ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বাজারে সুশাসনের অভাবে পেঁয়াজের দাম এতটা বেড়েছে ॥ কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:১৬, ৭ জানুয়ারি ২০২০

বাজারে সুশাসনের অভাবে পেঁয়াজের দাম এতটা বেড়েছে ॥ কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, দেশের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং শান্তি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমানে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এখন শুধু প্রয়োজন সুশাসন নিশ্চিত করা। দেশের কৃষি বাজারে তদারকি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাজারে সুশাসনের অভাব রয়েছে বলেই দেশে পেঁয়াজের দাম এতটা বেড়েছে। তিনি বলেন, কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে। এখান থেকে পেছনে ফিরে যাওয়ার কোন পথ নেই। এতে কৃষকরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হতে পারবেন। আমরা নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে চাই। এ জন্য কৃষির ওপর আমরা গুরুত্ব আরোপ করেছি। আমরা যদি সবাই আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করি তবে সব ক্ষেত্রেই আমরা উন্নতি ও সুশাসন নিশ্চিত করতে পারব। মন্ত্রী সোমবার গাজীপুরের জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি (নাটা) কর্তৃক আয়োজিত ‘কৃষক-উদ্যোগঃ বাণিজ্যিক কৃষির উদীয়মান চালক’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, কৃষিকে এগিয়ে নিতে আমরা কৃষি যান্ত্রিকীকরণের একটি নীতিমালা করেছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতায় একটি এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং উইং করতে চাচ্ছি। এটি ধীরগতিতে এগোচ্ছে, আমি যেভাবে চাচ্ছি সেভাবে হচ্ছে না। যান্ত্রিকীকরণের বিষয়টি আগামীকাল মন্ত্রণালয়ের সভায় উঠবে। এ ব্যাপারে সাবসিডিয়ারি দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করা হলে উৎপাদন খরচ কম হবে, চাষাবাদ করে কৃষকরা লাভবান হবে। মন্ত্রী পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, পেঁয়াজ পচনশীল দ্রব্য। গতবছর পেঁয়াজ জমি থেকে ঘরে তুলে আনার আগে অস্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অথচ আমাদের মার্কেটিং এবং এগ্রিকালচার এক্সটেনশন ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। বৃষ্টির কারণে দেশে পেঁয়াজের কি পরিমাণ উৎপাদন কম হয়েছে বা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার হিসেব ওই দু’ডিপার্টমেন্ট নিজেরা সমন্বয় করে নির্ণয় করা উচিত ছিল। অথচ তারা তা করেনি। নিজেদের মধ্যে সমম্বয়ের অভাবের কারণেই এটা হয়নি। যদি ওই হিসেব থাকত তাহলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা যেত। এদিকে ভারত থেকে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করার কথা ছিল, ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তা আমরা করতে পরিনি। দেশে পেঁয়াজের মৌসুমে বাল্ব লাগিয়ে প্রায় ২ লাখটন গুটি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে। বাকি ২৩/২৪ লাখ টন হয় মূল সিজনে, বীজ থেকে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে। পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা এ মৌসুমে পাতাসহ গুটি পেঁয়াজ বিক্রি করায় পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই পেঁয়াজের দাম কমছে না। আমরা পেঁয়াজ আমদানির জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশের দ্বারস্থ হচ্ছি। এতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা কোথায়? নাটা’র ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মোঃ আবু সাইদ মিঞার সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমেরিটাস প্রফেসর ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম এ সাত্তার ম-ল। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসির উজ্জামান, বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মান্নান আকন্দ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আব্দুল মুঈদ, নাটার উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইদুর রহমান, সিনিয়র সহকারী পরিচালক শারমিন আক্তার প্রমুখ। কানাডীয় প্রতিনিধি দলের সাক্ষাত এদিকে বাসস জানায়, কৃষি খাতে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ এবং টেকনিকাল খাতে সহায়তাসহ বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে কাজ করবে কানাডা। সোমবার কানাডার রাষ্ট্রদূত বেনোয়াট প্রেফন্ডের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক সঙ্গে সচিবালয় তার অফিস কক্ষে সাক্ষাত করতে এসে রাষ্ট্রদূত এ কথা জানান। প্রতিনিধি দল আরও জানায়, কানাডায় হিমায়িত ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদা রয়েছে। আর বাংলাদেশের এই দুটি খাতেই রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। কানাডা এদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা খাতে বিনিয়োগ করেছে এবং কৃষির উন্নয়নে সহায়তা করবে। কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কানাডা এবং বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ১৯৭২ সালেই স্থাপিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। কানাডা বাংলাদেশের ভাল বন্ধুপ্রতিম দেশ। দুই দেশেই গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বিরাজমান। রাষ্ট্রদূত বেনোয়াট প্রেফন্ডের বলেন, ঢাকা নিরাপত্তার দিক দিয়ে ভাল কোন সন্ত্রাসবাদ নেই, শুধু যানজট আছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন প্রশংসনীয়। দু’দেশের মাঝে ব্যবসায়িক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন ও বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও দৃঢ়করণের লক্ষ্যে কাজ করছে কানাডা। কানাডার বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা যে কোন দেশের ব্যবসায়ী সমাজের মতামতকে গুরুত্ব প্রদান করে থাকেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পিপিসি উইং ড. মোঃ আবদুর রৌফ উপস্থিত ছিলেন।
×