ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফারমার্স ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারি ;###;ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে ১৮০০ কোটি টাকা লোপাট করলেন বাবুল চিশতী

হাজার কোটির অবৈধ সম্পদ, ১৩২ টাকায় এক বিঘা জমি

প্রকাশিত: ১১:৩০, ১২ মার্চ ২০২০

হাজার কোটির অবৈধ সম্পদ, ১৩২ টাকায় এক বিঘা জমি

রহিম শেখ ॥ মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী। আর্থিক খাতের জাল-জালিয়াতিতে জড়িত বহুল আলোচিত নাম। তিনি ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে কৌশলে প্রায় ১৮শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৫ সালে পাঁচটি ঋণে বড় জালিয়াতির তথ্য ফাঁসের পর বাবুল চিশতীকে ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) সব পদ ছাড়তে হয়েছে। যিনি ছিলেন ব্যাংকটির সাবেক অডিট কমিটির চেয়ারম্যান। এরপর কয়েক বছরে প্রায় এক ডজন মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি অবৈধ সম্পদ অর্জনের আরও একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে দুদকের তদন্তে বাবুল চিশতী ও তার স্বজনদের নামে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে। এরমধ্যে মাত্র ৪ টাকায় এক শতক ও ১৩২ টাকায় এক বিঘা জমি কেনার তথ্য পেয়েছে দুদক। জানা গেছে, ফারমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক বাবুল চিশতী অনিয়ম-জালিয়াতির মাধ্যমে অর্ধশত প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১৮শ’ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন। ওই ঋণের বড় অঙ্কই পরবর্তীতে বাবুল চিশতীর ব্যাংক এ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে। এভাবে নিজে হস্তক্ষেপ করে অনিয়মের ঋণের মাধ্যমে প্রায় ১৮শ’ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর জালিয়াতির ঋণগুলো খেলাপী হয়ে পড়েছে। ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখার গ্রাহক মেসার্স এ্যামারেল্ড ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারহানা আল আজাদকে ১২ কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়। ব্যাংকটির তৎকালীন অডিট কমিটির চেয়ারম্যান বাবুল চিশতী সরাসরি সুপারিশ করে ওই ঋণ অনুমোদনের ব্যবস্থা করেন। যদিও ওই ম্যামোতে ‘ঋণের বিপরীতে অপর্যাপ্ত জামানত রয়েছে’ বলে উল্লেখ করেছিলেন ব্যাংকটির তৎকালীন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীম। তারপরও নিয়ম-কানুন ভেঙ্গে ওই ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে সুদসহ মন্দঋণ হিসেবে চিহ্নিত ওই খেলাপী ঋণের অঙ্ক প্রায় ১৯ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ঋণ নিলেও গ্রাহক কোন অর্থ পরিশোধ করেননি। শুধু এ্যামারেল্ড ফুডস লিমিটেড নয়। প্রায় অর্ধশত কোম্পানিকে নিয়ম ভেঙ্গে ঋণ পাইয়ে দিয়েছেন বাবুল চিশতী। তালিকায় এ্যাটলাস গ্রিনপ্যাক লিমিটেড, শীতল এন্টারপ্রাইজ, জেসিকা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, রোজবার্গ অটোব্রিক মিলস, শাবিজ ইন্টারন্যাশনাল, হিরা ইলেকট্রনিক্স, চিটাগাং ফ্যাশন টেকনোলজি লিমিটেড, রংপুর জুট মিলস, এ্যাপোলো ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও ইসমাইল রাইস মিলসহ ৫০টি কোম্পানির নাম রয়েছে। এসব কোম্পানিকে ঋণ দিতে প্রভাব খাটিয়েছেন বাবুল চিশতী। ঋণ জালিয়াতির কারণে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় এক হাজার ৮১৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ খেলাপী হয়ে পড়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামভিত্তিক সাইফ পাওয়ারটেক, খুলনার ইউনাইটেড ব্রিকস ও ফুলতলা ফিলিং স্টেশন, রুট টু মার্কেট ইন্টান্যাশনাল, আরবার ডিজাইন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড এবং চিটাগাং ফিশারিজ নামের