ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বজনরা মনে করছেন, এটি হত্যাকাণ্ড

বরিশালে হাসপাতালের লিফটের নিচে চিকিৎসকের লাশ

প্রকাশিত: ২২:১৬, ২৯ এপ্রিল ২০২০

বরিশালে হাসপাতালের লিফটের নিচে চিকিৎসকের লাশ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ নগরীর কালিবাড়ি রোডের মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের লিফটের নিচ থেকে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ এম এ আজাদ সজলের (৪৭) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন জানান, ডাঃ আজাদের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের স্বরুপকাঠিতে। তার পরিবার ঢাকায় থাকেন। শেবাচিম হাসপাতালে চাকরির সুবাদে তিনি বরিশালেই থাকতেন। প্রাইভেট প্রাকটিসের পাশাপাশি মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের সাত তলার একটি কক্ষে (ডরমিটরিতে) থাকতেন তিনি। পরিচালক আরও জানান, সোমবার দিবাগত রাত থেকে ডাঃ আজাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সকালে মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের লিফটের নিচে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। মৃত চিকিৎসক আজাদের স্বজন ও সহকর্মীরা জানিয়েছেন, আজাদের স্ত্রী ও দুই সন্তান ঢাকায় বসবাস করেন। এ কারণে প্রায় বছরখানেক যাবত তিনি নগরীর কালিবাড়ি রোডের মমতা হাসপাতালের সাত তলার একটি কক্ষে বসবাস করতেন। মঙ্গলবার রাতে সেহরির সময় তার স্ত্রী ঢাকা থেকে ফোনে যোগাযোগ করে না পাওয়ায় মমতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার রুমে তালা দেয়া দেখে পুলিশকে খবর দেয়। সকালে পুলিশের উপস্থিতিতে ওই কক্ষের তালা ভাঙ্গা হয়। এরপর খোঁজাখুঁজি করে হাসপাতালের লিফটের নিচে তার মরদেহ দেখতে পান মমতা হাসপাতালের এক কর্মী। পরে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। তবে এ মৃত্যুকে প্রাথমিকভাবে সন্দেহজনক বলে মনে করছেন স্বজনরা, তারা ঘটনার তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। যদিও এ মৃত্যু দুর্ঘটনা হতে পারে বলে ধারণা করছেন মমতা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ জহিরুল হক মানিক। এদিকে ঘটনাস্থলে থাকা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক নিখোঁজের বিষয়টি সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়। এরপর তারা হাসপাতালে এসে অনুসন্ধান চালিয়ে লিফটের নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ও চশমা উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে তদন্ত চলছে। ওসি আরও বলেন, লাশের ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। চিকিৎসকের স্বজনদের অভিযোগ, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মৃত চিকিৎসক এম এ আজাদ স্বজল বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ছিলেন। এ ঘটনায় হাসপাতালের নয় কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মোকতার হোসেন। তিনি জানান, সোমবার বিকেলের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন ডাক্তার এম এ আজাদ। ‘মঙ্গলবার সকাল থেকে মমতা স্পেশালাইড হসপিটালের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে লিফটের নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়।’ ‘সুরতহালে মরদেহের পায়ে গুরুতর জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে।’ এটি হত্যাকা- কিনা এ বিষয়ে তদন্ত না করে এখনই কিছু বলতে রাজি হননি পুলিশের এ কর্মকর্তা। তবে এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকা- বলে অভিযোগ করেছেন ডাক্তার এম এ আজাদের স্বজনরা। চাকরির বেতন ও রোগী দেখে মাসে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করতেন ডাক্তার আজাদ। অর্থের লোভে পড়েই এক বা একাধিক ব্যক্তি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ, ডাঃ আজাদের স্বজনদের। মমতা স্পেশালাইড হসপিটালের ব্যবস্থাপক ডাঃ জহিরুল হক মানিক বলেন, ‘ভোর রাতে ডাঃ আজাদের স্ত্রী তাকে ফোন করে বলেন- ‘আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। রিং হলেও ফোন ধরছেন না তিনি।’ সকালে তার স্বজনরা হাসপাতালে আসেন।’ পরে পুলিশের উপস্থিতিতে তার কক্ষ ভেঙ্গে মোবাইল ফোন পাওয়া গেলেও তার সন্ধান মেলেনি। এক পর্যায়ে পুরো হাসপাতালে তল্লাশি চালিয়ে কয়েকজন কর্মচারী ডাঃ আজাদের মরদেহ লিফটের নিচে পড়ে থাকতে দেখে বলে জানান তিনি।
×