ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাভাইরাসরোধী কাপড় তৈরির দাবি বাংলাদেশী কোম্পানির

প্রকাশিত: ০০:০৭, ১৬ মে ২০২০

করোনাভাইরাসরোধী কাপড় তৈরির দাবি বাংলাদেশী কোম্পানির

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের বস্ত্র খাতের কোম্পানি জাবের এ্যান্ড জুবায়ের ফ্যাশন ফেব্রিক্স লিমিটেড এমন এক কাপড় উদ্ভাবনের দাবি করেছে, যা ‘দুই মিনিটে’ করোনাভাইরাস ধ্বংস করতে সক্ষম। পিপিই, মাস্ক ও অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর পাশাপাশি মানুষের প্রচলিত পোশাকও এই কাপড় দিয়ে তৈরি করা যাবে বলে দাবি করেছেন কোম্পানির ব্র্যান্ড ম্যানেজার অনল রায়হান। খবর বিডিনিউজের। তারা বলছেন, এই কাপড় ব্যবহারে মানুষের ‘ক্ষতির কোন আশঙ্কা নেই’, যদিও বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থাপনায় এখনও এর পরীক্ষা হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও জাবের এ্যান্ড জুবায়ের যোগাযোগ করেনি এখনও। সে কারণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এর কার্যকারিতা বা নিরাপত্তার দিকগুলো নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারছেন না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট ডাঃ নজরুল ইসলাম বলেন, মশা মারার জন্য রাসায়নিক মিশ্রিত এক ধরনের মশারির কথা তিনি শুনেছেন। কিন্তু ভাইরাস প্রতিরোধী কোন ফেব্রিক্সের কথা এখন পর্যন্ত তার জানা নেই। তারা যদি কিছু তৈরি করে থাকে, তা কী রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি করেছে তা অবশ্যই জানা প্রয়োজন। কারণ এটি মানব ত্বকের সংস্পর্শে আসবে। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী, তা জানতে হলে এর পরিচয় জানতে হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলন করে জাবের এ্যান্ড জুবায়েরের কর্মকর্তারা এই কাপড়ের বৈশিষ্ট্য এবং রফতানি বাজার সম্পর্কে ধারণা দেন। তারা দাবি করছেন, ইতোমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ল্যাব থেকে এই কাপড়ের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের একটি কোম্পানি এই ফেব্রিক্সের তৈরি ৫ লাখ মাস্কের অর্ডারও পাঠিয়েছে। কিভাবে ওই কাপড় ভাইরাস ধ্বংস করবে জানতে চাইলে অনল রায়হান শুক্রবার বলেন, ‘অন্য সাধারণ ফেব্রিক্সের মতো করেই এ ফেব্রিক্সটি আমরা তৈরি করেছি। ফিনিশিংয়ের শেষ পর্যায়ে এখানে একটি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে, যার সংস্পর্শে এলে করোনাভাইরাস ১২০ সেকেন্ডের মধ্যে ধ্বংস হয়।’ তবে সেই রাসায়নিকের নাম এই মুহূর্তে প্রকাশ করতে রাজি নন জাবের এ্যান্ড জুবায়েরের ব্র্যান্ড ম্যানেজার অনল। তিনি বলেন, ‘আপাতত বলছি না ব্যবসায়িক কৌশলের কারণে। তবে এটা যে খুব গোপনীয় কিছু- তা নয়। যারা আমাদের বাল্ক অর্ডার করছেন কিংবা যেসব ল্যাবরেটরিতে এটা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে তাদের এর নাম আমরা বলেছি। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে এর নাম প্রকাশ করা হবে।’ জাবের এ্যান্ড জুবায়েরের উদ্ভাবিত কাপড়ের করোনাভাইরাস ধ্বংসের সক্ষমতা সম্পর্কে কিভাবে নিশ্চিত হয়েছেন জানতে চাইলে অনল বলেন, এ বিষয়ে তারা কাজ করেছেন সুইজারল্যান্ডের দুটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে। অনেক ধরনের করোনাভাইরাস আছে, তার মধ্যে নোভেল করোনাভাইরাস নতুন। সার্স, মার্সসহ অন্যান্য করোনাভাইরাস দিয়ে এই কাপড়ের পরীক্ষা করে ভাল ফল পাওয়া গেছে। এ পরীক্ষায় জিনোম কালচার প্রয়োজন হয় বলে নোভেল করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা এখনও পরীক্ষা করা যায়নি। কিন্তু যেহেতু এদের উপরিভাগের প্রোটিনের স্তর একই ধরনের, তাই ল্যাবরেটরিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, নোভেল করোনাভাইরাসও এ কাপড়ে এলে ধ্বংস হবে। এক প্রশ্নের জবাবে অনল রায়হান দাবি করেন, ইউরোপ-আমেরিকার কিছু আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় তাদের কাপড়ের ভাইরাস ধ্বংসের সক্ষমতা ‘প্রমাণিত’ হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা প্রথমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়ে আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণ শুরু করেছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে গণমাধ্যমকে জানিয়েছি। এখন আগামী সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এর ব্যবহার ও কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। জাবের এ্যান্ড জুবায়ের বলছে, সাধারণ কাপড়ের চেয়ে এই ফেব্রিক্সের দাম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি হবে। ২০ থেকে ৩০ বার পোশাক ধোয়ার পর এর কার্যকারিতা কমতে থাকবে। এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই দাবি করে অনল রায়হান বলেন, এই কাপড়ের পরিচয় দিতে গিয়ে আমরা বলছি ‘করোনাভাইরাস কিলিং ফেব্রিক্স’। ছোট করে নাম হচ্ছে করোনা ব্লক। টেকনিক্যাল শব্দ হিসেবে ব্যবহার করছি ‘এন্টি করোনা ট্রিটেড ফেব্রিক’। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, আমেরিকা ও ইউরোপে এই কাপড় বাজারজাত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ইউকে সার্টিফিকেশন এ্যান্ড ইন্সপেকশন লিমিটেড থেকে মান সনদ নেয়া হয়েছে। কাপড়টি উদ্ভাবনের মাত্র এক মাসের মধ্যে ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের ইউনাইটেড গ্রুপ ইতোমধ্যে ওই কাপড়ে তৈরি পাঁচ লাখ মাস্ক নেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এবং আমেরিকা ও ইউরোপের ক্রেতারাও ওই কাপড় নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বলে দাবি করছেন কর্মকর্তারা। নতুন এই উদ্ভাবনের খবর শুনে আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘তারা যদি কোনভাবে কাপড়ের মধ্যে জীবাণুনাশক ধরে রাখতে পারে, সেটা তো ভাল। সাবানের মাধ্যমে তো মাত্র ২০ সেকেন্ডেই এই জীবাণু ধ্বংস হয়। তবে তাদের এই কাপড় সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে বাংলাদেশে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিতে এর পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’
×