খুদে শিল্পীদের রং তুলিতে সাজছে নীলফামারী শহর

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ জাতির জনক বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী (মুজিববর্ষ) ঘিরে খুদে চিত্র শিল্পীরা তাদের নিজ জেলা শহরকে নতুনরূপে সাজাতে নেমে পড়েছে। রংতুলির আঁচড়ে সাজিয়ে চলেছে শহরের বিভিন্ন দেয়াল। তাদের আঁকা চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তুলেছে বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ ফুল, ফল ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য। শুক্রবার (সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত দেখা যায় নীলফামারী জেলা শহরের প্রধান সড়ক, পিটিআই সড়ক কলেজ স্টেশন সড়ক, গাছবাড়ি সড়কের বিভিন্ন দেয়ালে তারা ছবি অংকন করেছে। নিজের শহর সাজাতে ছোটদের এই দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম প্রভাব ফেলেছে বড়দের মনে। শিশুদের হাতের ছোঁয়ায় সাজানো শহর দেখে আনন্দিত অনেকে। দেয়ালে দেয়ালে আঁকা বিভিন্ন ছবি মন কেড়েছে শহরের মানুষসহ পথচারীদের। ছবিতে ছবিতে সুন্দর এ শহর সাজানোর কাজটি যে স¤পন্ন হচ্ছে খুদে শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় সেটি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য। তবে সুন্দর এ শহর সাজানোর চেতনা ছড়িয়ে পড়েছে সবার মাঝে। পথচারীরা থমকে গিয়ে শিশুদের এই কার্যক্রম দেখে আনন্দ উপভোগ করেন। ভিশন-২০২১ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে মুজিববর্ষ ঘিরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বিখ্যাত মানুষদের প্রতিকৃতি, জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা হচ্ছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছুটির দিনে রংতুলির আঁচড়ে তারা রঙিন করে তুলেছে নীলফামারী শহরের বেশিরভাগ দেয়াল। ৮৮ জন খুদে চিত্রশিল্পী বিভিন্ন দেয়ালে আঁকছে ছবি। শিশুদের দৃষ্টিনন্দন এমন চিত্রাঙ্কন দেখে নীলফামারী শহরের প্রবীণ ব্যক্তি ওয়ারেশ সরকার বলেন, পথ দিয়ে হাঁটলে দেয়ালে দেখা যায় ছবি আর ছবি। তাতে শোভা পেয়েছে বঙ্গবন্ধু, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বিখ্যাত অনেক ব্যক্তি, জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ প্রাকৃতিক বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি। এসব ছবিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৃদ্ধি পাবে, দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। পোস্টার আর দেয়াল লিখনের পরিবর্তে সুন্দর ছবি দেখে মানুষের মন প্রফুল্ল থাকবে, চেতনার পরিবর্তন ঘটবে। তার মনে সারা দেশের জেলা ও উপজেলা শহরকে এ ভাবে সাজিয়ে তোলা যেতে পারে। দেয়ালে দেয়ালে ছবি আঁকতে পেরে আনন্দিত খুদে শিল্পীরা। তাদের মধ্যে অদিতি রায় ঊর্মি, উর্শিতা, আশিকুর রহমান, নির্জনা বৈরাগী, মেধা, ইভা, অথৈ আপনসহ অনেকে বলেন আমাদের কোন ক্লান্তি নেই, নিজের শহর সাজাতে পেরে আনন্দ পাচ্ছি, এমন সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি আমরা কখনও ভাবতে পারিনি। ওই খুদে শিল্পীরা জানায়, আগে ছবি এঁকেছি কাগজে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রতিযোগিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের চিত্রাঙ্কন। রংতুলির আঁচড়ে নিজের শহরকে রঙিন করে তুলতে পারবে এটা তারা ভাবতেই পারেনি কখনো। কাজটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভিশন-২০২১ এর এক ঝাঁক তরুণ সংগঠক। ওই সংগঠকদের মধ্যে আল-মামুন করিম সুমেল, সহিদুল ইসলাম সেতু, তপন রায় বর্ষণ, সাগর শাহরিয়ার বলেন শিশুদের সঙ্গে কাজ করে আমরা আনন্দ পাচ্ছি। তাদের কাছে রং ও ছবি আঁকার কাজ শিখতে পারছি। এমন একটি কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমরা নিজেকে ধন্য মনে করছি। সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী ওয়াদুদ রহমান জানান, ওই উদ্যোগের প্রধান পৃষ্ঠপোষক নীলফামারীর কৃতী সন্তান নীলফামারী সদর আসনের সংসদ সদস্য সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ওয়াদুদ বলেন মুজিববর্ষ ঘিরে লেখাপড়ার পাশাপাশি শুক্রবারসহ অন্যান্য ছুটির দিন সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ছবি আঁকার কাজটি করবে শিশুরা।