ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্য বাস্তবায়নে এনবিআরকে রাজস্ব আহরণ করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা চ্যালেঞ্জ নিয়েই বাজেট বাস্তবায়ন করতে চান অর্থমন্ত্রী

টার্গেট বিপুল আয়ের ॥ আসছে বড় আকারের বাজেট

প্রকাশিত: ২২:০৭, ৯ জুন ২০২০

টার্গেট বিপুল আয়ের ॥ আসছে বড় আকারের বাজেট

কাওসার রহমান ॥ আগামী অর্থবছরে বড় বাজেট বাস্তবায়নে বড় আয়ের লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে সরকার। মহামারী করোনায় বিশ্ব অর্থনীতিই বিপর্যস্ত। দেশীয় অর্থনীতিরও একই হাল। ফলে এই বিপর্যয়ের হাত থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে হলে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। আর এই বিপুল অর্থ সংস্থানে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করা ছাড়া বিকল্প নেই। তাই অর্থমন্ত্রী নিজেও সে পথেই হাঁটছেন। আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের অর্থ সংস্থানে সংগ্রহকারী সংস্থাগুলোকে রাজস্ব আদায়ের বড় লক্ষ্যই দিতে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে তিনি আগামী অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের জন্য ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছেন। যা চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্য থেকে মাত্র ৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে স্থবির হয়ে আছে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং আমদানি-রফতানি খাত। ফলে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ নিয়ে সরকার অনেকটা উদ্বিগ্ন। উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নিজেও। অর্থ বিভাগ ধারণা করছে, বিদ্যমান করোনাভাইরাসের প্রকোপ দীর্ঘ হলে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও দীর্ঘ হবে। এসব কিছু বিবেচনায় রেখেই মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী বছর কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি করবহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা এবং কর ছাড়া প্রাপ্তির পরিমাণ হচ্ছে ৩৫ হাজার ৮৩২কোটি টাকা। এছাড়া, আগামী বছরে বৈদেশিক অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে ৪ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। সাধারণত বৈদেশিক অনুদান পরিশোধযোগ্য নয় বিধায় একে সরকারের আয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকের আয়ের অবস্থা নাজুক, আবার আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে যে ভাল কিছু দেখা যাচ্ছে, তাও নয়। ফলে নতুন অর্থবছরটি হতে যাচ্ছে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জটিই গ্রহণ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা এবং আগামী অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়। চলতি অর্থবছরে আদায় হতে পারে বড়জোর ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। গত এপ্রিলে ১৯ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল। আদায় হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই সময়ে শুল্ককর আদায়ের লক্ষ্য ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। ঘাটতি প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা। বছর শেষে সংশোধিত লক্ষ্য থেকেই ঘাটতি ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের মূল লক্ষ্য ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়ায় এই লক্ষ্য কমিয়ে ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সেই হিসাবে মে ও জুন মাসে এনবিআরকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। করোনার সময়ে এই লক্ষ্য অর্জন প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। আবার বিদ্যমান অবস্থায় আগামী অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) পুরো সময় ব্যবসা-বাণিজ্য আগের মতো স্বাভাবিক থাকবে, এমন আশা কম। তার পরও আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশাল লক্ষ্য দেয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরে ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। গত ১০ বছরে মাত্র একবার ২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বড় লক্ষ্য প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, এনবিআরকে কখনই তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হয় না। বাস্তবে কী পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব, তা চিন্তা করা হয় না। সার্বিকভাবে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেটের আকার ঠিক করা হয়। সেই বড় বাজেটের অর্থের জোগান দিতেই মূলত বড় লক্ষ্য দেয়া হয় এনবিআরকে। সব মিলিয়ে, আগামী অর্থবছরে সার্বিকভাবে এনবিআরকে লক্ষ্য দেয়া হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে