ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় বিদ্যুত প্রকল্পের ক্ষতি কাটাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ২২:২০, ২৯ এপ্রিল ২০২০

করোনায় বিদ্যুত প্রকল্পের ক্ষতি কাটাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত প্রকল্পে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে উদ্যোগ নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পর তালিকা চেয়ে বিদ্যুত বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ এ প্রভাবে দেশের বিদ্যুত খাতের সব বড় প্রকল্পর কাজ থমকে দাঁড়িয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বিদ্যুত বিভাগের ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় সে বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্যই এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে বিদ্যুত বিভাগের কাছে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পর তালিকা চাওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ কিভাবে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা যায় সেজন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, আমাদের সব কাজই বিদেশী ঠিকাদারের ওপর নির্ভরশীল। কেন্দ্র নির্মাণ, সাবস্টেশন নির্মাণ, সঞ্চালন এবং বিতরণ লাইন নির্মাণ সব কিছুই করে থাকে বিদেশী ঠিকাদাররা। এসব কাজে যে শ্রমিক কাজ করেন তাদের একটি অংশ দেশের মধ্যে কিন্তু কারিগরি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বড় একটি অংশ দেশের বাইরের। করোনার বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এসব শ্রমিকদের বড় একটি অংশ আসতে পারছে না। ফলে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সংস্থা এবং কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কাজের অগ্রগতি জানার জন্য এই বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বৈঠকে কোম্পানিগুলোর কাছে কোন প্রকল্পের কি অবস্থা তা জানতে চাওয়া হবে। সোমবার বিদ্যুত বিভাগের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের বৈঠকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে করোনা মার্চ থেকে শুরু হলেও মূলত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি থেকে এর প্রকোপ ধরা পড়েছে। এতে করে ওইসব দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। দেশের তিনটি বড় বিদ্যুত কেন্দ্রের একটি নির্মাণ করছে চীন, অপর দুটি ভারত এবং জাপান নির্মাণ করছে। দেশ দুটিই নিজেদের করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যস্ত রয়েছে। এরমধ্যে নির্দিষ্ট প্রকল্পর অগ্রগতি নিয়ে খুব একটা চিন্তা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গত কারণে দেশের প্রকল্পগুলোর কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্প পিছিয়ে যাওয়াতে ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এছাড়া এসব প্রকল্পর যন্ত্রাংশ আমদানিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়। বৈশি^ক মহামারীর কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য ব্যয় করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রমতে সরকারের বড় উন্নয়ন প্রকল্পর বেশিরভাগ কাজই হচ্ছে বিদ্যুত খাতে। তিনটি মেগা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। এরমধ্যে একটি বিদ্যুত পায়রা-১৩২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে এসেছে। বিদ্যুত কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট আগামী জুনে উৎপাদনে আসার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউনে সেই প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে। জানা গেছে, মাতারবাড়ি-১২০০ মেগাওয়াট এবং রামপাল-১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণ কাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে রামপাল বিদ্যুত প্রকল্পের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা ছিল আগামী ডিসেম্বরে। কিন্তু এখন সেই সময় ঠিক রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, প্রকল্পের মধ্যে এখন দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য করা হচ্ছে। সবগুলো প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে শেষ করার তাগাদা ছিল কিন্তু এই পরিস্থিতিতে যা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এখন নতুন করে এসব প্রকল্প নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে এসব প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। কোনটি শেষ পর্যায়ে আবার কোনটি মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছে। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ না করে চালু করা সম্ভব না হলে এর সুফল মানুষ পাবে না। অন্যদিকে প্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণের অর্থ পরিশোধের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ৭৯ দশমিক পাঁচ ভাগের স্থলে এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে ৬২ দশমিক ৪০ ভাগ। অন্যদিকে গত অর্থ বছর একই সময় বাস্তবায়নের হার ছিল ৬৪ দশমিক ২৫ ভাগ। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ ২৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বছরের আর দু’মাস বাকি রয়েছে। অব্যায়িত অর্থের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা।
×