ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা সঙ্কটকালে নারীর সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১০ জুন ২০২০

করোনা সঙ্কটকালে নারীর সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নারীর কর্মসংস্থান ও উন্নয়নে সহায়তা দিতে জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। তিনি বলেন, করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী নারীরা আর্থিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যগতভাবে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। নারীরা চাকরি হারাচ্ছেন এবং নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান নেমে গেছে এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এ সঙ্কটকালে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মজীবী নারী, নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে তিনি জাতিসংঘের এজেন্সিগুলো, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সচিবালয় থেকে ইউএন উইমেনের আঞ্চলিক কার্যালয়ের সঙ্গে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের নয়টি দেশের নারী বিষয়ক মন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ অনুরোধ জানান। কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন ইউএন উইমেনের (জাতিসংঘ লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতা বিষয়ক সংস্থা) ব্যাংকক আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ নাসিরী। ‘টুওয়ার্ডস জেন্ডার রেসপনসিভ কোভিড-১৯ রিকোভারি : এক্সপিরেয়েন্স ফ্রম এশিয়া এ্যান্ড প্যাসিফিক’ বিষয়ক এই ভার্চুয়াল সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘের এ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও ইউএন উইমেনের নির্বাহী পরিচালক আনিতা ভাটিয়া। প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী যে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে তা মোকাবেলায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে যে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন তার ৭০ ভাগ নারী। বিশ্ব যখন মহাসঙ্কটে তখন নারীরা ঘরে বসে নেই। বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশায় উচ্চপদে নারীর দক্ষতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে করোনা সঙ্কটে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আর্থিক সহায়তা, ঘরে বসে কাজ করা ও সরকারী- বেসরকারী সব নাগরিক সুবিধা পাওয়ার সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গবেষণা ও উন্নয়নের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে একসঙ্গে কাজ করে কোভিড-১৯ সংক্রামক ব্যাধিকে চিরতরে পৃথিবী থেকে দূর করতে হবে। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার বিষয়ে দ্রুত কার্যকরী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। সম্প্রতি ১০ হাজার ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ দেয় সরকার। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়েছে। স্থবির হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিকে গতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক লাখ কোটি টাকার বেশি ১৯টি প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রফতানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম, দুই হাজার কোটি টাকার নতুন কর্মসৃজন, যা থেকে নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাবে। এ ছাড়া প্রান্তিক আয়ের মানুষের জন্য দুই হাজার পাঁচশ’ কোটি টাকার বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, ১২শ’ কোটি টাকার নগদ অর্থ বিতরণ, গৃহনির্মাণ ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রণোদনা প্যাকেজ, যার বেশিরভাগ উপকারভোগী নারী। ইউএন উইমেনের ব্যাংকক আঞ্চলিক অফিস আয়োজিত এই ভার্চুয়াল সভায় বিভিন্ন দেশের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী, সচিব এবং নারী উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তারসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা। সভায় জাতিসংঘের এ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও ইউএন উইমেনের নির্বাহী পরিচালক আনিতা ভাটিয়া বলেন, মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি নারী। নারী উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় নারীকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিকল্প নেই। সভায় অংশগ্রহণকারী মন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা তাদের দেশের নারী উন্নয়নের চিত্র ও কোভিড- ১৯ মোকাবেলায় বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন।
×