ভ্যাটে। এই খাতে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা আদায় করার লক্ষ্য দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আয়করে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা এবং শুল্ক খাতে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকার লক্ষ্য থাকছে। তাই, যদি শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য সফল নাও হয়, তার বিকল্পও হাতে রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে ঘাটতি বেড়ে গেলে বিকল্প হিসাবে অভ্যন্তরীন উৎস থেকে বড় অঙ্কের ঋণ গ্রহণের বিধানও রাখছেন অর্থমন্ত্রী তার দ্বিতীয় বাজেটে। তবে তার আগে উৎপাদন কর্মকান্ড সচল করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সরকারের আয়ও বৃদ্ধির চেষ্টা করে যাবেন অর্থমন্ত্রী। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ৮৮ হাজার কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা নেয়া হবে। এছাড়া উন্নয়ন বাজেটের ঘাটতি মোকাবেলায় বিদেশী ঋণ গ্রহণ করা হবে ৭৭ হাজার কোটি টাকা। কোভিডের কারণে দরিদ্রদের খাদ্যসহায়তা, অতিদরিদ্রদের নগদ সহায়তা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সুদ সুবিধা দিতে হচ্ছে সরকারকে। ১ লাখ কোটি টাকার ছোট-বড় ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ মূলত ব্যাংক খাতের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হলেও সরকারকে ভাল একটি অংশ বহন করতে হবে। আবার এজন্য ব্যাংকগুলোকে কর্পোরেট করে ছাড় দিতে হবে। সব মিলিয়ে, করোনার প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছরে নতুন করারোপের চেয়ে বেশি কর ছাড় দেয়ার চাপ রয়েছে, অন্যদিকে বাড়াতে হবে আদায়ও। এসব নিয়েই আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট তৈরি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, বাজেট বাস্তবায়ন সব সময়ই চ্যালেঞ্জের এবং সব দেশের সব সরকারকেই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। রাজস্ব বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনার প্রেক্ষাপটে আগামী বাজেটে শুল্ককরে বেশ ছাড় দিতে হবে। নতুন কর আরোপও করা যাবে না। এমন অবস্থায় রাজস্ব খাতে আমূল সংস্কার ছাড়া এত রাজস্ব আদায় করা সম্ভব নয়। এই সংস্কার একদিনে করা সম্ভব নয়। আগামী অর্থবছর থেকেই স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার শুরু করা উচিত। প্রথমেই অটোমেশনে নজর দেয়া উচিত। এতে দুর্নীতি-অনিয়ম কমবে। কর কার্যালয়গুলো মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া কর ফাঁকি প্রতিরোধে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দ্রুত বিদ্যমান আইনগুলো যুগোপযোগী করতে হবে। রাজস্ব খাতে সংস্কার না হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে যে অর্থ দরকার, এর জোগান দেয়া সম্ভব হবে না। এসডিজি অর্জনে অতিরিক্ত বহু লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এর ৯০ শতাংশই দিতে হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মানে, এনবিআরকেই সিংহভাগের জোগান দিতে হবে। বিদ্যমান রাজস্ব প্রশাসন দিয়ে তা সম্ভব হবে না। তাই রাজস্ব খাতে বড় সংস্কারের বিকল্প নেই। যে ধরনের উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ; ওই সব উন্নত দেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২০-৩০ শতাংশের সমান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় হয়। অথচ বাংলাদেশ সবচেয়ে কম কর জিডিপির অনুপাতের দেশ। রাজস্ব আয় কাটছাঁট ২০,২৯৭ কোটি টাকা ॥ চলমান করোনাভাইরাসে সৃষ্ট অচলাবস্থার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব খাতে। ফলে চলতি অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২০ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা কাটছাঁট করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে সংশোধিত আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর রাজস্ব ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত ৪৪ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। বছরের শুরুতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু এনবিআর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বছরের শুরুতে নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৪০ হাজার ১০৪ কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয় ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এখন তা অর্জন করা সম্ভব না হওয়ায় নতুন করে এনবিআর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কাটছাঁটের পর নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে কমানো হয়েছে ২৭ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। তবে এনবিআরবহির্ভূত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে ৬ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে অর্থনীতিতে মন্দাভাবের কারণে বছর শেষে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি-রফতানি কমেছে। অর্থবছর শেষে আরও কম হতে পারে। হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন এবং পর্যটন খাতের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশ্বের অর্থনীতি করোনার প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আরও যা থাকছে শুল্ক ব্যবস্থায় ॥ আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন আসছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইনের আওতায় আমদানি পর্যায়ে যে নতুন আগাম কর (আগাম ভ্যাট) চালু করা হয়েছে, সেখানে পরিবর্তন হবে। এখন কিছু পণ্য বাদে ঢালাওভাবে ৫ শতাংশ হারে আগাম কর আদায় করা হয়। আগামী বাজেটে ভ্যাটের আগাম করে দুটি হার করা হতে পারে। শিল্প খাতের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্যের জন্য ৩ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক পণ্যের জন্য ৫ শতাংশ আগাম কর আরোপের প্রস্তাব থাকতে পারে। আগাম করে পরিবর্তন করা হলে উদ্যোক্তারা বেশি সুবিধা পাবেন। তাতে আমদানি খরচ কমবে। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে আবগারি শুল্ক, টার্নওভার কর, সিগারেটের মূল্যস্তর বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর দেশজ উৎপাদনে ভ্যাট ছাড়সহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বড় লোকের তথা ধনীদের ব্যাংকে টাকা রাখার খরচ বাড়তে পারে। বর্তমানে ব্যাংক হিসাবে নির্দিষ্ট সীমার বেশি টাকা থাকলেই বিভিন্ন হারে আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়। বছরে একবারের জন্য হলেও ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি থাকলেই আবগারি শুল্ক দিতে হয়। সর্বোচ্চ শ্রেণীতে আবগারি শুল্কের পরিবর্তন আসতে পারে। ৫ কোটি টাকার বেশি ব্যাংক হিসাবে থাকলে বর্তমানে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ হয়। এই অতিধনী শ্রেণীর আবগারি শুল্কের পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। বর্তমানে ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার কম থাকলে আবগারি শুল্ক দিতে হয় না। এক লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৫ লাখ টাকার কম থাকলে ১৫০ টাকা, ৫ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ১০ লাখ টাকার কম হলে ৫০০ টাকা, ১০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ১ কোটি টাকার কম হলে ২ হাজার টাকা, ১ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ৫ কোটি টাকার কম থাকলে সাড়ে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। আবগারি শুল্ক বছরে একবার দিতে হয়, ব্যাংক এই টাকা কেটে রেখে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়। এর বাইরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ভ্যাটে বেশ বড় ছাড় আসছে। বর্তমানে বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম হলে কোন ভ্যাট দিতে হয় না। ৫০ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক লেনদেন হয় এমন প্রতিষ্ঠানকে ৪ শতাংশ টার্নওভার কর দিতে হয়। এই টার্নওভার কর ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে তামাক জাতীয় পণ্যকে নিরুৎসাহিত করতে এবারও উদ্যোগ থাকছে। সিগারেটের নিম্ন ও নিম্নমধ্যম মূল্যস্তরে পরিবর্তন আসতে পারে। এই দুটি মূল্যস্তর ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। আটা, চিনি এমন নিত্যপণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া আছে। এই অব্যাহতি আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত রাখা হবে। এ ছাড়া গ্যাস উৎপাদন করে সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট মওকুফের অংশ কমিয়ে দেয়া হতে পারে। ভ্যাট আরোপের ক্ষেত্রে সঙ্কুচিত ভিত্তিমূল্য বাড়তে পারে। এ ছাড়া আগাম নেয়া ভ্যাটের টাকা সমন্বয় করার পদ্ধতি সহজ করার দিকনির্দেশনা থাকবে নতুন বাজেটে। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পর্যায়ে যে ভ্যাট দেন তা সহজেই সমন্বয় বা ফেরত পান, সেই ব্যবস্থা আরও সহজ করা হবে। করোনার সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর স্থানীয় উৎপাদকদের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে এক বছরের জন্য ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আগামী অর্থবছরে ভ্যাটের হার না বাড়িয়ে কিছু আওতায় বাড়ানো হতে পারে। বেশ কিছু নতুন খাত আসতে পারে। গত বাজেটে বেচাকেনার হিসাব রাখার জন্য কেনা দামে ব্যবসায়ীদের ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ইএফডি আমদানিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। আগামী জুলাই মাস থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সীমিত পরিসরে ইএফডি মেশিন দেয়ার ঘোষণা থাকবে বাজেটে। ইতোমধ্যে ইএফডি মেশিনের প্রথম চালান এনবিআরের হাতে এসে পৌঁছেছে।
×