ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অপার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা মধু উৎপাদনে

প্রকাশিত: ১০:০৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 অপার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা মধু উৎপাদনে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বাজারে মধু ও সংশ্লিষ্ট উপকরণের চাহিদাও বাড়ছে। সেই সঙ্গে দেশে বিভিন্ন ফসলে কৃত্রিম মৌচাষের পরিমাণ বাড়ছে। এই কৃত্রিম মৌচাষের পরিমাণ আরও বাড়ানো সম্ভব। ভারত ও জাপানে সীমিত পরিসরে মধু রফতানিও হচ্ছে। কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের ফলে এই খাতের রয়েছে অপার সম্ভাবনাও। মধুতে এমন সম্ভাবনা নিয়ে রাজধানীতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় মৌমেলা ২০২০। ‘পুষ্টি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য মৌচাষ’ প্রতিপাদ্যে সোমবার ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) চত্বরে জাতীয় মৌমেলা উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক। এ সময় কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন দফতর ও সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। মেলার উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন মন্ত্রীসহ অতিথিরা। পরে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে মৌচাষ ও মধুর গুরুত্ব তুলে ধরেন বক্তারা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক কৃষিবিদ ড. সৈয়দ নূরুল আলম। দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে মধু ও মৌচাষ। দেশের মধু উৎপাদনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১৮ হাজার মৌচাষী জড়িত আর বিভিন্নভাবে মধু শিল্পে কর্মরত আছে দুই লাখ মানুষ। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশের বাজারে মধু ও সংশ্লিষ্ট উপকরণের চাহিদা বেড়েছে। দেশের চাহিদার ৩০ ভাগ দেশীয় উৎপাদন হতে মেটানো হলেও ৭০ ভাগই আমদানি করতে হয়। তাই ভাল মানের দেশীয় উৎপাদিত মধু দিয়ে আমদানিকৃত মধুর জায়গা দখল করা দরকার। এছাড়াও বিদেশে বিশাল বাজারের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়। ইউরোপের বাজারসহ জাপান, ভারত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে মধু ও সংশ্লিষ্ট উপকরণ রফতানির সুযোগ রয়েছে বলেও জানানো হয়। মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে দেশে প্রতি বছর ১ থেকে দেড় মিলিয়ন টন গুণগত মানসম্পন্ন মধু উৎপাদন সম্ভব যা বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে ১০০ থেকে ১৫০ গুণ বেশি। এ সময় মৌচাষের বিভিন্ন বাধা এবং সেগুলো সমাধানের উপায় নিয়েও আলোচনা করা হয়। এছাড়াও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক মৌচাষে ভবিষ্যত করণীয় নিয়েও আলোকপাত করা হয় প্রবন্ধে। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষির আধুনিকায়ন ও বাণিজ্যিকীকরণে মধু একটি নতুন সংযোজন। যা আমাদের রফতানি বহুমুখীকরণে সহায়ক হবে। আগে মধু সীমিত আকারে উৎপাদন হলেও এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মধু উৎপাদন শুরু হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিক্ষেত্রে আমাদের অসাধারণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দানাদার খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আলুতে আমরা উদ্বৃত্ত রয়েছি। এ রকম আমরা অনেক ফসলে সারপ্লাস রয়েছি। কৃষি পণ্যগুলো প্রক্রিয়াজাত ও মূল্য সংযোজন করে এমন পণ্য করতে হবে, যেগুলোর বাজার মূল্য অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে মধুরও বিদেশে রফতানি করার সম্ভাবনা আছে। যদি আমরা গ্যারান্টি দিতে পারি, আমাদের মধুর মধ্যে দোষণীয় কিছু নেই, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং আধুনিক উপায়ে এটা উৎপাদন করা হয়েছে, তাহলে বিদেশে রফতানি করা যাবে। ড. রাজ্জাক বলেন, জাপানে আমাদের মধু রফতানি হচ্ছে। এ বছর ৪শ’ মেট্রিক টনের অর্ডার পাওয়া গেছে। এটা আমাদের জন্য খুশির খবর। আমাদের যারা মধু উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত, তারা অনেক নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন মধু উৎপাদন করছেন। এছাড়াও বিদেশী অনেক প্রযুক্তির মাধ্যমে মধু উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ করছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করতে মধু একটি অনন্য খাদ্য। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে মৌমাছি পালন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। মৌচাষ সম্প্রসারণ পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পরাগায়ণের মাধ্যমে ফল ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই ফসলের মাঠে মৌচাষ কৃষকের জন্য বাড়তি আয়ের সংস্থান করে থাকে। মৌসম্পদের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রসেসিং ও বাজারজাত অপরিহার্য । মূল্যবান মৌসম্পদ এবং মধু উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। কৃষির সম্ভাবনা অনেক বেশি। কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ও রফতানি বহুমুখীকরণের মাধ্যমে মুজিববর্ষ হবে সমৃদ্ধির বছর। বিশেষ অতিথি হিসেবে কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান বলেন, মৌমাছি মধু ও এর গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে বলেই আমরা গত তিন বছর ধরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই মেলাটি করা শুরু করেছি। সচিব বলেন, সারা বছরই কিছু না কিছু ফুল থাকে তবে যখন বেশি থাকে তখন মধু আহরণ করা হয়। একদিন আগেই পার্বত্য এলাকা ঘুরে আসার অভিজ্ঞতায় বলেন, আমার মনে হয় পার্বত্য এলাকায় মানুষদের প্রশিক্ষণ দিতে পারতাম, পাহাড়ে মৌ বাক্স বসাতে পারতাম তাহলে সারাবছরই মধুর সরবরাহ ভাল থাকত।
×