ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

খামারিদের বিকাশে নীতিমালা দাবি

এক দশকে দুধ উৎপাদন সাড়ে চার গুণ ও মাংস সাতগুণ বেড়েছে

প্রকাশিত: ১১:০২, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

এক দশকে দুধ উৎপাদন সাড়ে চার গুণ ও মাংস সাতগুণ বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে তরল দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত চাহিদা থাকা সত্ত্বেও যথাযথ নীতিমালা ও সংশ্লিষ্ট পরিসেবার অভাবে দুগ্ধ শিল্পের প্রসার ক্রমাগত ব্যাহত হচ্ছে। এ জন্য দুগ্ধ শিল্প বিকাশে সরকারী-বেসরকারী খাত থেকে ঋণ সুবিধাসহ সম্প্রসারণ সেবা ও ন্যায্যমূল্যে বাজারে দুধ বিক্রি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন দুগ্ধ খামারিরা। বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে অক্সফাম ও বাংলাদেশ ডেইরি ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিডিডিএফ) আয়োজিত ‘প্রান্তিক দুগ্ধ খামারিদের বিকাশে সরকারী-বেসরকারী নীতিমালা ও সেবা : সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সভায় তারা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রান্তিক নারী খামারিরাও তাদের সমস্যা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় খাত ডেইরি শিল্প। বর্তমানে এ খাত বাণিজ্যিকভাবে সফল শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। দেশে বর্তমানে এক লাখেরও বেশি নিবন্ধিত খামারি রয়েছেন, যার প্রায় অর্ধেকই উচ্চশিক্ষিত যুবকদের উদ্যোগে পরিচালিত। গত এক দশকে দেশে উৎপাদিত দুধের পরিমাণ প্রায় সাড়ে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে গবাদি পশুর মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় সাতগুণ। দেশে দুধের মোট চাহিদার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই এখন দেশীয় উদ্যোক্তারা সরবরাহ করছেন। এমন একটি সম্ভাবনাময় শিল্প খাত কেবল অসম অন্ধ নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কয়েক লাখ মানুষের ওপর। আমদানিকৃত গুঁড়া দুধ নিয়ে উদ্যোক্তারা বলেন, দেশে আমদানিকৃত গুঁড়া দুধের সঙ্গে উৎপাদিত দুধের অসম প্রতিযোগিতা বন্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাল্ক আকারে আমদানি করা গুঁড়া দুধের ওপর শুল্ক বৃদ্ধিতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, প্রান্তিক দুগ্ধ খামারিদের বিকাশে ও স্বার্থরক্ষায় সরকার সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং তা বাস্তবায়ন করছে। দেশের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি খাতের উন্নয়নে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। যেসব ফার্ম দেশে গড়ে উঠবে, তাদের সাহায্য করার জন্য এই প্রকল্প। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ খাত এগিয়ে নিতে প্রান্তিক খামারিদের সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি খামার ব্যবস্থাপনার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আগের তুলনায় এ খাত অনেক দূর এগিয়েছে। সামনে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নেতিবাচক প্রচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, ক্ষুদ্র খামারি ও নারী উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকার পুনর্অর্থায়ন তহবিলের মাধ্যমে বন্ধকবিহীন ৪% সরল সুদে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এই স্কিমকে আরও বৃহৎ ও কার্যকর করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, গত দশ বছরে দুধের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। এখন জনপ্রতি প্রাপ্যতা ১৬৫ মিলি। ২০০৯-১০ অর্থবছরে দুধ উৎপাদন ২৩.৭০ লাখ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে ৯৯.২৩ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে, যা ৪.১৯ গুণ বেশি। প্রতিমন্ত্রী দুধ প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলোকে কম মুনাফার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রান্তিক খামারিদের আপনারা দুধের ন্যায্য মূল্য দিন, কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখুন। আপনারা আরেকটু লিবারেল হলে এবং মুনাফা কম করলে ডেইরি সেক্টর টিকে থাকবে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত দুধ যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য সারাদেশে প্রান্তিক জনপদে ৩৫টি চিলিং প্লান্ট (দুধ শীতলিকরণ) স্থাপন করা হবে। তাছাড়া, দেশের ডেইরি শিল্পের বিকাশে আমরা গত বছর গুঁড়ো দুধের উপর ৫% আমদানি শুল্ক বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। বিদেশ থেকে ধীরে ধীরে গুঁড়ো দুধ আনা বন্ধ করে দেব। আমাদের দেশের দুধ দিয়েই আমাদের চাহিদা পূরণ হবে। এজন্য দরকার বেশি বেশি মানসম্মত দুধ উৎপাদন ও সঠিক বিপণন।
×