প্রতিষ্ঠানকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছেন বাবুল চিশতী। দুদকের তদন্তে পর্যাপ্ত জামানত ছাড়াই ঋণ প্রদান, ঋণের অর্থ ভিন্ন খাতে ব্যয়ের সুযোগ করে দেয়া ও ঋণ প্রদানে বিদ্যমান নিয়ম ভঙ্গের তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ প্রতিবেদনে ওই ঋণগুলোর অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। অন্যদিকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে আত্মসাত করার কারণে ওই ঋণগুলোও খেলাপী হয়ে পড়েছে। এমন অভিযোগের জের ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে বাবুল চিশতীকে পদ ছেড়ে দিতে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ফারমার্স ব্যাংকে যেভাবে অনিয়ম ঘটেছে এর সঠিক তদন্ত আর দুর্নীতিবাজদের বিচার না হলে এমন অনিয়ম অন্য ব্যাংকেও ছড়িয়ে পড়বে। তিনি বলেন, এই ব্যাংকটিকে লুট করা হয়েছে, পরিষ্কার কথা। নিচের লেভেলের কর্মচারীরা লুট করতে পারেননা, এটি উচ্চ লেভেল থেকেই হয়েছে। জানতে চাইলে বেসরকারী ব্যাংকগুলোর নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জনকণ্ঠকে বলেন, যে কাগজগুলো দেখার কথা। সেগুলো ঠিকভাবে দেখেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পর্ষদই বা কি করে এসব ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। এর মানে ব্যাংকের উপরের দিক থেকে সবাই সুবিধা নিয়েছেন। চার টাকায় এক শতক ও ১৩২ টাকায় এক বিঘা জমি শায়েস্তা খানের আমলেও ১৩২ টাকায় এক বিঘা জমি কেনা সম্ভব ছিল না। কিন্তু এই দরে জমি কিনেছেন ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মূল নায়ক বাবুল চিশতী। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে ত্রিশ হাজার শতক জমি মাত্র চার টাকা দরে কিনেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে জালিয়াতির এমন তথ্য উঠে এসেছে। এভাবে মূলত সম্পদের তথ্য গোপনের চেষ্টা করেছেন বাবুল চিশতী। তথ্যমতে, দুদকে দেয়া সম্পদের বিবরণীতে প্রায় ৬৫ বিঘা জমির ক্রয় মূল্য ৩৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা দেখিয়েছেন বাবুল চিশতী। নিজ উপজেলা বকশীগঞ্জের গোলগাঁও মৌজায় এক শতক জমির ক্রয় মূল্য চার টাকা দেখিয়েছেন তিনি। একইভাবে পলাশতলা মৌজায় ১৫ শতক জমি মাত্র ২২৯ টাকায় কিনেছেন বলে তথ্য দিয়েছেন। এ হিসেবে প্রতি শতক জমির দাম পড়ে ১৫ টাকা। এছাড়া কামালপুর মৌজায় সাত হাজার ৩২ টাকায় বাবুল চিশতী কিনেছেন ৫৮ শতক জমি। এখানে প্রতি শতক জমির দাম পড়েছে ১২১ টাকা। বাবুল চিশতী ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে প্রায় ৩২৬ বিঘা জমির সন্ধান পেয়েছে দুদক। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু জালিয়াতি করে জমির দাম কমিয়ে দেখানো হয়েছে। পরিবার-স্বজনদের নামে ২১৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি দুদক সূত্র জানিয়েছে, অবৈধভাবে বাবুল চিশতী প্রায় ২৮ কোটি ৫৫ লাখ, তার স্ত্রী রোজি চিশতী প্রায় ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, শ্যালক মোস্তফা কামাল প্রায় ৮৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, ছেলে রাশেদুল হক চিশতী প্রায় ৩২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, ছেলের স্ত্রী ফারহানা আহমেদ প্রায় ১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ও কলেজপড়ুয়া মেয়ে রিমি চিশতী প্রায় ২১ কোটি ২০ লাখ টাকার সম্পদ গড়েছেন বলে তথ্য মিলেছে। কিন্তু বাবুল চিশতী, তার স্ত্রী রোজি চিশতী ও শ্যালক মোস্তফা কামালসহ তার পরিবারের সদস্যরা ওই সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এদিকে ২০১৩ সালের ১৮ নবেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি সময়ে বাবুল চিশতীর ব্যাংক এ্যাকাউন্টে প্রায় ১৪৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। জালিয়াতির