ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ২৩:২০, ৫ জুন ২০২০

ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের খ্যাতিমান বেসরকারী ইউনাইটেড হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনায় নিহত একজনের পরিবার হাসপাতালটির বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছে। মামলায় হাসপাতালটির বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ২৭ মে রাত সাড়ে নয়টার দিকে হাসপাতালটির বাউন্ডারির ভেতরে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় স্থাপিত পাঁচ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারটি পুড়ে যায়। আগুনে পাঁচটি বেডে থাকা পাঁচ জনই মারা যান। নিহতরা হচ্ছেন রিয়াজুল আলম (৪৫), খোদেজা বেগম (৭০), ভেরন এ্যান্থনী পল (৭৪), মনির হোসেন (৭৫) ও মাহাবুব এলাহী চৌধুরী (৫০)। গত ৩ জুন রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহত ভেরন এ্যান্থনী পলের মেয়ের জামাই রোনাল্ড নিকি গোমেজ। গুলশান মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলছেন, মামলায় হাসপাতালটিতে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় সুনির্দিষ্ট করে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। আসামি করা হয়েছে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান, এমডি, সিইও, পরিচালক এবং অগ্নিকাণ্ডের সময় আইসোলেশন ইউনিটে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের। মামলার বাদী রিকি গোমেজের ভাষ্য, দুবার করোনা টেস্ট নেগেটিভ আসার পরও তার স্বজনকে ইচ্ছাকৃতভাবে রাখা হয় আইসোলেশন ইউনিটে। চিকিৎসক ও প্রশাসকদের স্বেচ্ছাচারিতায় আরও কয়েকজন নন-কোভিড রোগীকে সেখানে রাখা হয়েছিল। অথচ তারা করোনা নেগেটিভ ছিলেন। তাই এ ঘটনায় পাঁচ জন নিহতের পেছনে পুরো দায় ইউনাইটেড হাসপাতালের। ঘটনার পর কয়েকদিন পরিবারের সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকার কারণে মামলা করতে দেরি হয়েছে। তিনি এ্যান্থনী পলকে হাসপাতালে ভর্তির পর যা যা দেখেছেন তার সবই মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া আইসোলেশন ইউনিটের এসিতে লাগা ছোট্ট আগুন দায়িত্বরতদের অবহেলার কারণে কীভাবে বড় হয়ে পাঁচ জনের জীবন কেড়ে নিল তার বর্ণনা দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ঘটনার রাতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচ রোগী নিহতের ঘটনায় গুলশান মডেল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। ইতোমধ্যেই অগ্নিকা-ের ঘটনাটি তদন্ত শুরু করেছে থানা পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। ঘটনাটির তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের তরফ থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগ করেন, দায়সারা গোছের করে আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে তোলা হয়েছিল। আগুন লাগার পর দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনাটিও রহস্যজনক। হাসপাতালের তরফ থেকে করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) শেখ শাহানুর রহমান জনক-কে জানান, ওটিকে আইসোলেশন সেন্টার বলা যাবে না। আইসোলেশন সেন্টারের নামে সেখানে একটি অন্ধকার কুঠুরী তৈরি করেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরকারের নির্দেশ মানতে বাধ্য হওয়ায় কোনমতে একটি আইসোলেশন সেন্টার করেছিল। মূলত এটি সরকারকে দেখানো হয়েছিল যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকরের নির্দেশ মানছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানান, সিআইডির ফরেনসিক টিম হাসপাতালটি থেকে ১২টি অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র বের করে আনে। যার মধ্যে আটটিরই মেয়াদ নেই। আগুন নেভাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ছিল না বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও রোগীর স্বজনদের অভিযোগ।
×