল ইউনিটকে বিশেষভাবে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে বন্যা দুর্গতদের গৃহপালিত পশু-পাখি চুরি বা ডাকাতি হওয়ার সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে এমন নির্দেশনা জারি করেছে পুলিশ সদর দফতর। জেলা ও থানা পুলিশকে প্রয়োজনে নৌকা বা ট্রলার বা স্পীড বোট বা ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা ভাড়া করে হলেও বন্যা কবলিত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মোতাবেক, দেশে বর্তমানে প্রায় ২২টি জেলায় বন্যা হচ্ছে। ভারি বর্ষণের কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ছে। জাতিসংঘের ঘোষণা মোতাবেক, এবারের বন্যা ১৯৮৮ সালের বন্যার চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বানভাসি মানুষের জন্য মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার কারণে মানুষের স্বাভাবিক কারণেই আয়-রোজগার কমে গেছে। এর মধ্যে যেসব এলাকায় বন্যা হচ্ছে সে এলাকার মানুষের সবকিছুই বন্ধ রয়েছে। তারা শুধু প্রাণে বাঁচতে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন। পুলিশ সূত্র বলছে, বন্যার কারণে অনেকেই তাদের গৃহপালিত পশু-পাখি, ধান-পাটসহ অন্যান্য সম্পদ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই ফেলে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। এমন সুযোগ কাজে লাগাতে পারে নৌ ডাকাত বা নানা ধরনের অপরাধীরা। রাতের আঁধারে ট্রলার দিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে থাকে। অতীতেও বিভিন্ন এলাকায় বন্যার সময় নৌ ডাকাতের উৎপাত বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। বর্ষা মৌসুমে নৌ ডাকাতের তৎপরতা বরাবরই লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে চরাঞ্চলে এ ধরনের অপরাধ তুলনামূলক বেশি ঘটে। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিক কারণেই মানুষের মধ্যে অভাব রয়েছে। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই অপরাধের পথ বেছে নিয়েছেন। আর বর্ষা মৌসুমের সুযোগে তৎপর হয়ে উঠছে নৌ ডাকাতরা। নৌ ডাকাতের তৎপরতা বেশি থাকা এলাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে দেশের অনেক জেলাকে। ঝুঁকি বিবেচনা করে টহল জোরদার করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নৌ ডাকাতদের প্রধান টার্গেট নদ-নদীর তীরবর্তী গ্রাম। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির কারণে দেশের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় অন্যান্য সময় জেলা বা থানা পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকে। বর্তমানে বন্যা কবলিত এলাকায় সেই পরিস্থিতি নেই। এজন্য জেলা ও থানা পুলিশকে প্রয়োজনে নৌকা বা ট্রলার বা স্পীড বোট বা ইঞ্জিন চালিত বড় বোট ভাড়া করে হলেও বন্যা কবলিত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে নৌ পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারণ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা কবলিত হওয়ার কারণে নৌ ডাকাতরা তাদের টার্গেটের স্থান পরিবর্তন করতে পারে। সামনে ঈদ থাকায় বানভাসিদের অরক্ষিত থাকা গৃহপালিত পশু-পাখি চুরি বা ডাকাতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এজন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ। নৌ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই যেসব এলাকায় নৌ ডাকাতের তৎপরতা বেশি থাকে সেসব এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। নৌ ডাকাতদের অধিকাংশই নদ-নদীর আশপাশের গ্রামে বা নির্জন জায়গায় আবার জনাকীর্ণ স্থানেও বসবাস করে থাকে। এজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বন্যায় পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের সব বন্যা কবলিত এলাকাকে নৌ ডাকাতির জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে নৌ পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোল্যা নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, সাধারণত যেসব নদ-নদীতে ডাকাতদের তৎপরতা থাকে বা ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটে সেসব নদ-নদীর আশপাশের গ্রামকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়েছে। এসব এলাকায় সর্বক্ষণিক টহল দেয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এবার বন্যার কারণে কৌশল পাল্টাতে হচ্ছে। কারণ দেশের যেসব এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে, সেসব এলাকায় নৌ ডাকাতদের তৎপরতা বাড়তে পারে। কারণ নৌ ডাকাতরা তাদের টার্গেটের স্থান পরিবর্তন করার সুযোগ পেয়েছে। এজন্য অন্যান্য ঝুঁিকপূর্ণ এলাকার পাশাপাশি বন্যা দুর্গত এলাকায়ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি অগ্রাধিকারভিত্তিতে দেখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জেলা ও থানা পুলিশের সঙ্গে তারা সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
×