অর্থে জামালপুরে ৩৮টি জমি কিনেছেন বাবুল চিশতী। ফারমার্স ব্যাংকসহ চারটি কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন। নিজ ও প্রতিষ্ঠানের নামে অন্তত ২৮টি ব্যাংক হিসাব খুলেছেন। অন্যদিকে অবৈধ আয়ের অর্থে ময়মনসিংহ সদর, রাজধানীর গুলশান ও মহাখালীর ডিওএইচএসের মতো অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। জামালপুরের বিভিন্ন স্থানে জমি কিনেছেন। তার নামেও অন্তত চারটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনা হয়েছে। বাবুল চিশতী ও তার স্বজনদের নামে বেনামে প্রায় ২১৫ কোটি টাকার সম্পদের হদিস মিলেছে। দুদকে প্রায় এক ডজন মামলা অনিয়ম, জাল-জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাবুল চিশতী এবং তার পরিবার-স্বজনদের বিরুদ্ধে প্রায় এক ডজন মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরমধ্যে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে ১৫৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ২০১৮ সালে গুলশান থানায় দায়ের করা দুদকের মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। ওই মামলায় বাবুল চিশতী, ছেলে রাশেদুল হক চিশতী ও স্ত্রী রোজি চিশতীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলাগুলোতে অন্যদের মধ্যে বাবুল চিশতীর মেয়ে রেশি চিশতী, ভাই মাজেদুল হক চিশতী, ভাগ্নে মোস্তফা কামাল, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোস্তাক আহমেদ, চট্টগ্রামভিত্তিক এসএ গ্রুপের কর্ণধার শাহাবুদ্দিন আলম ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন আলমসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে ১৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাঁচ মামলায় ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) কেলেঙ্কারির নায়ক মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গত রবিবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েস দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। তথ্যমতে, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মোহাম্মদ ফয়সাল বাদী হয়ে বাবুল চিশতী ও তার পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা দায়ের করেন। ওই পাঁচটি মামলায় আসামি বাবুল চিশতী। মামলাগুলোতে বাবুল চিশতীর সঙ্গে তার স্ত্রী মোছাঃ রোজি চিশতী, ছেলে রাশেদুল হক চিশতী, ছেলের স্ত্রী ফারহানা আহমেদ ও তার মেয়ে রিমি চিশতীকে আসামি করা হয়েছে। ৪ ব্যবসায়ীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা ফারমার্স ব্যাংকের (পদ্মা ব্যাংক) অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীর সহায়তায় ঋণ নিয়ে ৮৫ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন চার ব্যবসায়ী। তাদের নেয়া ওই ঋণকে কু-ঋণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ব্যাংকটি। ব্যাংক মনে করছে এসব ব্যবসায়ী দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দ্বারস্থ হয়েছে ব্যাংকটি। ব্যাংকের কাছ থেকে সুনিশ্চিত তথ্য পেয়ে ওই চার ব্যবসায়ীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংস্থাটি। ফারমার্স ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনায় গঠিত দুদকের অনুসন্ধান দলের প্রধান সামছুল আলম গত মঙ্গলবার পুলিশের বিশেষ শাখায় (ইমিগ্রেশন) চিঠি দিয়ে চার জনের বিদেশযাত্রা রহিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছেন। যাদের বিশেযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তারা হলেন মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ শামীম কবীর (হিলিম), মেসার্স ক্রিয়েটিভ ফিশিং ট্রলারের মালিক এ কে এম আবদুল মোতালেব, মেসার্স স্পার্কের মালিক সৈয়দ আসিফ হাসান ও মেসার্স ওপাল ট্রেডিং হাউসের মালিক মোঃ মনজুরুল আলম। ইমিগ্রেশনে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দেশে