ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নবজাতকের লাশ কবর থেকে তুলে ফেলে দেয়ার বিচার দাবি

প্রকাশিত: ২৩:০১, ১৩ জুলাই ২০২০

নবজাতকের লাশ কবর থেকে তুলে ফেলে দেয়ার বিচার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক নবজাতক শিশুর লাশ কবর থেকে তুলে রাস্তায় ফেলে দেয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন। এ ঘটনাকে বাংলাদেশে ঘৃণাপ্রসূত ধর্মীয় বিদ্বেষ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক ন্যক্কারজনক বিরল নজির অভিহিত করে সংস্থাটি বলেছে, ভিন্নমত ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা ও দমন-পীড়নের যে সংস্কৃতি দেশে চলমান, কবর থেকে তিনদিনের শিশুর লাশ তুলে রাস্তায় ফেলে দেয়া সেটির চূড়ান্ত ও নগ্ন বহির্প্রকাশ। সংস্থাটি বলেছে, কেবল ভিন্নমতাবলম্বী পরিবারে জন্মগ্রহণ করার ‘অপরাধে’, উগ্রবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক এক নবজাতকের লাশকে ‘শাস্তি’ দেয়া এবং এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আইন-শৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের নতজানু ভূমিকা- উভয়ই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিপরীত প্রবণতা। তাই আর্টিকেল নাইনটিন কবর থেকে লাশ তুলে ফেলার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানায়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থার বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘বাংলাদেশে গত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন জেলায় হামলা ও সামাজিক নিগ্রহের শিকার হয়ে আসছেন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা। কেবল ভিন্নমতাবলম্বী হওয়ায় তাদের উপাসনালয় ও বাড়িঘর পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে রাষ্ট্র কারও সঙ্গে বৈষম্য করবে না। আবার সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকারও দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ভূমিকা নিলে ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত এসব হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটতো না। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় একটি হাসপাতালে গত ৭ জুলাই আহমদিয়া সম্প্রদায়য়ের এক মেয়ে শিশুর জন্ম হয়। নির্ধারিত সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হওয়ায় নানা জটিলতার কারণে গত ৯ জুলাই শিশুটি মারা যায়। ওইদিনই শিশুটির পরিবার সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের ঘাটুরা গ্রামের সরকারী কবরস্থানে লাশ দাফন করে। কিন্তু স্থানীয় কিছু লোক ওই কবরস্থানে আহমদিয়াদের কাউকে দাফন করা যাবে না জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করে লোক জমায়েত ঘটায়। পরে ওই নবজাতকের মরদেহ কবর থেকে তুলে কবরস্থানের বাইরের সড়কে ফেলে রাখে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসা পুলিশ লাশ তোলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে আহমদিয়াদের জন্য নির্দিষ্ট কবরস্থানে শিশুর লাশ পুনরায় দাফনের ব্যবস্থা করে। এ ঘটনায় ১১ জুলাই পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট থানায় কেউ কোন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেনি। ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও ধর্মীয় বিশ্বাসপ্রসূত ঘৃণা, বিদ্বেষ ও সহিংসতা মোকাবেলায় ২০১১ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে (১৬/১৮) ও সাধারণ অধিবেশনে (৬৬/১৬৭) দুটি রেজ্যুলেশন সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। কাজেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন এ ঘটনায় স্বপ্রণোদিত ব্যবস্থা গ্রহণের দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না। তাই কবর থেকে শিশুর লাশ তুলে ফেলার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও অবাধে তাদের মত তথা ধর্ম পালনের অধিকার সুনিশ্চিত করার দাবি করছে আর্টিকেল নাইনটিন।
×