ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় কাউন্সিল না করায় বিএনপি নেতারা বেকায়দায়

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ১৩ জুলাই ২০২০

জাতীয় কাউন্সিল না করায় বিএনপি নেতারা বেকায়দায়

শরীফুল ইসলাম ॥ সময়মতো জাতীয় কাউন্সিল না করায় বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। বারবার সময় বাড়িয়েও এতদিন কেন কাউন্সিল করেনি নির্বাচন কমিশন থেকে এমন কথা শুনতে হচ্ছে দলটিকে। অন্যদিকে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি হলে যারা পদপ্রত্যাশী তারাও দলের সিনিয়র নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি ঘরেবাইরে চাপের মুখে। সূত্র মতে, সম্প্রতি জাতীয় কাউন্সিলের জন্য নতুন করে সময় বাড়ানোর দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যায় বিএনপি নেতারা। কিন্তু তাদের এ দাবির কথা নির্বাচন কমিশন ভালভাবে নেয়নি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে ৩ বছর পর পর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জাতীয় কাউন্সিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই ১ বছর ৪ মাস আগে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার সময় পার হয়ে যাওয়ার পর বেশ ক’বার সময় বাড়িয়ে দিলেও এতদিনে কেন তারা কাউন্সিল করতে পারেনি সে কৈফিয়ত চাওয়া হয় তাদের কাছে। এতে বিব্রত হন বিএনপি নেতারা। পরে বিষয়টি দলীয় হাইকমান্ডকেও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনে যাওয়া ওই নেতারা। তারপরও জাতীয় কাউন্সিলের বিষয়ে দলীয় হাইকমান্ড ইতিবাচক কোন সাড়া দিচ্ছে না। এমনকি করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল করবে এমন আশ্বাসও দেয়া হচ্ছে না। অপর এক সূত্র জানায়, বিএনপির পরবর্তী নির্বাহী কমিটিতে নতুন স্থান পেতে দুই শতাধিক নেতা জাতীয় কাউন্সিলের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের সঙ্গে অপেক্ষায় রয়েছেন সংস্কারপন্থী কিছু বিএনপি নেতা। তাদের দলীয় হাইকমান্ড আগেই পরবর্তী কমিটিতে স্থান দেয়ার আশ্বাস দিয়ে রেখেছে। এ ছাড়া যারা ৫৯২ সদস্যের বর্তমান নির্বাহী কমিটির অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন তারাও ভাল ভাল পদে যাওয়ার জন্য কাউন্সিলের অপেক্ষায়। তাই সময়মতো সব রাজনৈতিক দল জাতীয় কাউন্সিল করে ফেললেও বিএনপি তা না করায় দলের এসব পদপ্রত্যাশী নেতারা সিনিয়র নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। তবে হাইকমান্ড নাখোশ হতে পারে ভেবে তারা প্রকাশ্যে কিছুই বলছেন না। এক সময় ছাত্রদল করে পরে মহিলা দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করার কথা জানিয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপির বিগত জাতীয় কাউন্সিলের পর যে কমিটি ২০১৬ সালে গঠিত হয় সেই কমিটিতে স্থান দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কয়েক দফায় বিশাল কমিটি ঘোষণা করা হলেও আমার নাম না দেখে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন আমাকে বলা হয় হতাশ না হয়ে বর্তমানে যেখানে আছি কাজ করে যেতে। পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিলের পর যে কমিটি হবে সে কমিটিতে অবশ্যই নাম থাকবে। এর পর থেকে আশায় বসে আছি। দলীয় কর্মকা-েও সক্রিয় রয়েছি। কিন্তু আগের কাউন্সিলের পর ৪ বছর ৪ মাস হয়ে গেলেও বিএনপির নতুন কাউন্সিল না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছি। কারণ, কখন দলের জাতীয় কাউন্সিল হবে আর কখন নতুন কমিটি হবে। আর নতুন কমিটি হলেও সেই কমিটিতে স্থান পাব কিনা এমন ভাবনা মনের মধ্যে কাজ করছে। বর্তমানে বিএনপির একটি অঙ্গসংগঠনের ভাল পদে আছেন এমন এক নেতা জানান, ছাত্ররাজনীতি শেষ করে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে আছি দীর্ঘদিন ধরে। আশায় আছি বিএনপির পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিলের পর নতুন কমিটিতে স্থান পাই কিনা। সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বেশ ক’জন আশ্বাস দিয়েছেন নতুন কমিটি হলে স্থান হবে। তাই এখনও দলের সকল কর্মকা-ে সক্রিয় থাকলেও কখন নতুন জাতীয় কাউন্সিল হবে তা ভেবে মাঝেমধ্যে মন খারাপ হয়ে যায়। আমরা চাই করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই যেন বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলকে ঢেলে সাজাতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা জাতীয় কাউন্সিলের দাবি করলেও এ বিষয়ে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমান রাজি না থাকায় জাতীয় কাউন্সিল করতে পারছে না বিএনপি। এ কারণে দলের ভবিষ্যত নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পরই বিএনপির বেশ ক’জন সিনিয়র নেতাসহ একটি বড় অংশ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দল পুনর্গঠনের দাবি জানায়। খবর পেয়ে সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও এ দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে। এক পর্যায়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও নজরুল ইসলাম খানসহ বেশ ক’জন সিনিয়র নেতা প্রকাশ্যেই জাতীয় কাউন্সিল ও দল পুনর্গঠনের কথা বলতে থাকেন। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমান দলের সিনিয়র নেতাদের এ ভূমিকায় নাখোশ হন। পরে দলের ক’জন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে তারেক রহমান জাতীয় কাউন্সিল পরে সুবিধাজনক সময়ে করার নির্দেশ দেন। দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ আরও ১ বছর ৪ মাস আগেই শেষ হয়ে গেছে। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিলের পর ৫৯২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করে বিএনপি। গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতায় ৩ বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল করে নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন করতে হয়। সে হিসেবে ২০১৯ সালের ১৯মার্চের মধ্যেই জাতীয় কাউন্সিল করে কমিটি পুনর্গঠনের কথা থাকলেও তখন জাতীয় কাউন্সিল করার বিষয়ে দলীয় হাইকমান্ডের অনুমতি পাওয়া যায়নি। এখন দেশে চলছে করোনাভাইরাস মহামারী। এ পরিস্থিতিতে কবে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হবে তাও কেউ বলতে পারছে না। বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীই চান জাতীয় কাউন্সিল করে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন করা হোক। বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও এমনটিই চায়। বিশেষ করে সংস্কারপন্থী বলে পরিচিত যেসব নেতা এখনও কমিটিতে স্থান পাননি, তারা চান নতুন কাউন্সিলের পর কমিটি পুনর্গঠন করা হোক। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কাউন্সিলের বিষয়ে মাথা ঘামাতে চাচ্ছেন না। আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগার থেকে ৬ মাসের জন্য মুক্ত থাকলেও এখন দলীয় রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না। কারণ, আর মাত্র ২ মাস পর তাঁকে আবারও কারাগারে চলে যেতে হবে। তাই মুক্তির সময় বাড়িয়ে নেয়া যায় কিনা সে চেষ্টায় রয়েছেন তিনি। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করে বিএনপি। জাতীয় কাউন্সিলের পর নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং-কোন্দল বেড়ে যাওয়ায় কয়েক দফায় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এক পর্যায়ে যারা কমিটিতে স্থান পেতে আগ্রহী ছিল তাদের সবাইকে গণহারে স্থান দিয়ে ৫৯২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এর ফলে জেলা-উপজেলা কমিটিতে স্থান পাওয়ার যোগ্য নয় এমন নেতারাও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়ে যান। আবার লবিংয়ের জোর কম থাকায় অনেক যোগ্য নেতাও বাদ পড়ে যান।
×