মানিলন্ডারিংসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। পদ্মা ব্যাংক সূত্র জানায়, ব্যাংকটির রিমেডিয়াল এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সাবিরুল ইসলাম চৌধুরী দুদকের কাছে আলাদা চারটি চিঠি পাঠিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাংকের পাওনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। একইসঙ্গে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান। মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ শামীম কবীরের (হিলিম) অভিযোগ, তিনি ব্যাংকটি থেকে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেন। যে উদ্দেশে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন সে কাজে ব্যবহার না করে সেখানে বিনিয়োগও করেননি। এ ছাড়া তার ঋণটির পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত নেই। কু-ঋণ হিসেবে চিহ্নিত এই ঋণের বর্তমান স্থিতি ১৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ক্রিয়েটিভ ফিশিং ট্রলারের মালিক এ কে এম আবদুল মোতালেব ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেন, যার সহায়ক জামানত পর্যাপ্ত ছিল না। ওই ঋণের বর্তমান স্থিতি ৩০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। স্পার্কের মালিক সৈয়দ আসিফ হাসানের কাছে ব্যাংকের বর্তমান পাওনা ১২ কোটি ৫ লাখ টাকা। আর ওপাল ট্রেডিং হাউসের মালিক মোঃ মনজুরুল আলমের কাছে পাওনা ২৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ব্যাংকের সবগুলো চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীর সহায়তায় এসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কোন ঋণের ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত নেয়া হয়নি। তারা যে উদ্দেশে ঋণ নিয়েছিলেন সে কাজেও ব্যবহার করেননি। ব্যাংকের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ রাখছেন না। ব্যাংক মনে করছে, এই অর্থ তারা দেশের বাইরে পাচার করেছেন। দুদকও মনে করছে এসব অর্থ পাচার হয়েছে। তাদের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। যুদ্ধাপরাধী হয়েও পরিচয় দিতেন মুক্তিযোদ্ধা অনিয়ম-জালিয়াতির সঙ্গে সঙ্গে ভোল পাল্টাতেও পটু বিতর্কিত বাবুল চিশতী। ’৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন দাবি করে নিজেকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয় দেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭২ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হওয়া অভিযুক্তদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি মামলায় (যার নং-০-২৭/৭২) প্রায় অর্ধশত যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে ৩৬ নম্বরে থাকা মাহবুবুল হক ওরফে বাবুলের পিতার নাম এম এইচ চিশতী, গ্রামের নাম ভট্টরাজা ও থানা শ্রীবরদী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে ২০০৯ সালের ৫ জুলাই বাবুল চিশতীসহ ১৩ জন আলবদর-রাজাকারের নাম উল্লেখ করে জামালপুরের ঝিনাইগাতির শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমানের ভাই হামিদুল ইসলাম যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছিলেন। ওই মামলায় ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাবুল চিশতী ও তার সহযোগীরা আলবদর-রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন উল্লেখ করে সুনির্দিষ্টভাবে অপহরণ-হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঝিনাইগাতি আমলি আদালতের বিচারিক মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের আদেশ দেন। চাপের মুখে পড়ে পরবর্তীতে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন বাদী হামিদুল ইসলাম। ২০০৯ সালে ওই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন বাবুল চিশতী।
×