ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে মোট অপরাধের আশি ভাগের সঙ্গে মাদকের সংশ্লিষ্টতা

প্রকাশিত: ১১:১৮, ১০ জানুয়ারি ২০২০

দেশে মোট অপরাধের আশি ভাগের সঙ্গে মাদকের সংশ্লিষ্টতা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ধর্ষণ, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা, খুন, হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালানো, ছিনতাইসহ এ ধরনের অধিকাংশ অপরাধের সঙ্গেই কোন না কোনভাবে মাদকের সংশ্লিষ্টতা থাকে। দেশে সংঘটিত মোট অপরাধের মধ্যে শতকরা আশি ভাগের সঙ্গেই মাদকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এমন ঘোষণার পর মাদক অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। তবে পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী মাদকাসক্ত যুবক ভাসমান ছিনতাইকারী মজনু কর্তৃক ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মজনু মাদকাসক্ত অবস্থায় ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটায় বলে স্বীকার করে। এমন ঘটনার পর আবারও মাদক আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। বৃহস্পতিবার কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বিশ্ব এজতেমার নিরাপত্তার বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক জনকণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, মাদকাসক্ত ছিনতাইকারী মজনু কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর ধর্ষিত হওয়ার ঘটনার পর আবারও মাদকের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। এজন্য বৃহস্পতিবার রাত থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা মতে আগের মতোই যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিন রাত থেকেই কুর্মিটোলা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রেললাইনের দুই পাশের অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সকাল পর্যন্ত ৭৬টি অস্থায়ী মাদকের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, মাদক নির্মূলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। মাদক চোরাচালান আগের তুলনায় অনেক কমেছে। তবে এখনও পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গীর মতো মাদক নির্মূলের নিদের্শ দেন। পাশাপাশি মাদকের সঙ্গে সরকার দলীয় কেউ জড়িত থাকলে তাকে স্থায়ীভাবে দল থেকে বহিষ্কার করার নির্দেশনা দেন। এরপর থেকেই সারাদেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চলছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা ও অপারেনশস শাখার পরিচালক পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এএসএম মাসুম রাব্বানী বলছেন, কয়েক শ’ চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণ করার পর স্বাভাবিকভাবেই মাদকের আগ্রাসন কমে আসার আশা করা হয়েছিল। দেশে মাদকের আগ্রাসনের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হয়েছিল, ততটা পড়েনি। মাদকের আগ্রাসন বন্ধ হয়নি। তবে অনেকাংশে কমেছে। সারাদেশে তাদের সাঁড়াশি অভিযান চলমান আছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক) মাহবুব আলম বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হওয়া মাদক ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই পরবর্তীতে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। তারা আবার মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। ফলে গ্রেফতার হলেই যে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছে, এমনটা নয়। চাহিদা বেশি থাকায় মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ বলছেন, অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, তারা এক সময় ইয়াবা, হেরোইন বা মারাত্মক সব মাদকে আসক্ত ছিলেন। ইয়াবা সেবনে লিভার, কিডনি, হার্ট ও মস্তিষ্ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। দীর্ঘ সময় ইয়াবা সেবনের কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যায়। শরীর শুকিয়ে যায়। শরীরের সৃষ্ট ঘা থেকে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়।
×