ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

পানিপথে মালয়েশিয়া ॥ একই পরিবারের চার জনসহ নিখোঁজ ৭

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

পানিপথে মালয়েশিয়া ॥ একই পরিবারের চার জনসহ নিখোঁজ ৭

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরের চৌগাছায় দালালের খপ্পরে পড়ে দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছে একই পরিবারের চারজনসহ সাত ব্যক্তি। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে তারা আর ফেরেননি পরিবারে। ঘটনার প্রায় সাত বছর পর রবিবার রাতে এক দালালকে চৌগাছা শহর থেকে ধরে পুলিশে দিয়েছে। পরে এ ঘটনায় রবিবার রাতেই নিখোঁজ অমিত হাসান মুকুলের পিতা আতিয়ার রহমান চৌগাছা থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। পুলিশ এ মামলায় পরিবারের লোকদের হাতে আটক দালাল ফজলুর রহমান রাজুকে (৪৮) গ্রেফতার করে। চৌগাছা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ভুক্তভোগী পরিবারের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের মুক্তদাহ গ্রামের একই পরিবারের আতিয়ার রহমানের ছেলে অমিত হাসান মুকুল (৩০), হায়দার আলীর ছেলে আজিজুর রহমান (৪০), মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে ফুলজার হোসেন (৪৬), মৃত ছবেদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম খোকন (৪০)। একই গ্রামের মৃত আত্তাপ হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৭), রোস্তমপুর গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে রমজান আলী (৪৫) ও ফুলসারা ইউনিয়নের দুর্গাবরকাটি গ্রামের উমসান আলীর ছেলে লিটন হোসেন (২৭) ২০১৩ সালের ১ জুন মালয়েশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনাক্ষম ব্যক্তিরা না ফেরায় নিখোঁজদের সাত পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা। উৎসব-পার্বন এলেই কান্নার রোল পড়ে যায় বাড়িগুলোতে। দীর্ঘদিন বাড়ির অভিভাবকরা নিখোঁজ থাকায় চরম দারিদ্র্য গ্রাস করেছে পরিবারগুলোকে। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এক পর্যায়ে নিখোঁজ ফুলজার হোসেনে স্ত্রী রূপভান ২ মেয়ে এবং শরিফুলের স্ত্রী রেশমা বেগম ৩ মেয়ের ভরণপোষণের জন্য স্থানীয় ডিভাইন গার্মেন্টসে কাজ নিতে বাধ্য হয়েছে। অল্প টাকায় (সে সময়ে জনপ্রতি ৩ লাখ টাকায়) মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রলোভনে দরিদ্র পরিবারের এসব ব্যক্তিরা আদম ব্যাপারীর খপ্পরে পড়েন। মুক্তদাহ গ্রামে বিবাহ সূত্রে বসবাসকারী সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের গোয়ালপোতা গ্রামের ইসমাঈল হোসেনের ছেলে ফজলুর রহমান রাজু তাদের ফুসলিয়ে পানিপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাঠানোর পর থেকে আজও তারা নিখোঁজ রয়েছেন। ২০১৩ সালের ১ জুন বাড়ি থেকে একযোগে বের হন তারা। ১২ জুন অমিত হাসান মুকুল বাড়িতে ফোন করে বলেন, আমরা সবাই পানিপথে মালয়েশিয়া যাচ্ছি। ট্রলারে উঠেছি, এখনই রওনা দেব। ওই কথাই ছিল তাদের পরিবারের সঙ্গে তাদের শেষ কথা। মুকুলের স্ত্রী চামেলী খাতুন বলেন, যে নাম্বার থেকে ফোন দিয়েছিল সেই নাম্বার বন্ধ পেয়েছি। বারবার চেষ্টা করেও ফোনে কাউকে পাওয়া যায়নি। এরপর ছয়টি বছর কেটে গেলেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। অতিকষ্টে দিন কাটছে আমাদের। নিখোঁজ শরিফুল ইসলাম খোকনের স্ত্রী রেশমা বেগম তার ৩ মেয়ে এবং ফুলজার রহমানের স্ত্রী রূপভান বেগম ২ মেয়ের লালন পালনের জন্য স্থানীয় ডিভাইন গার্মেন্টসে কাজ নিতে বাধ্য হয়েছেন। তারা দুজন এবং আজিজুর রহমানের মা মনোয়ারা বেগম (৬০) হতাশ কণ্ঠে বলেন, অনেক চেষ্টা করেও তাদের খোঁজ পায়নি। এদের মধ্যে নিখোঁজ আজিজুর রহমানের স্ত্রী দুটি সন্তান ফেলে অন্যত্র চলে গেছেন।
×