ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

কাতার এয়ারওয়েজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রা শুরু

প্রকাশিত: ২২:৪০, ১৭ জুন ২০২০

কাতার এয়ারওয়েজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ৮৮ দিন পর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক সিডিউল ফ্লাইটের যাত্রা শুরু হলো। কাতার এয়ারওয়েজের নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ এ প্রতীক্ষার অবসান ঘটে। সোমবার দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিটে ৩৩ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করে কাতার এয়ারের ওই ফ্লাইট। আবার ঘণ্টাখানেক পর ৩টা ১০ মিনিটে ২৭৪ জন যাত্রী নিয়ে ফ্লাইটটি দোহার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে। আসা যাওয়া যাত্রীদের সবাই ছিলেন ট্রানজিট। লকডাউন পরবর্তী সময়ে আপাতত শুধু ট্রানজিট যাত্রীদের বহন করার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে কাতার এয়ারওয়েজকে। আাগামী ২১ জুন ঢাকা লন্ডন রুটে বিমানের প্রথম ফ্লাইটের সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। এদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আরও অন্তত ১০টি স্পেশাল ফ্লাইট ওঠানামা করে। ঢাকা-কোরিয়া, ঢাকা-ওমান, ঢাকা-দুবাই, ঢাকা-মালদ্বীপ ও ঢাকা-চেন্নাই রুটে দিনভর এসব ফ্লাইট ওঠানামা করায় তুলনামূলক বেশ প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয় দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরে। এখন থেকে দিন দিনই এ ব্যস্ততা বেড়ে বিমানবন্দর চিরচেনা রূপ ফিরে পাবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোঃ মফিদুর রহমান। জানা গেছে, রাত দুটোর পর কাতারের ওই ফ্লাইট অবতরণের পর বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশান ও স্বাস্থ্য বিভাগ যাত্রীদের স্বাগত জানায়। তাদের সবাইকে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে দ্রুত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। যদিও সবাই স্বাস্থ্য সনদ নিয়েই ঢাকায় এসেছেন। তারপরও সবাইকে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই করে ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয়। আগত ৩৩ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যাত্রী ছিলেন বেশিরভাগ। যারা গেছেন তাদেরও বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের অভিমুখী। বেবিচক জানিয়েছে, করোনা তা-বের দরুন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ১৬ জুন থেকে দেশের আকাশপথ অবমুক্তের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর এটাই আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী প্রথম ফ্লাইট। এদিকে দীর্ঘদিন পর প্রথম ফ্লাইট চালুকে কেন্দ্র করে নবউদ্যমে প্রস্তুতি নেয় শাহজালাল বিমানবন্দর। বেবিচকের নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী গোটা বিমানবন্দরকে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। বোর্ডিং ব্রিজসহ বিভিন্নস্থানে যাত্রীদের বসার চেয়ারগুলোতে স্টিকার লাগানো হয়েছে। ওয়েটিং থেকে শুরু করে বোর্ডিং গেট পর্যন্ত এক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ-উল-আহসান বলেন, বেবিচকের নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত ২টায় কাতারের দোহা থেকে একটি ফ্লাইট ঢাকায় আসে। এক ঘণ্টা অবস্থানের পর ৩টায় যাত্রী নিয়ে সেটা কাতার ফিরে গেছে। এখন সিডিউল ফ্লাইটের ব্যস্ততা বেড়েই চলবে। জানা গেছে, কাতার এয়ারের পর বিমানের ফ্লাইটেরও প্রস্তুতি চলছে বেশ তোড়জোরেই। আগামী ২১ জুন থেকে ফ্লাইটের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে টিকেট বিক্রি শুরু করেছে। সাড়াও মিলছে বেশ। বিমানের মার্কেটিং বিভাগ জানিয়েছে আপাতত ড্রিমলাইনার দিয়েই ঢাকা লন্ডনের ফ্লাইট অপারেট করা হবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন জানিয়েছেন, যাবার ফ্লাইটে সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে আসার ফ্লাইটে বিপরীত। অনেক কম বিক্রি হয়েছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনেই বিজনেস ক্লাসে এক সারি বাদ দিয়ে টিকেট বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার ইকোনমি ক্লাসেও পাশাপাশি দুজন বসা নিষেধ এবং পেছনের সারি খালি রাখতে হবে। এ হিসেবেই সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। এদিকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্প্রতি বেবিচক থেকে একটি সার্কুলার জারি করা। সেখানে উল্লেখ করা হয়, বিমানবন্দর দিয়ে আগত প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিদেশী নাগরিকদের দেশে প্রবেশের ৭২ ঘণ্টা আগে ‘করোনা নেগেটিভ’ অর্থাৎ ‘করোনায় আক্রান্ত নয়’ এই মর্মে সার্টিফিকেট নিয়ে দেশে ফিরতে হবে। যাত্রী যে দেশের নাগরিক হোক না কেন ‘করোনা নেগেটিভ’ সংবলিত মেডিক্যাল সার্টিফিকেটটি ইংরেজীতে ট্রান্সলেট করা থাকতে হবে। বিমানবন্দরে প্রবেশের সময় এটি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। এ সম্পর্কে বেবিচকের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা সবধরনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে যাত্রীদের ফ্লাইটে চড়া এবং দেশে প্রবেশের অনুমতি দেবেন। যদি কোন প্রবাসী বাংলাদেশী এই সার্টিফিকেট ছাড়া দেশে ফেরেন, তাহলে বিমানবন্দর থেকে তাদের সরাসরি ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে। এছাড়া কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে আসা প্রবাসী বাংলাদেশীর কারও দেহে যদি করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকে তাহলে তাকেও সরাসরি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে। যেসব যাত্রী বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন তাদের হাতে একটি স্বাস্থ্য ফরম দেয়া হবে। এতে যাত্রীর নাম, বয়স, লিঙ্গ, জন্মতারিখ, বর্তমান ঠিকানা, এয়ারলাইনসের নাম, ফ্লাইট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র, শরীরের তাপমাত্রা, মোবাইল ও ইমেইল নম্বর নেয়া হবে। ফরমে তাকে তিনটি প্রশ্নের উত্তর পূরণ করতে হবে। প্রথম প্রশ্ন, আপনার কি জ্বর বা কফ হচ্ছে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, আপনার কি জ্বর এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে? তৃতীয় প্রশ্ন, গত ১৪ দিনে কোভিড-১৯ বা এই রোগের কোন উপসর্গ থাকার কারণে আপনাকে কোন বিমানবন্দরের বোর্ডিং থেকে রিফিউজ (প্রত্যাখ্যাত) করা হয়েছে কিনা? তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ সূচক বক্সে। তবে কোন প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয় তাহলে ওই যাত্রীর বিমানভ্রমণ বাতিল হবে। জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, আইকাওয়ের নির্দেশনা ও আমাদের নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে এগুলো মেনেই করতে হবে। করোনার দরুন গত ২১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ছাড়া সব দেশের সঙ্গে এবং অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল বেবিচক। এরপর আরেকটি আদেশে চীন বাদে সব দেশের সঙ্গে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা সরকারী সাধারণ ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যায়ক্রমে ১৪ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল, ৭ মে, ১৬ মে, ৩০ মে এবং ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ১৬ জুন থেকে ঢাকা থেকে লন্ডন এবং কাতার রুটে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয় বেবিচক। তবে কাতারে বাংলাদেশীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই যাত্রীরা শুধুমাত্র ট্রানজিট হিসেবে কাতার ব্যবহার করে অন্য দেশে যেতে পারবেন।
×