ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলের প্রতিবন্ধী মেয়ে জাহানারা পেলেন জিপিএ-৫

প্রকাশিত: ১৭:২৮, ৪ জুন ২০২০

টাঙ্গাইলের প্রতিবন্ধী মেয়ে জাহানারা পেলেন জিপিএ-৫

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ প্রতিবন্ধকতা কখনোই সাফল্যকে আটকে রাখতে পারে না। আবার যদি বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর কথা চিন্তা করি তবে অসাধ্য বলে পৃথিবীতে কিছুই নেই। জন্মগত ভাবেই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জাহানারা (১৬)। অক্ষমতাকে জয় করে সে এবার এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ-৫। এমনকি তার বাবাও প্রতিবন্ধী। তাই প্রতিবন্ধীর বাবার প্রতিবন্ধী মেয়ের সাফল্য এলাকায় ব্যাপক প্রসংশনীয় হয়েছে। অদম্য প্রতিভার অধিকারী জাহানারা। প্রতিবন্ধী হলেও জীবন যুদ্ধে থেমে নেই অপ্রতিরোধ্য জাহানারা। বিগত ২০১৮ সালে একই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৩.৫০ পায় জাহানারা। পরিবার ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এসএসসি-তেও জিপিএ-৫ পেতে হবে, এটাই জাহানার ইচ্ছে ও স্বপ্ন ছিল। তার এমন স্বপ্নপূরণে কোনও বাধা থামাতে পারেনি। অসম্ভবকে সম্ভব করে মেধার স্বাক্ষর রেখে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। এ বছর ঘাটাইল এসই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী জাহানারা টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। বাবা জাহাঙ্গীর আলমও বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। জাহানারার আরো এক ভাই বিজয় সে প্রতিবন্ধী ও তার ছোট বোন তানিয়া সেও বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। পরিবারের চারজন প্রতিবন্ধী। জাহানার মা শুধু বিনা বেগম শুধু সুস্থ। জাহানারার মা বিনা বেগম বলেন, জাহানার এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ঠিকই। আমরা এতে সবাই খুশি। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীকতা নিয়ে মেয়েটি সংগ্রাম করে এতোদূর এসেছে। তবে মেয়ের রেজাল্টে খুশি হলেও দুশ্চিন্তার অন্তর নেই মা বীনার। কারণ মেয়ের স্বপ্নপূরণ করতে হলে ওকে কলেজে ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু গ্রাম পর্যায়ে তেমন ভালো কলেজ বা লেখাপড়ার সুযোগ কম। তিনি আরো বলেন, একটি ভালো কলেজে দিতে গেলে সেখানে কাউকে রাখতে হবে। যেহেতু সে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী কথা বলতে পারে না। তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক কাউকে না কাউকে থাকতে হয়। তাই কীভাবে মেয়েকে লেখাপড়া করাবেন এ নিয়ে চিন্তিত তিনি। তবে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও মেয়ের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করবেন বলে জানান মা বীনা বেগম। মা বিনা বেগম আরও জানান, মেয়ের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু শারীরিকভাবে সম্পন্ন না হওয়ায় মেয়েকে বোঝানো হয়, এটা তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। মেডিক্যালে পড়তে গেলে ব্যবহারিক অনেক কাজ থাকে। তাই জাহানার এখন লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হতে আগ্রহী। এ ব্যাপারে ঘাটাইল এসই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বুলবুলি বেগম বলেন, প্রতিবন্ধী জাহানারা স্কুলে থাকাকালীন সময়ে আমরা তাকে অনেক সহযোগীতা করেছি। আমি জাহানারার মতো প্রতিবন্ধীসহ সকল প্রতিবন্ধীদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। জাহানারার সাফল্য তার কথা শ্রদ্ধায় ভরে স্মরণ করি। ঘাটাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.কে.এম. শামছুল হক জানান, প্রতিবন্ধী জাহানারাকে কলেজে ভর্তির পর সকল সরকারী বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।
×